এই ব্লগটি সন্ধান করুন

পৃষ্ঠাসমূহ

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড সময়

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

বুধবার, ২২ জুন, ২০১১

প্রসঙ্গঃ রুমানা মঞ্জুর, পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম এবং প্রতিক্রিয়াশীল সমাজের নির্মম বলি

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা রুমানা মঞ্জুর তার নরপশু স্বামী হাসান সাইদের দ্বারা নৃশংসভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। জনমানুষের মনে এহেন নির্মম ও নৃশংস ঘটনা চরম ক্ষোভ এবং ক্রোধের সৃষ্টি করেছে । এই খবরটি প্রচার হওয়ার পর এদেশের নারী পুরুষ নির্বিশেষে এহেন নৃশংসতার প্রতি তাদের চরম ঘৃণা প্রকাশ করেছে । ফেসবুক - বাংলাদেশী সাইট ব্লগ এবং ফোরামে এই নিয়ে আগুনের ফুলকির মত মানুষ তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। জনাব জাকারিয়া স্বপন এই নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি কলাম লিখেছেন, এজন্য ওনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই । তবে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি ওনার সহানুভূতিতে এবং সমবেদনাকে একবাক্যে সমর্থন জানালেও ওনার  সকল কথার সঙ্গে একমত হতে পারছিনা, কেননা যৌক্তিক বিচারে অনেক প্রশ্ন রয়ে যায় যেগুলোর নিষ্পত্তিকরণ সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য খুবই জরুরী ।

অনেক পুরুষও এই ঘটনার প্রতি তাদের নিন্দাজ্ঞাপন করেছে তবে এই ঘটনার পেছনের মূলকারণ নিয়ে কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি । সকলেই গতানুগতিকভাবে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করে দায়মুক্ত হয়েছে । কিন্তু কেন এই ঘটনাগুলো দুদিন পর পর ঘটছে তা কেউ ভেবে দেখেনি বা জেনেও গোপন করে গেছে । এই কারণগুলো নিয়েই আমার লেখার অবতারণা কেননা উৎসমূল বিশ্লেষণ না করলে এই ঘটনাগুলো দুইদিন পর পর ঘটতেই থাকবে, দায়সারা গোছে এই নৃশংস ঘটনার শুধুমাত্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ঘৃণা প্রদর্শন করে কাজের কাজ কিছুই হবেনা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে কিছু সেনসিটিভ ব্যাপারগুলোর সংশোধন বা সংস্কার অবশ্যই করতে হবে । তবে মূল লেখা শুরু করার আগে তিনটি গল্প বলি -

ক) মিঃ জামান বিবাহিত, পেশায় একজন কম্পিউটার  প্রকৌশলী, তার স্ত্রী একজন চিকিৎসক। কম্পিউটার প্রকৌশলী হওয়ার কারণে তাকে তার ল্যাপটপের সামনেই সারাদিন বসে থাকতে হয়। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারী, স্ত্রী সারাদিন রোগী নিয়ে ব্যস্ত, এই সুযোগে অন্যান্য পুরুষদের মতই তিনি ফেসবুকে বিভিন্ন নারীকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে বা পাণ্ডিত্য দেখিয়ে ইমপ্রেস করেন, স্ত্রী হঠাৎ একদিন কম্পিউটার থেকে আবিষ্কার করেন, বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার প্রাপ্তবয়স্ক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা । কিন্তু স্ত্রী এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না, কেননা তার দুটি সন্তান রয়েছে, বাংলাদেশে একজন নারী ডিভোর্সি হলে তাকে নিয়ে সমাজে ছিঃছিঃ রটে যায় (যদিও অবস্থার উন্নতি হয়েছে), তাই মিসেস জামান এ নিয়ে নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নেন ।

খ) মিঃ শরীফ ব্যবসায়ের কাজে সারাদিন দোকানে পড়ে থাকেন, তার স্ত্রী একজন গৃহিণী । মিঃ শরীফের স্ত্রী সারাদিন ঘরে একাকী থাকেন, তাই একাকীত্ব কাটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন । এভাবে তার সঙ্গে পরিচিতি হয় বিভিন্ন পুরুষের, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় অন্তরঙ্গ সম্পর্কে রূপ নেয়, ইন্টারনেট ব্যবহার করে করে অভ্যস্ত গৃহিণী এখন চরম স্মার্ট, পুরুষদের মাথা পাগল করে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াতে এই গৃহিণীর জুড়ি নেই । মিঃ শরীফ মোবাইলে কল করলে কল ব্যস্ত পান, একদিন গৃহিণীর মোবাইলে লক্ষ্য করেন অপরিচিত নম্বর থেকে ১ ঘণ্টার একটি কল। সন্দেহ জাগে তার, একদিন গভীর রাতে দেখেন তার স্ত্রী বিছানায় নেই, স্বামীর ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে অন্য রুমে কম্পিউটারের সামনে বসে বিবস্ত্র অবস্থায় ওয়েবক্যাম চ্যাটে মশগুল । চুলের মুঠি ধরে নরপশুর মত চড় থাপ্পর মারতে মারতে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি । মিসেস শরীফ বাড়ি ফিরে আসেন।

গ)  শহীদ এবং রুবানা, একজন বুয়েটে পড়েন, আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তাদের মধ্যে প্রেমভালবাসা হয়, তারা একসঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেন, বিয়ে করেন । বিয়ের পরে শহীদ ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করেন, রুবানা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। ব্যবসায়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে শহীদ মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারিয়ে ফেলেন, ব্যবসায়ে ক্ষতির রাগ ঝাড়েন স্ত্রী পুত্র কন্যার উপর, স্ত্রী প্রচণ্ডভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তিনি শহীদের একের পর এক পতন দেখে ধীরে ধীরে তার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, নারীর মন ব্যর্থ পুরুষকে চায়না। ব্যবসায় সর্বস্বান্ত শহীদ ঘরজামাই হয়ে থাকেন, উপার্জন না থাকার কারণে বড়লোক শ্বশুরের আজ্ঞাবহ হয়ে তাকে চলতে হয়, এগুলো তার ভেতরে ক্ষোভের জন্ম দেয়, দুজনেই ফেসবুক ব্যবহার করেন । স্ত্রীর সঙ্গে এক বিদেশীর পরিচয় ঘটে, শহীদের কোন উন্নতি না দেখে রুবানা তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন এবং ধীরে ধীরে আকর্ষিত হন বিদেশী ভদ্রলোকের প্রতি, প্রথমে সম্পর্ক চলছিলো গোপনে গোপনে কিন্তু একসঙ্গে থাকলে আর কতদিন সত্য লুকিয়ে রাখা যায় ? তাই একদিন শহীদের কাছে ঘটনাটি ধরা পড়ে, শহীদ ভেতরে ভেতরে ঐ বিদেশীর প্রতি চরমভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন নিজের ব্যর্থতার কারণে, স্ত্রীর উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, কিন্তু মুখ বুজে থাকেন কেননা, উপার্জনহীন বলে স্ত্রীকে শাসাতে পারেন না (শাসানো উচিত নয়), স্ত্রীও শহীদের দুর্বল ঘরজামাই অবস্থার সুযোগ নেন, ভেতরে ভেতরে চরম প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠতে থাকে শহীদের মনে, স্বামীত্বের অধিকার ফলানোর জন্য প্রয়াসী হন, তার স্ত্রীকে অন্য একজন ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তা করে শহীদ অবশেষে প্রতিহিংসার চরমঅনলে ভয়ঙ্কর আক্রমণ করে বসেন তার স্ত্রীকে, স্ত্রীর একটি চোখ আঙ্গুল দিয়ে নষ্ট করে দেন, আরেকটি প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে, নাক কামড়ে দেন । এককালের শহীদরুবানার প্রেমের এখানেই অপমৃত্যু ।
পাঠকপাঠিকাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই ৩টি আলাদা আলাদা ঘটনাগুলোর জন্য কে দায়ী, স্বামী নাকি স্ত্রী নাকি দুজনেই এবং কেন ? ন্যায় এবং যুক্তির বিচারে উত্তরগুলো কি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন । একেবারে শেষে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত উত্তর দেওয়া হবে ।

বর্তমানে প্রথম আলোতে বেশ কিছু হলুদ সাংবাদিকতাপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও একসময় এটি বেশ নিরপেক্ষ ছিলো, একটি রিপোর্টে পড়েছিলাম, বাংলাদেশের ৬৫% নারী নাকি স্বামীর দ্বারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতিতা হন । রিপোর্টটি মিথ্যে নয়, বাংলাদেশে নারীর প্রতি অন্যায় অত্যাচার সহিংসতা একটি সাধারণ ঘটনা ।

আমার প্রশ্ন, নারীর প্রতি নির্যাতনের জন্য সর্বাগ্রে দায়ী কে ?

উত্তরঃ পুরুষতন্ত্র ।

পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক কে ?

উত্তরঃ সকল ধর্মগ্রন্থ।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ রয়েছে Prevention is better than Cure কথাটি একেবারেই মিথ্যে নয় । প্রতিকারের আগে প্রতিরোধ করা উত্তম । তাই নারীর প্রতি পুরুষের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐ দুই একটা হাসান সাইদ নামক নরপশুদের শাস্তি দিয়ে এবং মূল কারণকে চিহ্নিত না করে নারীর জন্য শুধুমাত্র দুদিনের মায়াকান্না কেঁদে কোন লাভই হবেনা । হাসান সাইদকে শাস্তি তো দিতেই হবে, তবে এর সাথে সাথে সমাজ এবং ধর্মের নিয়মকানুনের প্রভূত সংস্কার প্রয়োজন, অন্যথায় এই রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা সমাজে ঘটতেই থাকবে ।

সুরা নিসা (৪) আয়াত (৩৪) এ রয়েছে

অর্থাৎ, পুরুষ নারীর নিয়ন্ত্রণকর্তা এবং রক্ষাকর্তা, কেননা আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন (শারীরিক শক্তির বিচারে) এবং যেহেতু পুরুষ অর্থ দিয়ে তাদের ভরণপোষণ করে । তাই সতীসাধ্বী নারীরা হবে একান্ত অনুগতা-বাধ্যগতা, স্বামীর অবর্তমানে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুযায়ী তাদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করবে । যে সকল স্ত্রী থেকে অবাধ্যতা এবং খারাপ আচরণের আশংকা করো, তাদের মৃদু তিরস্কার করো, অতঃপর তাদের সঙ্গে শয্যা বর্জন করো এবং অতঃপর তাদের প্রহার করো ।

আমার প্রশ্ন -এই যদি হয় একটি ধর্মে নারীকে সম্মান দেওয়ার নমুনা (!) , তাহলে হাসান সাইদ, ডাক্তার মুনীররা কেন নারীদের গায়ে হাত তুলবে না ? কেন তাদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করবে না ?
হাসান সাইদদের মত পুরুষদের কারা তৈরি করে ? এই ধর্ম এবং ধর্মগুরুরাই, ধর্ম নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থাই । শিশুবয়সে আমাদের আরবীতে কোরান শরীফ পড়ানো হয়, কিন্তু অর্থ সহকারে পড়ানো হয়না, তাই অর্থ না জেনেই শুধুমাত্র পিতামাতা এবং পরিজন থেকে আমরা ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি, অর্থ না বুঝেই ধর্মকে ভালবাসতে এবং মহান ভাবতে শুরু করে দেই, ধর্মগ্রন্থে আসলে কি লেখা আছে তা না পড়েই দাবী করি ধর্ম সঠিক আর বাকি সব ভুল । অর্থ না বুঝে ভালবাসার পরিণাম হয় ভয়াবহ, রুমানা মঞ্জুর এবং বাংলাদেশের ৬৫% নারী সমাজ এভাবেই ধর্ম দ্বারা সম্মানিতা (!) হন ।

ধর্মে লেখা আছে বলে এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে আমরা ভয় পাই, তাই রুমানা মঞ্জুরের মত আরো অজস্র রুমানা এরকম নির্যাতনের শিকার হন এবং আমরা দুদিনের মায়াকান্না কেঁদেই প্রতিকার-প্রতিরোধ না করেই আবার সেই ধর্ম নিয়ন্ত্রিত জীবনে ফিরে যাই । অনেকটা লঞ্চ ডুবির মত ঘটনা, দুদিনের মায়াকান্না এবং অতঃপর আবারো কয়েকদিন পরে ফের লঞ্চডুবি ! নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের শেকড় বা উৎস উপড়ে না ফেললে এই ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে ।

সুরা নিসার এই আয়াত সম্পর্কে আমার চরম আপত্তি রয়েছে, আমি এই আয়াতের নিম্নলিখিত সংশোধন দাবী করি

পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে, কেউ কারো নিয়ন্ত্রণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হবেনা, শুধু শারীরিক শক্তিই বিচারের মাধ্যম হতে পারেনা, মানসিক শক্তিও বড় ব্যাপার যেটি নারীদের মধ্যে একটি সমবয়সী পুরুষ থেকে অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে এবং অর্থ উপার্জন বর্তমান যুগে নারী পুরুষ উভয়েই করতে পারে, তাই ভরণপোষণের ভার শুধুমাত্র পুরুষের প্রতি ন্যস্ত করা অবিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে। উত্তম নারীরা অনুগতা বাধ্যগতা নয়, বরং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হবে তবে স্বেচ্ছাচারী হবেনা এবং ইজ্জত আব্রুর ব্যাপারে নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া না হলে বা মত কিংবা কাজকর্মের অমিল হলে তারা পারিবারিক বিচ্ছেদের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাবে, কোনরুপ পেটানো বা মানসিক নির্যাতন করা চলবে না, শয্যা বর্জনের কোন বিষয়ই নেই, কেননা, একটি নারীর চেয়ে পুরুষ অনেক বেশি কামুক এবং বহুগামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন ।

আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে চান কি ? চাইলে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করবেন আশা করি ।

সুরা বাকারা (২)র ২২৩ নং আয়াতে রয়েছে

Your women are your fields, so go into your fields whichever way you like . . . . (MAS Abdel Haleem, The Qur’an, Oxford UP, 2004)

Your wives are as a tilth unto you; so approach your tilth when or how ye will (yusufali 2 : 223)

তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র, তাই তাহাতে যেভাবে খুশি প্রবেশ করতে পারো !
এই যদি হয় একটি ধর্মগ্রন্থের বাণী (!) , তাহলে পুরুষ কেন নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করবে না, কেন নারীরা ধর্ষিতা হবেনা ?  দিনাজপুরের নুরজাহান বা শরীয়তপুরের হেনা আক্তারেরা কেন দোররা মারার শিকার হবেনা, কেন ধর্ষিতা হবেনা ? কেন তারা আত্মহত্যা করবে না ? নারী কি পুরুষের মতই মানুষ নয়, স্রেফ ময়দার তাল বা শস্যক্ষেত্র ?

সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে রয়েছে

And men are a degree above them. (Pickthal 2 : 228) (Shakir 2 : 228)

But men have a degree (of advantage) over them (yusufali 2 : 228)

অর্থাৎ, পুরুষ নারীর থেকে স্ট্যাটাসে একডিগ্রী ওপরে ।

এই কি নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ? এই কথাই যদি লেখা থাকে, তবে কেন পুরুষেরা নিজেদের সুপিরিয়র দাবী করে নারীদের প্রতি শোষণ নির্যাতন বঞ্চনা করবে না ?

সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে রয়েছে

The male shall have the equal of the portion of two females (Shakir 4 : 11)

To the male, a portion equal to that of two females (yusufali 4 : 11)

পুরুষ যদি নারী থেকে সবসময়ই বেশি পেয়ে থাকে এবং একডিগ্রী ওপরে থাকে, তাহলে নারী পুরুষে সাম্য রচিত হবে কি করে ? নারী দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবে, এর পুরো ফায়দা তুলবে পুরুষ ! এখানে আবার আরেকটি চালাকি রয়েছে, নারীকে স্বামী এবং পিতার সম্পত্তি থেকে কিছু অংশ দেওয়ার মাধ্যমে বুঝ দেওয়া হয় কিন্তু এগুলো নারীকে পরাধীন এবং পরমুখাপেক্ষী করে একেবারেই পরজীবীর জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। এতে নারীর স্বাধীন হওয়ার পথ রুদ্ধ হয় । বিয়ের আগে পিতার অধীন, বিয়ের পরে স্বামীর অধীন এবং বার্ধক্য উপনীত হয়ে সন্তানদের অধীন হয়ে নারী চিরজীবনই চরম বৈষম্যের শিকার হয় ।

যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে যৌনসম্ভোগও ইসলাম সমর্থন করে –

And forbidden to you are wedded wives of other people except those who have fallen in your hands [as prisoners of war] . . . (Maududi, vol. 1, p. 319)


Also (forbidden are) women already married, except those (captives and slaves) whom your right hands possess. ( Al Hilali 4:24)

And all married women (are forbidden unto you) save those (captives) whom your right hands possess (Pickthal 4:24)

ইসলাম পুরুষকে ৪ বিয়ে করার অনুমতি দেয় অথচ নারীকে ১ জনেই সীমাবদ্ধ থাকতে বলে –
And if you fear that you shall not be able to deal justly with the orphan-girls, then marry (other) women of your choice, two or three, or four but if you fear that you shall not be able to deal justly (with them), then only one or (the captives and the slaves) that your right hands possess (Al Hilali 4:3) 

If ye fear that ye shall not be able to deal justly with the orphans, Marry women of your choice, Two or three or four; but if ye fear that ye shall not be able to deal justly (with them), then only one, or (a captive) that your right hands posses (Yusuf Ali 4:3)

অর্থাৎ যদি তাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে পারো তবেই চারজন পর্যন্ত বিবাহ করো কিন্তু যদি না পারো তবে একজনেই সীমাবদ্ধ থাকো । কিন্তু  একই সুরার ১২৯ নং আয়াতে রয়েছে স্ববিরোধী বক্তব্য -

Ye are never able to be fair and just as between women, even if it is your ardent desire (yusufali 4 : 129)

And you have it not in your power to do justice between wives, even though you may wish (it) (Shakir 4 : 129)

 
 অর্থাৎ তুমি চাইলেও তাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে পারবেনা ।

যদি একের অধিক স্ত্রীগণের সঙ্গে ন্যায়বিচার অসম্ভবই হয়ে থাকে, তাহলে চার বিয়ের অবতারনা অপ্রাসঙ্গিক নয় কি ? ইসলামের কাছে দাসীকে সম্মান জানানোর উৎকৃষ্ট পন্থা মনে হয় দাসীর সঙ্গে যৌন সম্ভোগ করা , উপরের সুরা নিসার ৩ নং আয়াত থেকে এটি স্পষ্ট। দাসীর অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে বা তার অমতে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া কি ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন নয় ? এই যদি নারীর প্রতি ইসলামের সম্মান দেখানো হয়, এভাবে যদি সকল ক্ষেত্রে পুরুষকে সকল কিছু করার অধিকার দান করে শক্তিশালী করে দেওয়া হয়, তবে রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা কেন ঘটবে না ?

শারীরিক শক্তি নিঃসন্দেহে পুরুষের বেশি কিন্তু  প্রাক-ইসলামিক যুগে নারীদের অবস্থান পুরুষের চেয়ে উন্নত ছিলো অর্থাৎ শারীরিক শক্তিই সবক্ষেত্রে নিয়ামক নয় । নারীদের অবস্থান যে সে সময় পুরুষের চেয়ে উন্নত ছিলো সে সম্পর্কে জানতে পাঠকেরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের একজন ডঃ হুমায়ুন আজাদের "নারী" এবং  "আমার অবিশ্বাস " পড়ে দেখতে পারেন ।ইসলামের আগে আল উজ্জা আল লানত আল মানত নামের বিভিন্ন দেবীর পুজো হতো, পুজো আর ইবাদতের অর্থ ফাংশোনালি কিন্তু সম্মান প্রদর্শন । প্রাক ইসলামিক যুগে যে নারীর অবস্থান উন্নততর ছিলো তার প্রমাণ স্বয়ং খাদিজা (রা) । তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন একজন ব্যবসায়ী কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর হজরত মোহাম্মদের স্ত্রী হয়ে তিনি স্বাধীন নারী থেকে পরাধীন গৃহবধুতে পরিণত হন । একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী নারী থেকে কি একজন পরাধীন গৃহবধূ অধিকতর সম্মানীয় ? ইসলাম থেকে আরো দাবী করা হয়, ইসলামের আগে নাকি নারীদের অবস্থা খারাপ ছিলো এবং তাদের জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হত । যদি নারীর অবস্থা খারাপ হয়, তবে খাদিজা একজন ব্যবসায়ী হন কিভাবে ? আর জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেললে নারীর সংখ্যা তো একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে, সেক্ষেত্রে ১ পুরুষের ৪ বিয়ে যুক্তিতে আদৌ টেকে কি ? নারীর সংখ্যা কম হলে তো ১ নারীর ৪ পুরুষ থাকা উচিত যুক্তির বিচারে । আর দাসী বা বন্দিদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম নিশ্চয়ই তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বা অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে করা হয় । এটাও কি নারীর প্রতি ধর্মের সম্মান প্রদর্শনের নমুনা ?

পুরুষ যেমন রক্তমাংসের মানুষ, নারীও তেমনি । একজন পুরুষ ধর্মে এবং সমাজে নিজের অবস্থান শক্তিশালী দেখে ফ্রী স্টাইল অসংযত বহুগামী জীবনাচরণে প্রবৃত্ত হয়, নারীর মধ্যে বহুগামিতা যে নেই তা নয়, পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের বহুগামিতা সুস্পষ্ট লক্ষ্যণীয়, কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা ধর্মীয় আর সামাজিক কারণে নিজেদের অবস্থানগত দুর্বলতার কারনে বহুগামিতায় সহজে জড়াতে চাননা । তবে একজন শিক্ষিতা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন মহিলা চার দেওয়ালের মধ্য থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে পারে । দেখা যায়, অনেক শিক্ষিতা মহিলারই আজকাল একাধিকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা তার চেয়েও বেশি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বহুগামিতায় বা পরকীয়া প্রেমে কিছুটা হলেও প্রভাবক হিসেবে কাজ করে । তবে এই পরকীয়া সকল ক্ষেত্রে দোষের নয়। স্বামী বা স্ত্রী যদি একে অপরের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে তখন এরকম সম্পর্ক ঘটতেই পারে, বারবার ঘটলে অবশ্য সেটিকে ভাল বলা যাবেনা, তবে মানুষের মন চরম বিচিত্র, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরের মতই আজকে যার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, কাল তার প্রতি আকর্ষণ নাও থাকতে পারে,তাই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এরকম সম্পর্ক বর্তমানে বিরল কিংবা অস্বাভাবিক কোনটিই নয়।
 যুক্তির বিচারে রুমানা মঞ্জুর সম্পর্কে তার পাষণ্ড স্বামী হাসান সাইদের সব কথাই মিথ্যে নয়, শুধুমাত্র বিদেশে যাওয়ার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে এরকম নৃশংস ব্যবহার যুক্তির বিচারে কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এটি হতে পারে যে, হাসান সাইদ ভেবেছিলেন বা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রতি বিতৃষ্ণার শিকার হয়েই রুমানা মঞ্জুর তার ইরানী বন্ধুটির সঙ্গে ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েন এবং হয়তো বিদেশে গেলে তাদের মধ্যে দেখাসাক্ষাত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে -এমন ধারণা থেকে হাসান সাইদ ভেতরে ভেতরে রাগ ও ক্রোধে ফেটে পড়তে পারেন এবং সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি হিংস্র নরপিশাচের মত হামলে পড়ার মাধ্যমে । কেননা, মুসলিম পুরুষের একটি সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেটি হলো, নিজে দশজন মেয়ের সঙ্গে ফুর্তিফার্তি করতে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয়না, দশজন মেয়ে কি ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ পড়ছে তাতে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা হয়না, কিন্তু নিজের স্ত্রী যদি ভুলেও অন্য পুরুষের সঙ্গে সামান্য কথাও বলে,অন্য পুরুষের সঙ্গে মেশে, ঘরের বাইরে যায় কম পোশাক পরে- তো সেগুলো হয়ে যায় মহাঅন্যায় -মহাপাপ । নিজের বেলায় সাত খুন মাফ কিন্তু স্ত্রীর বেলায় ভয়ংকর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচার !

জাকারিয়া স্বপন নামের একজন লেখক বলেছেন আমরা বাংলাদেশে মেয়েদেরকে যেভাবে বড় করি, যেভাবে গড়ে তুলি, তাতে কয়টা মেয়ের পক্ষে সম্ভব সংসার ছেড়ে চলে যাওয়া? সে পিএইচডি করুক, আর হাই স্কুল পাশ করুক - বাস্তবতা হলো এই যে, আমরা ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের মাথার ভেতর কিছু জিনিস এমনভাবে ইমপ্লান্ট করে দেই, সেটা সে সারা জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারে না

এই কিছু জিনিস আসলে কি সেটা তিনি উহ্য রেখেছেন বা নিজের ধর্মের দিকে তাকিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এড়িয়ে গেছেন । এই কিছু জিনিসগুলো হলো ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়মকানুন এবং সেখান থেকে উৎসারিত সামাজিক রীতিনীতি নিয়মকানুন ।

তাই আমরা একদিকে যেমন নারী অধিকারে শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া ধর্মগুলো নিয়েও থাকি, আরেকদিকে নারীর প্রতি নির্যাতনে মানবতা নিয়েও সোচ্চার হই । এভাবে দুই ডালে থাকলে রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটতেই থাকবে, নারীর কোন উন্নয়নই হবেনা, জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করবে ।
যে কোন এক পক্ষে আসতে হবে, হয় মানবতার দৃষ্টিতে নারীর ৫০-৫০ সমানাধিকারের পক্ষে, না হয় ইসলামিক দৃষ্টিতে পুরুষের পক্ষে ৬৬.৬৭ / ৩৩.৩৩ অর্থাৎ ২:১ এর পক্ষে ।

লেখক আরো বলেছেন - আমি, আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে, আমার বন্ধুরা, আমার পাঠক - সবাই একেকটি আলাদা সত্তা। আমরা কেউ কারো মালিক নই। আমরা কেউ কারো প্রভু নই।চলতি পথে কারো কারো সাথে আমাদের উঠাবসা হবে, ভালোবাসা হবে, বিরহ হবে, অভিমান হবে, রাগ হবে - কিন্তু তাই বলে আমরা একজন আরেক জনের উপর চড়াও হবার অধিকার নেই। গায়ে হাত তোলার ক্ষমতা সে কোথায় পেলো? এই প্রভুত্ব তাকে কে দিয়েছে? পুরুষত্ব? নাকি একটি কাবিননামার স্বাক্ষর? (যার বিনিময়ে একটি নারীকে সহসাই কিনে ফেলা যায়)।

আমারো একই কথা, প্রভুত্ব তাকে কে দিয়েছে ? কোরান শরীফে সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত কি পুরুষকে সেই প্রভুত্ব দেয়নি ? পুরুষের পুরুষত্বের মূলে কি ধর্মগ্রন্থগুলো নয় ? ধর্মগ্রন্থ নারীকে পূর্নাঙ্গ সৃষ্টি হিসেবেও সম্মান দেয়নি,আদমের পাঁজরার হাড় দিয়ে নাকি হাওয়ার সৃষ্টি ! মালিক বা প্রভু হওয়ার মানসিকতা তখনই ধীরে ধীরে স্তিমিত হবে যখন সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত থেকে পুরুষ নারীর রক্ষাকর্তা নিয়ন্ত্রণকর্তা এসব বাণী অপসারিত হবে । প্রহার করা বা চড়াও হওয়ার প্রবণতা তখনই ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে যখন সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত থেকে স্ত্রীপ্রহার এবং তিরস্কারের বাণীগুলো অপসারিত হবে।

হিন্দুধর্মে একসময় নৃশংস সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিলো, সেখান থেকে রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রভূত সংস্কারে এই প্রথাটি হিন্দুধর্ম থেকে বিলুপ্ত হয় । তাদের তো বিদ্যাসাগর ছিলো, তারা বিদ্যাসাগরকে সম্মানও দিয়েছিল কিন্তু আমাদের ধর্মে সেই ত্রাণকর্তা সংস্কারকদের অবস্থা কি ? তসলিমা নাসরিন নারীর পক্ষে কথা বলতে যেয়ে আজকে নিজের দেশের নাগরিকত্ব পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন, তার ন্যায্য অধিকার তার পাসপোর্ট তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি । ডঃ হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধর্মের বিপক্ষে এবং নারী ও  প্রগতির পক্ষে কথা বলতে যেয়ে নিজের জীবন হারিয়েছেন। তারপরেও আমাদের নারীরা চুপ, প্রতিক্রিয়াহীন ! আমাদের দেশের মোটামুটিভাবে ৫০% নারী, তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনে কেন তারা ধর্মের কারণে মুখ খুলবেন না ? তারা কেন প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধে অক্ষম হবেন ? মেয়েরা দিনদিন এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে, তারপরেও কেন সেই বিকশিত হয়ে ওঠা ফুলগুলো পুরুষের চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার কাছে নুয়ে পড়ছে, তাদের অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনের কাছে মুখ থুবড়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে ।

সকল কিছুর মূলে এই পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম এবং সেখান থেকে উৎসারিত সামাজিক রীতিনীতি নিয়মকানুন । মূল জায়গায় প্রতিকার প্রতিরোধ না করলে এই সামাজিক অসুস্থতা কখনোই সারবে না । আর এখানেই নারী নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দাবীর যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। নারী নীতি ২০১১ র বিরোধিতা করা মানে ধর্ম আর পুরুষতন্ত্রকেই প্রশ্রয় আস্কারা দেওয়া, যদিও নারী নীতি ১৯৯৭, বর্তমান নারীনীতি থেকে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের বিচারে অনেক বেশি শ্রেয় ছিলো ।

ধর্মের দোহাই দিয়ে আর কতদিন নারীকে পেছনে ফেলে রাখা হবে ? দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০% নারী, অর্ধেক জনসংখ্যা হয়েও কেন নিজেদের দাসী অবস্থানে সন্তুষ্ট থেকে ধর্মের এমন অমানবিক নারীবিরোধী বাণীগুলোর ব্যাপারে নীরব থেকে যাবে ?

দুই চার জন পুরুষ ব্যতীত নারীর পক্ষে দাঁড়ানোর মত বিশালহৃদয় পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মতান্ত্রিক সমাজের পুরুষদের নেই । নারীর উন্নয়নের জন্য নারীদের নিজেদেরকেই উঠে আসতে হবে, দেখিয়ে দিতে হবে, বুদ্ধি যার বল তার , শুধু শারীরিক নয় বরং মানসিক শক্তিও যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে তা নারীদের প্রমাণ করে ছাড়তে হবে ।
সেই তিনটি গল্পের উত্তর কি হতে পারে সেই নিয়ে এবার সামান্য আলোচনায় বসা যাক । প্রথম দুটি গল্পে আসলে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরিস্থিতির শিকার, জামান সাহেব এবং মিসেস শরীফ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থেকে তাদের অর্ধাঙ্গিনী এবং অর্ধাঙ্গের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় পাননি, তাই তারা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বশেই অন্যের প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন, যে ব্যক্তি সময় দিতে পারে তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া বিন্দুমাত্র অবাস্তব বা অস্বাভাবিক নয় । তবে, মিসেস জামান এবং মিঃ শরীফেরও দোষ রয়েছে কেননা, তারা তাদের স্বামী স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় দেননি, এটিকে যদিও খুব বড় দোষ বলা যায়না যদি কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা আসলেই অনেক বেশি হয়।

দুটি গল্পে একই রকম, তবে নারী পুরুষের অবস্থানগত পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় এবং সবচেয়ে বড় যেটি লক্ষ্যণীয়, সেটি হলো মিসেস জামান একজন নারী বলে তার স্বামীকে কিলঘুষি মারতে পারেননি, অন্যদিকে মিঃ শরীফ পুরুষ বলে স্ত্রীকে মারতে মারতে শেষ করে দিয়েছেন । নারী পুরুষের বৈষম্য এমনই প্রকট এবং এগুলো আসে ধর্মগ্রন্থ এবং শারীরীক শক্তির জোশে ।

শহীদ এবং রুবানার গল্পটি আসলে কাদের গল্প নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ? আমাদের দেশের জনসাধারণের অনেকেই মনে করেন, তৃতীয় পক্ষের কথা যেন স্বামী স্ত্রী কেউ কাউকে প্রকাশ না করেন । আমি এই কথাটির সঙ্গে একমত নই কেননা, একসঙ্গে বসবাস করলে একদিন না একদিন তৃতীয় পক্ষের কথা তারা জানতে পারেন, এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়, পরিণতিতে ভালবেসে বিয়ে করা একটি সুখের সংসার মুহূর্তে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় । কিন্তু ঘটনা সৎ সাহস নিয়ে স্বীকার করলে হয়তো একে অপরের প্রতি বিশ্বাস অটুটই থাকে, স্বামী বা স্ত্রী মনে করে, নাহ, সে তো গোপন করেনি, আমার কাছে সৎ থেকে স্বীকার করেছে এবং সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা । তবে, এখানেও একটি কিন্তু রয়েছে, সেটি হলো, স্বামী বা স্ত্রী যদি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার না হয় (গ্রামাঞ্চলে কিংবা গোঁড়া ধার্মিক পরিবারে), তবে এই স্বীকারটি হিতে বিপরীত হতে পারে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশির ভাগ ব্যক্তিই অন্তত কিছুটা শিক্ষিত এবং সচেতন বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, তারা পুরোপুরিভাবেই গোঁড়া নয় বরং কালের প্রবাহে রীতিনীতি আচার আচরণ যে পরিবর্তিত হয় – সেটি বুঝতে সক্ষম । রক্তমাংসে গড়া মানুষের মনোদৈহিক চাহিদা এবং মনস্তত্ত্বের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ বুঝতে তাদের খুব একটি সমস্যা হওয়ার কথা নয় । তাই বিবাহবহির্ভূত দুই একটি ছোটখাটো ঘটনা - পরকীয়া প্রেম বা চরম আবেগের বশে হঠাৎ কিছু করে ফেলা পরিবারের সুখশান্তি তথা বৃহত্তর স্বার্থের নিমিত্তে তাদের সহজভাবেই গ্রহণ করা উচিত এবং এ নিয়ে কাউকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা উচিত নয় । এতে পারিবারিক সুখশান্তি এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস দুটোই বজায় থাকে। তবে এগুলো যদি পেশা এবং নেশা হয়ে যায়, তবে তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং সেক্ষেত্রে দুজনের একসঙ্গে বসে খোলাখুলিভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান কিভাবে করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

রুমানা মঞ্জুর যত জলদি সম্ভব সুস্থ হয়ে সেই আগের স্বাভাবিক জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসুন এই প্রত্যাশা করে আমার লেখা শেষ করছি ।

প্রসঙ্গঃ সমকামিতা ও এইডসের আন্তঃসম্পর্ক এবং বিভ্রান্ত অভিজিৎ রায়

এইডস এবং সমকামিতার ওপর জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সমকাম এবং এইডসে আক্রান্তদের জন্য উৎসর্গীকৃত

আমাদের দেশের জনগণের একটি মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলো, তারা ডাক্তারের কাছে সহজে যেতে চায়না, নিজেই নিজের চিকিৎসা করে, আমাদের অভিজিৎ বাবুও চিকিৎসক না হয়েই এইডসের মত একটি মরনঘাতী ব্যাধিতে সমকামের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে প্রচার করে সমাজের উপর তার অপচিকিৎসা চালিয়ে যান । আমার বাবা ইতিহাসের লোক, চিকিৎসক নন, আমার মাতামহ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লোক – ১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিক তথা একাত্তরের বুদ্ধিজীবী মুহাম্মদ জিয়াদ আলী, তিনিও চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে জড়িত নন । তাদের মাঝে মাঝে দেখি ড্রাগ ম্যানুয়াল বা মিমস, সিমস, পিমস ইত্যাদি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে, হয়তো কারো কোন ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা হয়েছে, তখন তারা মিমস লব্ধ জ্ঞানে রোগীকে বলেন প্যারাসিটামল বা অ্যান্টি অ্যালারজিক খেতে । এই কাজটি বাংলাদেশে অনেকেই করেন, একটু কাশি হলেই দেখা যায়, কফ সিরাপ তুসকা খাওয়া শুরু করেন । ভাইরাল কমন কোল্ডে অনেকে অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন । কেউবা ঘন সর্দিতে আন্দাজে অ্যালাট্রল খাওয়া শুরু করেন । আমি মনে মনে হাসি, কেননা চিকিৎসক হতে গেলে ৫ বছর এমবিবিএস পড়তে হয়, তারপর তিনি ডাক্তারি করতে পারেন, শুধু ইন্ডিকেশন- ডোজ-সাইড এফেক্ট-প্রিকোশন দেখে ঔষধ দেওয়া যায়না ।

অজয় রায় পুত্র অভিজিৎ রায় সমকাম এবং সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি বিজ্ঞানময় কিতাব (!) লিখেছেন বলে দাবী করে আসছেন । এই মহাকিতাবের নাম – ““সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” , সমকামিতার পক্ষ নিতে যেয়ে অজস্র মিথ্যে বলেছেন অভিজিৎ রায়, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দাবী করে বইটির মধ্যে জুড়ে দিয়েছেন চরম অবৈজ্ঞানিক তথ্য যা অধুনা চিকিৎসাবিজ্ঞান সমর্থন করেনা, সেগুলো নিয়েই আমার এই পোস্টের অবতারনা ।
দেখা যাক, অভিজিৎ রায়ের বইটির ১০ম অধ্যায়ের “সমকামিতা এবং এইডস” শীর্ষক অংশটি -----





অধ্যায়টি পিডিএফ আকারে পেতে ডাউনলোড করুন অভিজিৎ রায়ের সাইট থেকেঃ

অভিজিৎ রায় বলতে চেয়েছেন –

১) অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন, সমকামিতার মত বিকৃত যৌনতার কারণেই বোধ হয় এইডস হয়ে থাকে । সমকামিতার কারণে কারো দেহে এইডসের জীবাণু গজায় না । বাহকের দেহে এইচআইভির জীবাণু থাকলে সমকামী যৌনসংসর্গে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ঠিক ততটুকুই যা বিষমকামী যৌনসংসর্গেও ঘটতে পারে । এইডস সমকামিতা-বিষমকামিতায় বাছবিচার করেনা, যৌনসঙ্গীর দেহে এইচআইভি জীবাণু থাকলে এইডস হবে, নচেৎ হবেনা ।

২) আমেরিকার সমকামীদের মধ্যে এইডস রোগের হার বেশির পেছনে সমকামিতা অতটা দায়ী নয়, বরং আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটই বেশি দায়ী । আফ্রিকা মহাদেশে এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি এবং সেখানে সমকামী নয় বরং বিষমকামী ব্যক্তিদের এইডস সংক্রমণ অনেক বেশি । শুধু আফ্রিকা নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই বিষমকামীদের মধ্যে এইডসের প্রকোপ সমকামীদের থেকে অনেক বেশি দেখা যায় ।

৩) এইডসকে সমকামিতার সঙ্গে ট্যাগ করে দেওয়ার একটি ইতিহাস আছে, আমেরিকার সমকামীদের মধ্যে এই রোগের হার বেশি লক্ষ্য করে বিশেষজ্ঞরা ধরে নিয়েছিলেন এটা বোধহয় “সমকামিতা সংক্রান্ত” কোন রোগ হবে, সেখান থেকে এই ভুল ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ।
৪) এরিখ মার্কোসের বইয়ের একটি লাইন তুলে দিয়েছেন –
Worldwide, the majority of people who have contracted HIV have been – and are – heterosexual. HIV/AIDS does not discriminate. It’s an equal opportunity disease that infects people who fail to use the well-understood methods to prevent its spread.

আমার বক্তব্য

চিকিৎসক না হয়ে শুধু সাইট ঘেটে চিকিৎসক হওয়া যায়না, যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী অভিজিৎ বাবু । ৫ বছর ধরে এমবিবিএস পড়তে হয়, তারপর একজন চিকিৎসক হয় । আপনি ভেবেছেন, এইডস আক্রান্ত পুরুষের লিঙ্গ নারীর যোনীতে প্রবেশ করলেই নারীর এইডস হয়ে যাবে, যা সত্য নয় । শুধু আপনি নন, আমাদের দেশের আস্তিক নাস্তিক অজস্র ব্যক্তির এই ধারণাটি রয়েছে যে একবার প্রবেশ করলেই এইডস হয়ে গেল – যা একেবারেই ভুল । সঠিক তাহলে কি ? আসুন জেনে নেই, কেন সমকামীদের মধ্যে এইডস প্রবণতা বেশি –
১) নারীর যোনীগাত্র ৩টি পুরু লেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত এবং তাই, এটি অনেক শক্ত এবং স্থিতিস্থাপক বিধায় যৌনসঙ্গমের সময় যোনীগাত্রের চামড়াতে যে ইনজুরি হবেই, এমনটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়না । উল্লেখ্য, ইনজুরি হলেই শুধুমাত্র এইডস হবে, কিন্তু ইনজুরি না হলে এইডসের জীবাণু ব্লাড স্ট্রিমে প্রবেশ করতে পারবেনা, অর্থাৎ এইডস হবেনা । দেখা যাচ্ছে যে, পুরুষ সঙ্গীর এইডস থাকলেও তার জীবাণু নারীর ৩ লেয়ার বিশিষ্ট পুরু ও শক্ত যোনীগাত্রের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ইনজুরির স্বীকার না হয়ে রক্তপ্রবাহে মিশতে পারেনা, ফলে এইডস হয়না । কিন্তু মলাশয়গাত্র অনেক নরম এবং অস্থিতিস্থাপক, তাই লিঙ্গের ঘর্ষণে এটিতে সহজেই ইনজুরি হয়, রক্তপাত ঘটে। পেনেট্রিটিভ অ্যানাল সেক্সের কারণে মলদ্বারের চারপাশের মেমব্রেন (ঝিল্লী) সহজেই ছিড়ে যায় এবং বীর্যরসে থাকা এইডসের জীবাণু ছিড়ে যাওয়া মেমব্রেন থেকে ব্লাড স্ট্রিমে প্রবেশ করে। এজন্যেই বিষমকামী যৌনসঙ্গমে এইডস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং সমকামী যৌনসঙ্গমে অনেক বেশি।
২) লিঙ্গের জন্য যোনী, লিঙ্গের জন্য মলাশয় নয় । যোনী যৌনসঙ্গমের জন্য স্পেশালি তৈরি, একটি লিঙ্গ সহজেই রক্তপাত না ঘটিয়ে নারীযোনীতে ঢুকে যেতে পারে কিন্তু একটি লিঙ্গ মলাশয়ে সহজেই ঢুকে যেতে পারেনা, তাকে প্রেশার দিয়ে ঢোকাতে হয় এবং ঢোকাতে যেয়ে প্রায়শই রক্তপাত হয় যেখান থেকে এইডসের জীবাণু এইচআইভি রক্তপ্রবাহে চলে আসে ।
৩) যৌনসঙ্গমের সময় যোনী বেশ পরিমাণে লুব্রিক্যান্ট পদার্থ নিঃসরিত করে, কিন্তু মলাশয় থেকে এরকমের কোন লুব্রিক্যান্ট পদার্থ নিঃসরিত হয়না । তাই যৌনসঙ্গমে যোনীর সচারাচর ইনজুরি না হলেও মলাশয়ের অতিসহজেই ইনজুরি হয় যার থেকে এইডসের জীবাণু এইচআইভি অতিসহজে ব্লাড স্ট্রিমে প্রবেশ করে ।
৪) মলাশয়ের লেয়ার না থাকার কারণে ব্লাড ভেসেলগুলো একেবারে মলাশয়ের গাত্রের নিকটে অবস্থান করে, যোনীর বেশ কটি লেয়ার থাকার কারণে ব্লাড ভেসেলগুলো একেবারেই সম্মুখে থাকেনা, তাই এইচ আইভি জীবাণু মলাশয়ের মাধ্যমেই বেশি সংক্রমিত হয় ।
৫) মলাশয়ের ছিদ্রের অভ্যন্তরে জায়গা অপ্রশস্ত এবং তাই যৌনসঙ্গমের সময় মলাশয়গাত্রের সাথে লিঙ্গের ঘর্ষণের মাত্রাও বেশি, ফলে মলাশয় গাত্রের ইনজুরি হওয়াটা একেবারেই সহজ, কিন্তু যোনীছিদ্রের অভ্যন্তরে জায়গার পরিমান বেশি, তাই যোনীগাত্রে সেরূপে ঘর্ষণ হয়না এবং তাই ইনজুরিও অস্বাভাবিক ।
৬) বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই ভয়ে না চাইলেও বাধ্য হয়ে বিষমকামিগণ কনডম ব্যবহার করেন, কিন্তু সমকামীদের ক্ষেত্রে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে যৌনানন্দ পরিপূর্ণভাবে পেতে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কনডম ব্যবহার করেননা ।
৭) জন্মনিয়ন্ত্রণ করার জন্য সারা বিশ্বে (Coitus Interruptus) নামক যৌনসঙ্গম মেথডটি প্রচলিত যেখানে বীর্যস্খলনের আগেই লিঙ্গকে নারীর যোনী থেকে পুল-আউট করা হয়, যাতে করে নারীর যোনী এবং ইউটেরাসে বীর্যরস গমন করে তাকে গর্ভবতী করে ফেলতে না পারে । এইচআইভি জীবাণু রয়েছে – এমন বীর্যরস যদি নারীর যোনী এবং যোনী অভ্যন্তরে না যেতে পারে, তাহলে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই ।
যারা মেডিক্যাল বিষয় বাংলায় বুঝতে অপারগ তাদের জন্য ইংরেজীতে ব্যাখ্যা করা হলো
If a couple has anal intercourse, the risk of infection is greater than with vaginal intercourse. The lining of the anus is more delicate than the lining of the vagina, so it’s more likely to be damaged during intercourse, and any contact with blood during sex increases the risk of infection.
It is most likely to pass between two men because… lets just say the anus is more likely to tear from having something shoved in it than the vagina during intercourse, and therefore the infected person’s semen is more likely to enter the non infected person’s bloodstream, giving that person AIDS.
Part of the reason that sex between homosexual men is “high-risk”, is that anal intercourse is more traumatic than vaginal intercourse. You are much more likely to cause bleeding with anal intercourse, and thus pass along the virus.
The vagina was designed for sex, and easily expands to accomodate a penis. The walls are also much stronger and more elastic – remember, you’ve got to push a BABY outta that thing! The worst you have to deal with coming out the other end is a larger-than-usual sized dump, which, while painful, is certainly not equivalent to a newborn child!
The rectum does not produce natural lubricant like the vagina, so small micro-injuries are more likely to occur with anal intecourse, also there are many blood vessels very close to the surface in the rectum that provide HIV with easy access to the blood stream.
The vagina has several layers and is made for sex. The anus has no extra layers and easily tears and rips allowing viruses and bacteria to quickly pass into the blood stream. Women can have sex a lot and possibly not get anything while men having anal sex will quickly get it and then quickly pass it on.Supposedly they are more likely to engage in “high risk sexual behavior”
Also, anal sex is more likely to transmit the virus than PIV intercourse because there is more friction and less room, and the skin may break more easily.It is true that it’s because of doing anal.
Straight men usually have a lower risk of infection because the only area that has a mucus barrier used in vaginal sex is in the very end of the penis. With anal sex, it’s increased to the entire inside of the anal cavity. It raises our risk of infection to about the same as a female. Problem is, since females can get pregnant, condoms are more likely to be used during vaginal sex.
The top high risk activity is penetrative anal sex – very high risk of a small tear, thin membranes and deposition of bodily fluid. All of those raise the infection risk.
Coitus interruptus, also known as the withdrawal or pull-out method, is a method of birth-control in which a man, during intercourse withdraws his penis from a woman’s vagina prior to ejaculation. The man then directs his ejaculate (semen) away from his partner’s vagina in an effort to avoid insemination and by this method the chances of infection and transmission of AIDS become very low.
বাংলাভাষায় এর চেয়েও সহজ করে কখনো সমকামিতার সঙ্গে এইডসের সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়নি । যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের মাধ্যমেই যে এইডস হবে এই ভ্রান্ত ধারণাটি আমাদের দেশের অনেকের মধ্যেই বিরাজমান ছিলো, আশা করি এই ভুল ধারণাগুলোর অবসান ঘটবে এই লেখাটির মাধ্যমে ।
শ্রী অভিজিৎ রায়ের সুচতুরতার সঙ্গে বলেছেন, আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে বিষমকামীদের মধ্যে এইডস বেশি । আমিও সেটাই বলছি, আসলেই বেশি, আমি একেবারেই অস্বীকার করিনা, কিন্তু তার কথার খুঁত বা চালাকিটা কোথায়, সেটি পাঠককে ধরিয়ে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা । সূক্ষ্ম চালাকিটি হলো –
পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ১০% সমকামী, অর্থাৎ বিশাল ৯০% বিষমকামী ( অ্যাপ্রক্সিমেট হিসাব, এর চেয়ে কমও হতে পারে ।

দেখুনঃ Homosexuals Admit 10% Is Wrong


আমেরিকার জনসংখ্যারও মাত্র ৩.৫% সমকামী, অর্থাৎ বাকি ৯৬..৫% বিষমকামী ।


Gates, Gary J. (April 2011) Williams Institute, University of California School of Law. Retrieved 2011-04-07.

৯০% একটি বিশাল পারসেন্টেজ, তাতে তো এইডসে আক্রান্ত বিষমকামীর সংখ্যা মোটের ওপর বেশি হবেই, এটা তো কমন সেন্সের ব্যাপার, কিন্তু এইডস আক্রান্ত মোট জনসংখ্যার ৫৪% যদি সমকামী হয় (অর্থাৎ, ৪৬% এইডস আক্রান্ত বিষমকামী) , তাহলে সেটি কি তুলনামূলক অনুপাতে বিষমকামীদের থেকেও বিশাল পারসেন্টেজ নয় ?

সূত্রঃ As of 1998, 54 percent of all AIDS cases in America were homosexual men and according to the Center for Disease Control (CDC) nearly 90 percent of these men acquired HIV through sexual activity with other men.
(Centers for Disease Control and Prevention, 1998, June, HIV/AIDS Surveillance Report 10 (1)).


কয়েকটি দেশের উদাহরণ দেই -

২০১০ সালের বিবিসি রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাজ্যের মাত্র ১% জনসংখ্যা সমকামী, ৯৯% বিষমকামী ।
সূত্রঃ http://www.bbc.co.uk/news/uk-11398629

২০০৬ সালের রিপোর্ট অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ২-৩% জনসংখ্যা সমকামী, অর্থাৎ বিশাল ৯৭-৯৮% বিষমকামী । এতে তো মোটের উপরে এইডস আক্রান্ত রোগীর বিচারে বিষমকামীদের সংখ্যাই বেশি হবে !


২০০৩ সালের রিপোর্ট অনুসারে কানাডার মাত্র ১.৩% জনসংখ্যা সমকামী, অর্থাৎ ৯৮.৭% জনসংখ্যা বিষমকামী !

সূত্রঃ King et al. (1988). Canada, Youth and AIDS Study. Kingston, ON: Queen’s University

১৯৯২ সালের র্যান্ডম সার্ভে অনুসারে ১৩৭৩ জনের মধ্যে ডেনমার্কে মাত্র ২.৭% সমকামী ।
সূত্রঃ Sundet, J.M., et al. Prevalence of risk-prone sexual behaviour in the general population of Norway. In: Global Impact of AIDS, edited by Alan F. Fleming et al. (New York: Alan R. Liss, 1988), 53–60

২০০৩ সালের ডিউরেক্স গ্লোবাল সেক্স সার্ভে অনুসারে ১২% নরওয়েজিয়ান সমকামী ।


২০০৯ সালে সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির সার্ভে অনুসারে ৭.৮ % জনসংখ্যা সমকামী অর্থাৎ ৯২.২% বিষমকামী ।


উল্লেখ্য, সমকামের মারাত্মক কুফলের কথা চিন্তা করে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির কারণে সমকাম থেকে অনেকে তাদের ইচ্ছাশক্তির জোরে বের হয়ে আসতে পেরেছে, জনসংখ্যায় তাদের ক্রমহ্রাসমান পারসেন্টেজ এই কথাটিকে প্রমাণ করে । আর অনেকে মেন্টাল ও বিহ্যাভেরিয়াল কাউন্সেলিং ও মডিফিকেশনের মাধ্যমে এই দশা থেকে মুক্ত হয়েছে ।


সমকামী জনসংখ্যার এত কম পারসেন্টেজে তো মোটের ওপর কম জনসংখ্যাই এইডস আক্রান্ত হবে, কিন্তু রেশিও বা আনুপাতিক বিচারে সমকামীদের মধ্যে এইডস হওয়ার প্রবণতা কি বিষমকামীদের থেকে অনেকগুণ বেশি নয় ?

বাকি থাকলো এরিক মার্কাস প্রসঙ্গ ( অভিজিৎবাবু নাম ভুল লিখেছেন, এটা মার্কাস, মার্কোস নয় ) । অভিজিৎ বাবু ভেবেছেন – মানুষ অত খেয়াল করেনা, তারা নিশ্চয়ই তথ্যসূত্র বা কে বিশিষ্ট কে বিশিষ্ট নয় তা এত যাচাই করে দেখবে না। তাই, যার তার নাম উল্টোপাল্টা তুলে দিলেই কেল্লাফতে হয়ে যাবে ! কিন্তু ডঃ মুশফিকের ঈগলদৃষ্টি এড়ানো সম্ভব নয় । এরিক মার্কাস কোন বিখ্যাত কেউ নয় । তার সম্পর্কে আসুন একটু উইকিপিডিয়া ঘুরে দেখি –

Eric Marcus is an American non-fiction writer. His works are primarily of LGBT interest


উইকিপিডিয়াতে তার সম্পর্কে কয়েক লাইন মাত্র লেখা রয়েছে, কেননা বিখ্যাত ব্যক্তি তিনি নন, সাধারণ লেখক যিনি সমকামী সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী । পাঠকদের কাছে  প্রশ্ন রাখছি – সমকামী সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক কাদের ? সমকামীদের নাকি বিষমকামীদের ?

অভিজিৎ রায় যেভাবে যুক্তিরহিত ও বিজ্ঞানরহিতভাবে বিভিন্ন ভুল ও মনগড়া তথ্য দিয়ে, সাধারণ লোককে বিশিষ্ট লোক বানিয়ে এভাবে সেভাবে গোঁজামিলে সমকামকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন, তাতে সচেতন মানসে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাই স্বাভাবিক ।যাই হোক, সমকামিতা যে এইডস হওয়ার পেছনে একটি প্রিন্সিপ্যাল ফ্যাক্টর এখান থেকেই সুপ্রমাণিত অর্থাৎ সমকামিতা ন্যাচারাল হোক আর মানবিক অধিকার হোক, যাই-ই হোক না কেন, সমকামিতা সুস্পষ্টভাবেই স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ এবং তাই বর্জনীয় ।
সকলকে ধন্যবাদ ।

প্রসঙ্গঃ নোবেল শান্তি পুরষ্কার, মুহাম্মদ ইউনূস বনাম শেখ হাসিনা

(সম্মানিত পাঠকপাঠিকাবৃন্দকে অনুগ্রহ করে নিম্নে উল্লেখিত তথ্যসূত্রগুলো ভালো করে পড়ে এবং যাচাই করে মন্তব্য করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে, ধন্যবাদ।)
(এই লেখাটি যখন শেষ করলাম তখন প্রিয়ব্লগেই দেখলাম বিশ্বের ২য় শীর্ষ ধনকুবের মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস গনপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং বিভিন্নক্ষেত্রে তার ব্যাপক অবদানের জন্য, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় তার আগ্রহ ও প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তথা বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, লিংকটি দেখুনঃ  http://www.priyo.com/business/2011/05/17/bill-gates-praises-sheikh-hasi-26265.html )


<--break->


শান্তিতে প্রতিবছর নোবেল পুরষ্কার প্রদান করে নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি। পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত এ কমিটির কেউই বিশ্বখ্যাত কোন ব্যক্তিত্ব নন, সকলেই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান চেয়ারম্যান থরবোর্ন জ্যাগল্যান্ড নরওয়ের লেবার পার্টির একজন সদস্য। ২০০৬ সালে চেয়ারম্যান ছিলেন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য ওলে ড্যানবোল্ট যিনি ডঃ ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেন। কমিটির বাকি চারজন সদস্যদের মধ্যে ক্যাসি কুলম্যান ফাইভ একাধারে একজন ব্যবসায়ী এবং কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য। চরম বিতর্কিত উগ্র মার্কিনপন্থী এই সদস্যের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ২০০৭ সালে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর কে এবং ২০০৯ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। সিসেল রনবেক হলেন কমিটির অপর সদস্য যিনি একজন রাজনীতিক এবং সাবেক মন্ত্রী। ইঙ্গার ম্যারি ইটারহর্ন এবং এগোট ভেইল যথাক্রমে নরওয়েজিয়ান প্রগ্রেস ও সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির সদস্য, পেশায় যথাক্রমে পার্লামেন্টের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টিটিভ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট। তাদের অখ্যাতি এবং পেশার বিবরণ শুনে সচেতনমানসে তাই স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে,যে কমিটির পাঁচজন সদস্যের সকলেই রাজনৈতিক দলের সদস্য,কেউ ব্যবসায়ী কিংবা ফিজিওথেরাপিস্ট,তারা বিশ্বশান্তির কি এমন বোঝেন ? নরওয়ের বুদ্ধিজীবী সমাজের কাউকে কমিটিতে না রেখে সব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের স্থান দিয়ে নরওয়েজিয়ান সরকার কি নোবেল শান্তি পুরস্কারকে একটি হাস্যকৌতুকে পরিণত করে তোলেন নি?

নোবেল শান্তি কমিটিকে নোবেলবিজয়ী নির্ধারণে সহযোগিতা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল ইন্সটিটিউট। সংস্থাটির চেয়ারম্যান গ্যের লুন্ডস্ট্যাড একজন ঐতিহাসিক,যিনি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে লেখালেখি করেন। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ওলাভ নোলস্ট্যাড,দ্যাগ কুল গোটোভ্যাক, সিগরিড ল্যাঞ্জব্রেক,অ্যানি সেসিল জেলিং, টোরিল জোহানসেন এবং বর্ণ হেলগে ভ্যাঞ্জেন। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এদের কেউই বিশ্বনন্দিত কিংবা বড়মাপের ব্যক্তিত্ব নন। উইকিপিডিয়া কিংবা গুগল সার্চ করলেও ব্যাপারটির সত্যতা প্রমাণিত হয়। নরওয়ের এই অখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কাকে নোবেল প্রাইজ দিলেন আর কাকে দিলেন না,সেটি কোন বিষয়ই নয়। নোবেল শান্তি পুরষ্কারের প্রবর্তক সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল যদি তার জীবদ্দশায় জানতেন যে,তার নামে আজকাল কিছু অপরিচিত অখ্যাত রাজনীতিকেরা অশান্তি কায়েমকারী কূটনীতিক-রাষ্ট্রপ্রধান আর সুদখোর মহাজনদের পুরস্কৃত করছেন,তাহলে লজ্জায় অপমানে ওনার মাথা হেট হয়ে যেত। নোবেল শান্তি পুরস্কারের কয়েকটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেওয়া যাক:

ক)২০০৯ সালে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিশ্বকূটনীতি এবং বিশ্বসহযোগিতায় অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। চাটুকারিতা ও তোষামোদের কি নিদারুণ উদাহরণ !যে ব্যক্তি পরিবর্তনের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে জনমানসে আবেগিক ধুঁয়া তুলে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, তিনি মাত্র ১ বছরে বিশ্ব-সহযোগিতা ও কূটনীতিতে কি এমন আহামরি অবদান রাখলেন যে তাকে পরের বছরেই নোবেল শান্তি পুরস্কার দিতে হবে ? আজকে আফ্রিকান ও এশিয়ান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে উনি হস্তক্ষেপ করছেন,তেল দখলে না আসায় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সঙ্গে নিয়ে এবং জাতিসংঘকে নিজের তোষামোদকারী গোলাম বানিয়ে আজকে লিবিয়াতে বোমাবর্ষণ করছেন, এই কি শান্তিতে নোবেল প্রাইজ বিজয়ীর শান্তিরক্ষা ও শান্তিপ্রতিষ্ঠার নমুনা ? বারাক ওবামার মিথ্যে আশ্বাসে ভুলে মার্কিন জনগণ তাকেই প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত করলো আর উনি এসেই চিরাচরিত মার্কিন আগ্রাসনবাদ শুরু করে দিলেন ! বিভিন্ন বক্তৃতায় কিছু মিষ্টি কথা বলা বা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য যদি নোবেল দেওয়া হয়,তো অন্যান্য শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা কি দোষ করলেন ?

খ)২০০৭ সালের বিজয়ী মার্কিন ডেমোক্র্যাট সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর দুনিয়াব্যাপী কার্বন বিলিয়নিয়ার বলে কুখ্যাত, সবুজ প্রযুক্তিকে পুঁজি করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন, মুখে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বললেও নিজ বাড়িতে অন্যান্য বাড়ির তুলনায় ২০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ খরচ করেছেন, ব্যক্তিগত জেটপ্লেনে মাত্রাতিরিক্ত এনার্জি ব্যবহার ও বেশকটি অতিবিশাল প্রাসাদসম পরিমাপের বাড়ির মালিকানার কারণে ব্যাপকভাবে জনসমালোচিত হয়েছেন।

গ)২০০৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় বায়োলজিতে বিএস বলে দাবি করা ওয়াঙ্গারি মাথাই কে যিনি দাবি করেন,এইডসের জীবাণু এইচআইভি-র উৎপত্তি কোন বানর থেকে নয়, বরং শ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকেরাই নাকি আফ্রিকার জনগণকে ধ্বংস করার জন্য এটিকে তৈরি করেছে। এর জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে উনি পূর্ববক্তব্যকে অস্বীকার করেন,এবং নতুন বক্তব্যেও কিছু অসংলগ্ন কথার অবতারণা করেন এই বলে যে,এইচআইভি কোন বায়োলজিক্যাল এজেন্ট কিনা উনি তা সঠিক জানেন না। যদি তাই-ই হয় তবে বায়োলজিতে বিএস বলে নিজেকে দাবি করাটা মিথ্যাচার নয় কি ? কিছু বৃক্ষরোপণ করে, নারী অধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে দুচার কথা বলে যদি মাথাইয়ের মত নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়,তাহলে দুনিয়ার লাখ লাখ ব্যক্তিকেই অনায়াসে নোবেল পুরস্কার দেওয়া যায়।

ঘ)১৯৯৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় ইসরায়েলের ইযহাক রাবিন, শিমন পেরেজ এবং প্যালেস্টাইনের ইয়াসির আরাফাতকে। আরাফাত মুসলিম বিশ্বে নায়ক হিশেবে সমাদৃত হলেও পশ্চিমে তার অবস্থান একজন অনুতাপহীন সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধী হিশেবে, মূলত ৭০-৮০ দশকে হাইজ্যাকিং, কিডন্যাপিং এবং জিম্মিকরণের কারণে উনি পশ্চিমে রীতিমত একজন খলনায়ক হিসেবেই পরিগণিত। ইযহাক রাবিন ও শিমন পেরেজ এমন না হলেও নোবেল প্রাইজ পাওয়ার মত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ করেননি। ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন দুপক্ষকেই শান্ত করার জন্য তাদেরকে নরওয়েতে এনে গোপনে অসলো চুক্তি করিয়ে আর শান্তি পুরস্কার দিয়ে চুপ করানো হয়।

ঙ)১৯৯২ সালে গুয়েতেমালার রিগোবার্তা মেঞ্চুকে পুরস্কৃত করা হয় যেই মেঞ্চু ১৯৮১ সালে গুয়েতেমালা থেকে মেক্সিকোতে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে ‘আমি রিগোবার্তা মেঞ্চু’ শীর্ষক আত্মজীবনী লেখেন যেখানে তিনি গুয়েতেমালার জাতিগত বিভেদ, আদিবাসী-উপজাতিদের প্রতি শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়নের এক মেলোড্রামাটিক বর্ণনা উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে মার্কিন নৃতত্ত্ববিদ ডেভিড স্টোল ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধান,পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার মাধ্যমে সফলভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, আত্মজীবনীর বেশ কিছু তথ্য চরম অসঙ্গত, বিভ্রান্তিকর এবং নির্জলা মিথ্যা। ব্যাপক সমালোচনার মুখে নোবেল কমিটি তাদের নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথিত বক্তব্যকে ঘুরিয়ে সাফাই গায় এই বলে যে-শুধু নাকি ঐ গ্রন্থটির জন্যই তাকে নোবেল দেওয়া হয়নি এবং ডেভিড স্টোলের নাম নিয়ে বলা হয়,স্টোল নাকি মেঞ্চুর নোবেল বিজয় সমর্থন করেন ! ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশে কত দেশত্যাগী মানুষ রয়েছেন,অনেকেই সেই দুঃসহ স্মৃতির আবেগঘন হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়ে বই লিখেছেন,তাদের কাউকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হলোনা অথচ মেঞ্চু মেক্সিকোতে পালিয়ে একটি মিথ্যে তথ্যসংবলিত বই লিখেই নোবেল পেয়ে গেলেন।নোবেল কমিটির বিচারের প্রশংসা করতে হয় !

চ)১৯৭৯ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের মেনাশিম বেগিনকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয় শুধুমাত্র ইসরায়েল-মিশরের দ্বিপাক্ষিক শান্তিচুক্তির কারণে, কথিত আছে, দুজনেই ব্রিটিশ আমলে সহিংস আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।

ছ)১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে যৌথভাবে পুরস্কৃত করা হয় কুখ্যাত কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারকে যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছিলেন,পাকিস্তান সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বা ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস বলে বিদ্রূপ করেছিলেন,১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছেন, কম্বোডিয়ায় বোমাবর্ষণ ও দক্ষিণ আমেরিকায় অপারেশন কনডরের মত কুখ্যাত সামরিক অভিযানে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন। তার মত এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া শান্তি বিষয়টির প্রতিই চরম অবমাননা !
এবার আসা যাক ডঃ ইউনূস প্রসঙ্গে, ২০০৬ সালে ডঃ ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিতে যেয়ে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ডঃ ইউনূস অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন, বিল ক্লিনটনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়, আরো বলা হয়, ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে নোবেল কমিটি ইসলাম ও পশ্চিমের দূরত্ব হ্রাস করতে চায়। এছাড়া নারী ক্ষমতায়নের পথ সুগম করা ও বিশ্বব্যাপী দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অংশ হিশেবে ডঃ ইউনূস কে নোবেল কমিটি এ সম্মাননা প্রদান করছে ।
প্রশ্ন হলো, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে আমাদের দেশের মত এমন নিদারুণ দারিদ্র নেই, তাই দারিদ্র বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্রঋণের বিশেষ প্রয়োজনও নেই তবে ব্যবসা বাণিজ্যই যদি মূল উদ্দেশ্য হয় যার মূল লক্ষ্য থাকে মুনাফা অর্জন,তবে হাজারটা ক্ষুদ্রঋণদান প্রতিষ্ঠান খোলা তো যেতেই পারে। ক্ষুদ্রঋণ একটি মহাজনি ব্যবসা, সুদসহ আসল না পেলে মহাজন যেমন জমি ও বসতভিটা ক্রোক করে নেয়,তেমনি গ্রামীনব্যাংক কর্মকর্তারা ঠিক সময়ে সুদসহ আসল না পেলে জমিজমা-বসতবাড়ি-টিনের চালা,হাঁসমুরগী-গরুবাছুর-হাঁড়িপাতিল-আসবাবপত্র-নাক-ফুল-অলংকারাদি জোরপূর্বক নিয়ে যায় । এমনি অত্যাচারের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন দোহার থানার অভাগী রাবেয়া,দারিদ্রের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে ক্ষুদ্রঋণে সর্বস্বান্ত হয়ে মারা যান সুফিয়া,এরকম ভুরিভুরি উদাহরণ আমাদের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে আরো অনেক উদাহরণ জনগণের সামনে অচিরেই তুলে ধরতে যাচ্ছেন ডেনমার্কের নামকরা সাংবাদিক টম হেইনম্যান তার বহুল আলোচিত ‘Caught in microdebt’ প্রামাণ্যচিত্রে। প্রকৃতপক্ষে, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে গ্রামজনতার দারিদ্র যদি আসলেই বিমোচিত হতো,তাহলে তাদের পরনে নোংরা মলিন ছিন্ন পোশাক থাকতো না,ছেঁড়া গেঞ্জি লুঙ্গি ছেড়ে তারা প্যান্ট শার্ট ধরত,ছেলেমেয়েদের স্কুল-কামাই করে আর বাবার সঙ্গে ক্ষেতেখামারে হালচাষ করতে হতোনা,কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ এতদিনে ব্যবসাকেন্দ্রিক শিল্পপ্রধান দেশে পরিণত হতো।
দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেও রাষ্ট্রিক বা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর কোন সরাসরি (Direct) ভূমিকা নেই, রয়েছে পরোক্ষ (Indirect) ভূমিকা। দারিদ্র বিমোচিত হওয়ার পরেও জাতিগত কিংবা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিভেদের কারণে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। ভিয়েতনামের লি ডাক থো শান্তিতে নোবেল পেয়েও দৃঢ়চিত্তে তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন,“There is still no peace in Vietnam”। ডঃ ইউনূস যদি ওনার মতোই সৎ ও নিষ্ঠাবান বড়মাপের মানুষ হতেন তো নোবেল প্রত্যাখ্যান করে বলতেন,স্যরি, বাংলাদেশে এখনো শান্তি আসেনি আর দারিদ্রও বিমোচিত হয়নি। কিন্তু ডঃ ইউনূস দেশ ও মানুষের কথা কোনদিন ভাবেননি, ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রাপ্তি তথা বিপুল বিত্ত অর্জন করাই তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান-ভাবনা,তাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পুরস্কার নিতে চলে গিয়েছিলেন নরওয়েতে। ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার পর লোক দেখানোর জন্য আর সমালোচনা থেকে বাঁচতে একবার মাত্র শহীদ মিনারে ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, জীবনে আর কোনদিন যাননি।
চিত্রঃ ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তিঃ শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র জমা দিলেন সন্তু লারমা ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭
দারিদ্র দূরীকরণের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার দূরসম্পর্ক থাকলেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অবসানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য আদিবাসী ও উড়ে এসে জুড়ে বসা বাংলাদেশীদের মধ্যে ১৯৭৩-১৯৯৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যখন শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি কমিটির চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে সই করেন। চুক্তিতে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা দান, আর্মি প্রত্যাহারকরণ এবং জমিজমা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, বিগত সরকারগুলো যেখানে বাঙালি অভিবাসন, আর্মি নিয়োজিতকরণ ও জমিজমা দখলের প্রতি আর্মি ও বাঙালি অভিবাসীদের উস্কানি ও মদদ দিয়ে যাচ্ছিল,যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের আলাদা জাতিসত্ত্বার প্রশ্নে বিরোধী ছিলেন, সেখানে তারই কন্যা হয়ে অদম্য সাহস ও সত্যিকারের ইচ্ছে থেকে পার্বত্য সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নেন শেখ হাসিনা। এই শান্তিচুক্তির ফলে ৭০০০০ সশস্ত্র পার্বত্য আদিবাসী অস্ত্র জমা দিয়ে ফেরারি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে,পুরোপুরি না পেলেও কিছু জমিজমা ফেরত পায়,আর্মি ও বাঙালি অভিবাসীদের মধ্যে পূর্বেকার পরিসরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়না,অর্থাৎ কিছুটা হলেও সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। এই ব্যাপারগুলো কিন্তু ৩৫ বছরের (১৯৭৬-২০১১) তথাকথিত দারিদ্র বিমোচনের মত কাঁঠালের আমসত্ত্ব নয়,১৯৯৭-২০১১ পর্যন্ত ১৪ বছরে বাঙ্গালি-আদিবাসীদের মধ্যে কিছু সংঘর্ষ হয়েছে কিন্তু কখনোই তেমন বড়মাপের উল্লেখযোগ্য কোন সংঘর্ষ হয়নি, অর্থাৎ শান্তিচুক্তি কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। ডঃ ইউনূস মধ্যবিত্ত শিক্ষক থেকে সুদের রমরমা ব্যবসা করে আজকে বিপুল বিত্তবান হয়েছেন, কিন্তু গরীবের অবস্থার উন্নতি হয়নি, তার মানে বিপুল অর্থ দিয়ে কিনতে হয়েছে ডঃ ইউনূস প্রচারিত দারিদ্র দূরীকরণের আফিম, সেই মাদকের মাদকতায় বিভ্রান্ত সহজসরল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই অমানুষিক হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে ঋণ শোধ দিয়ে কোনমতে বেঁচে আছে আবার কেউ চরম মূল্য দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিপরীতে এই শান্তিচুক্তির ফলে শেখ হাসিনার সিন্দুক কিন্তু ডঃ ইউনূসের মত ফুলেফেঁপে ওঠেনি, কেউই সর্বস্বান্ত হয়নি উল্টো শেখ হাসিনাই অনেক বাঙালি অভিবাসীদের বিরাগভাজন হয়েছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশকিছু ভোট হারিয়েছেন। শেখ হাসিনার শান্তি প্রতিষ্ঠা ডঃ ইউনূসের মত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়। ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন-মিশরের শান্তিচুক্তি একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে, তবুও ইয়াসির আরাফাত, ইযহাক রাবিন, শিমন পেরেজ, মেনাশিম বেগিন ও আনোয়ার সাদাতেরা নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন, অথচ পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুরোপুরি সফল না হলেও একেবারেই ব্যর্থ হয়নি, সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমা নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাবেন না কেন ?

চিত্রঃ জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ১৯৯৯ সনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক সেরেস এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে

দারিদ্র বিমোচন যদি শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অংশ হয়, তবে গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছরের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটে ১২ই ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে, যখন শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা পানিচুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেন। ১৯৮২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ পানিই পাচ্ছিল না, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিরাজ করতো চরম খরা, সেচকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি না পেয়ে বছরের অনেকটি সময় কৃষকদের বসে থাকতে হতো,পরিবারে বিরাজ করতো চরম দারিদ্র,এখনো দারিদ্র সম্পূর্ণ বিমোচিত না হলেও আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে আছে কৃষকসমাজ,শেখ হাসিনা তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এবং তারা পর্যাপ্ত ফসল ফলানোর মাধ্যমে নিজেদের চরম দারিদ্র কিছুটা হলেও বিমোচনে সমর্থ হয়েছে , খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সেরেস এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

হাতের ৫টি আঙুল সমান হয়না,তাই ৭০-৮০% দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিপরীতে ২০-৩০% সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিকদের কথা আমরা বলিনা, চোখ বন্ধ করে ঢালাওভাবে রাজনীতি খারাপ, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী খারাপ বলে গালমন্দ করি। প্রশ্ন হলো,আমরা শিক্ষিত জনগণেরা নিজেরা কতটুকু সৎ ও নিষ্ঠাবান, আমরা কি দুর্নীতি একেবারেই করিনা ? বঙ্গবন্ধু একটি কথা বলেছিলেন, দুর্নীতি আমাদের দেশের গরীব কৃষক সমাজ করেনা, দুর্নীতি করে আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকজন। আসলেও তাই, সামান্য একটু বিদ্যে অর্জন করেই আমরা আজকে নিজেদেরকে বড় বিদ্বান বলে মনে করি, স্বল্পজ্ঞান দিয়ে যুক্তির ধার না ধেরে আবেগিকভাবে পত্রপত্রিকায় ও ব্লগে নিজেদের মনমত যা খুশি তাই লিখে আমরা আমাদের সুবিধাবাদী ও স্বার্থবাদী চরিত্রটাই প্রকটিত করে তুলি। আমাদের দেশের চাকুরীজীবীরা ঘুষ খান এবং ঘুষ দেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ছলেবলে কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে মার্কেট থেকে বিরাট অংকের টাকা লুটে নেন, আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগ আসলে আওয়ামী লীগের ধামা ধরেন, বিএনপি আসলে বিএনপির ধামা ধরেন, মন্ত্রি্গণ নিশ্চয়ই কিছু না কিছু দুর্নীতি করেন, কিন্তু মন্ত্রীরা তো হাতে গোণা কজন, অফিস আদালত কোর্ট কাছারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজন বসেন, তারা কি ধোঁয়া তুলসীপাতা ? তবুও আমরা একতরফাভাবে রাজনৈতিক নেতাদেরই শুধু দোষ দিয়ে যাই, আমরা শিক্ষিত শ্রেণীরা নিজেরাও যে একই দোষে দুষ্ট সেটা খেয়াল করিনা। কৃষক সমাজ কিন্তু ঘুষ খায়না, কারণ তাদের পেশায় ঘুষের বিষয়টিই নেই, কৃষকসমাজ পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেনা, ব্লগে উদ্ভট কথাবার্তা লিখে রাষ্ট্র ও সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেনা, কৃষকসমাজ সরকার বদলের সাথে সাথে আমাদের মত কায়েমি স্বার্থবাদী সুবিধাবাদী চরিত্রটি প্রকটিত করেনা। রাজনীতিকদের যেমন দোষ আছে,আমাদেরও তেমনি অনেক অনেক দোষ আছে।

এবার দেব উইকিলিকসের মতোই সাড়া জাগানো একটি খবর,বিল ক্লিনটনের পেছন থেকে সমর্থন থাকলেও ডঃ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর তথা গ্রামীনফোনের ব্যবসায়িক পার্টনার টেলিনরের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা, ডঃ ইউনূসের বিশিষ্ট বন্ধু স্টেইন টোনেসন যিনি ডঃ ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী করার পেছনে তদবির করেন। উল্লেখ্য যে, টেলিনর নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রধান স্পনসর। এই টেলিনরের আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমেই উনি ঘনঘন নরওয়ে সফরে যেতেন।

পরিশেষে আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেব যে নোবেল শান্তি পুরস্কার একটি চরম ভিত্তিহীন পুরস্কার। অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রবক্তা বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা এবং বাপু নামে পরিচিত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। গান্ধীর মত এত বড় সমালোচনাহীন শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন না আর সেখানে অখ্যাত কুখ্যাত অনেক ব্যক্তিই নোবেল পেয়ে গেলেন,বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ন্যূনতম ভিত্তি নেই।


চিত্রঃ জাতিসংঘের ইউনেস্কোর সম্মানসূচক শান্তি পুরষ্কার হাতে শেখ হাসিনা

বিডিআর বিদ্রোহের সময় আর্মি যখন ফুসছিল, প্রতিশোধের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো, তখন শেখ হাসিনা তাদের ধৈর্য ধরতে বলেন, আত্মসংবরণ করতে বলেন, খুনের বদলে খুন যে সঙ্গত নয় এবং শান্তি রক্ষার পথে প্রতিবন্ধক, তা দেশের সামরিক বাহিনীকে বোঝাতে সক্ষম হন। সহিংস দমননীতি প্রয়োগ না করে মহাত্মা গান্ধীর মত অহিংস নীতি অবলম্বন করে বিডিআর বিদ্রোহের মত চরম একটি নাজুক পরিস্থিতি বিনা রক্তপাতের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। এই যে তার অহিংস নীতি অবলম্বন, এটা শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক কিনা, জানাবেন। আর বিদেশী মানে তো শুধু কিছু পুঁজিবাদী দেশ নয়, বিদেশী মানে তো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও, দেখুন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ইউনূস নিয়ে মাতামাতি নেই, কমিউনিস্টপন্থী নব্যশক্তি চীনে ইউনূস নিয়ে মাতামাতি নেই। ভারতে ইউনূস নিয়ে মাতামাতি নেই, শুধু আমেরিকা ফ্রান্স আর জাপানই সব নয়, চীন এবং ভারতে তাদের চেয়েও বেশি জনসংখ্যা এবং ২টি দেশের ইউনূসের বিন্দুমাত্র জনপ্রিয়তা নেই। জাতিসংঘের কাছেও ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমেরিকা চায়, তার স্বার্থ চরিতার্থ করতে ইউনূসকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসাতে, যাতে আমেরিকার অনুগ্রহে কৃতজ্ঞ ইউনূস দেশের যাবতীয় তেল গ্যাস ও অন্যান্য রিসোর্স আমেরিকায় ধীরে ধীরে পাচার করে দেন। আমেরিকা সকল দেশের তাদের নিজস্ব লোকজনকে সরকারে বসিয়ে ঐ দেশগুলোকে একপ্রকার কলোনী বানিয়েই ফায়দা লোটে, যেমন ইসলামের সূচনা হয়েছিল যেই দেশে, সেই দেশ সৌদি আরব এখন আমেরিকারই তাঁবেদারি করে চলে, আমেরিকা যেভাবে বলে সেভাবে করে। আশা করি, পরিষ্কার হয়েছে ক্যাপিটালিস্টদের উদ্দেশ্য।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেছনে বিল ক্লিনটন/টেলিনর/স্টেইন টোনেসন/পুঁজিবাদী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা না থাকলেও তিনি দুই -দুই বার জাতিসংঘের ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার ও খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সেরেস এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, এছাড়াও পেয়েছেন ভারত সরকারের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার,নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরস্কার, মাদার তেরেসা পুরস্কার। এগুলো আমাদের চোখে পড়েনা কেননা মুহাম্মদ ইউনূসের মতন শেখ হাসিনা এগুলো বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়াননি, শেখ হাসিনার ডিগ্রীগুলো যদি লবিং করে প্রাপ্ত বলে অভিযোগ ওঠানো হয়, তাহলে সেই বিচারে মুহম্মদ ইউনূসের লবিং পাওয়ার তো আরো অনেক বিশাল বিস্তৃত, বিল ক্লিন্টন, হিলারী ক্লিনটন, বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর মারকেল, স্পেনের রাণী সোফিয়া, জাপান ও ফ্রান্স সরকার, আইএমএফ, স্টেইন টোনেসন, টেলিনর, নরওয়ে সরকার কেউই তো বাদ নেই। অর্থমূল্যে কিংবা প্রচারণার ভিত্তিতে জাতিসংঘের পুরষ্কারগুলো কম হতে পারে, কিন্তু একথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, নোবেল কমিটি থেকে জাতিসংঘ অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান আর আলফ্রেড নোবেল কিংবা জ্ঞানী-গুণীজন কিন্তু নোবেল পুরস্কার দিচ্ছেন না,দিচ্ছেন কিছু রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং ফিজিওথেরাপিস্টরা। নোবেল শান্তি পুরস্কার রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই তার ফ্যাক্টস এন্ড ফাইলস ৫০ বছরের পর্যন্ত গোপন রাখা হয় যাতে তাদের ভুলভ্রান্তি এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিপ্রীতি নিয়ে কেউ সমালোচনা কিংবা প্রশ্নের উদ্রেক করতে না পারে। এটর্নি জেনারেল মহবুবে আলম শুধু দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমার নোবেলপ্রাপ্তির দাবীটি করেছেন,কিন্তু দলীয় দৃষ্টিকোণকে একেবারেই বাইরে রেখে উপরিউক্ত যুক্তি ও তথ্য প্রমাণাদির বিচারে শেখ হাসিনার নোবেলপ্রাপ্তির দাবী কি ডঃ ইউনূস বা অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত নয় ? যারা মনে করেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেলপ্রাপ্তির কারণে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হয়েছে, যারা নোবেল পুরষ্কারকেই দেশ ও জাতির সম্মানবৃদ্ধির ও সমৃদ্ধির মাপকাঠি বলে মনে করেন, সেই যুক্তি থেকেই তারা যেন এবার নোবেল কমিটি ও বিশ্ববাসীর কাছে শেখ হাসিনার জন্য নোবেল পুরষ্কারের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মত নোবেল বিজয়ী দেশের সম্মানে সম্মানিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান কেননা, সবার আগে বাংলাদেশ এবং উপরিউক্ত আলোচনা থেকেই সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়, দুবারের জাতিসংঘ পুরষ্কার বিজয়ী শেখ হাসিনা নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন যোগ্য ব্যক্তি। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা কখনোই ব্যক্তিগতভাবে নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাশা করেননি এবং করবেনও না, কেননা তিনি শেখ হাসিনা, মুহাম্মদ ইউনূস নন, যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডঃ হুমায়ুন আজাদ এবং তসলিমা নাসরিন এবং আইসিডিডিআরবি ব্যতীত শেখ হাসিনাই নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য দাবীদার।
শেখ হাসিনা চারটি শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন যা দুনিয়ার অনেক শান্তিকামী ব্যক্তিত্বও পাননি এবং পুরষ্কারগুলো পেয়েছেন নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে।
১) জাতিসংঘের ২ টি পুরষ্কার পেয়েছেন (শান্তিতে ১ টি)
২) ভারত সরকারের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরষ্কার (শান্তি)
৩) মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরষ্কার (শান্তি)
৪) মাদার তেরেসা পুরষ্কার (শান্তি)
৫) নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরষ্কার
৬) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অবসানে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে শান্তিতে অবদান রাখা
৭) পানিচুক্তি করে যত কমই হোক, পানির কিছুটা হিস্যা আদায়, কৃষক সমাজের স্বস্তি
৮) ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা
৯) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করা
১০) জলবায়ু সম্মেলনে ভিক্ষুকের মত বাংলাদেশ সহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দরিদ্র দেশের জন্য সহযোগিতার দাবী আপোষহীনভাবে উত্থাপন করা ও আদায় করা
১১) সম্পূর্ণ রক্তপাতহীনভাবে মহাত্মা গান্ধীর মতই অহিংসনীতি অবলম্বন করে বিডিআর বিদ্রোহ দমনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় অবদান রাখা
সুতরাং নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্তিতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি যোগ্যতা রয়েছে শেখ হাসিনার। যদিও উনি কোনদিন পুরষ্কার প্রত্যাশী ছিলেন না, তবে গুণীর কদর করা উচিত, এদেশে গুণীর কদর হয়না, তাই হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন, শেখ হাসিনা রা অবজ্ঞাত ও সমালোচিত থেকে যান, বিদেশের গুণীদের কদর হয় বলেই বিদেশী সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা তসলিমা নাসরিনদের গুণের কদর ঠিকই করেন। ১১ টি যুক্তি অনেক বেশি হয়ে যায়, ১১ টি যুক্তি না থেকেও অনেকেই নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন, শেখ হাসিনা তাদের থেকে নিশ্চিতভাবেই যোগ্যতর। আর মুহাম্মদ ইউনূস শুধু তার বন্ধুবান্ধবদের তদবিরে নোবেল পুরষ্কারই পেয়েছেন, অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শান্তি বিষয়ে কোন পুরষ্কারই পাননি। এখানেই পার্থক্য শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূসের।
২টি বিষয়ঃ ২ টি বিষয় রয়েছেঃ ১) তত্ত্বীয় বা যৌক্তিক ভাবে কি হওয়া উচিত ২) বাস্তবতার নিরিখে ফলিতভাবে কি হওয়া উচিত
যেহেতু, আমার আর্টিকেল থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, নোবেল শান্তি পুরষ্কারের ন্যূনতম ভিত্তি নেই, সেহেতু তত্ত্বীয় বা যৌক্তিক বিচারে, শেখ হাসিনার নোবেল পাওয়ার দরকারই নেই এবং শেখ হাসিনা নোবেল প্রাপ্তির জন্য কখনোই উন্মুখ ছিলেন না বা ইউনূস সাহেবের মত তদবির করেননি। শেখ হাসিনা কোনরূপ তদবির ছাড়াই জাতিসংঘের ২ টি পুরষ্কার পেয়েছেন, ভারত সরকারের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন, শান্তিপ্রিয় দুজন ব্যক্তিত্ব ক) মহাত্মা গান্ধী খ) মাদার তেরেসা পুরষ্কার পেয়েছেন, নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরষ্কার পেয়েছেন, আসলেই তো, শেখ হাসিনার আর কী পুরষ্কার পাওয়া দরকার ?
আবার, যেহেতু মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে, সেহেতু ফলিত দিক থেকে বা বাস্তবতার নিরিখে একই যুক্তি অনুসারে শেখ হাসিনাকেও নোবেল পুরষ্কার দেওয়া উচিত, জাতিসংঘের ২ টি পুরষ্কার বিজয়ী ব্যক্তির নিশ্চয়ই নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কেননা তার পেছনে স্বয়ং জাতিসংঘের সার্টিফিকেট (পুরষ্কার) আছে।
আর নোবেল কমিটির সংস্কার প্রয়োজন, সুইডিশ কর্তৃপক্ষ কিন্তু তেমন বিতর্কের সম্মুখীন হয়নি (এরা শান্তি ব্যতীত বাকি বিষয়গুলোতে নোবেল প্রদান করেন), বিতর্কিত ব্যক্তিদের পুরষ্কার দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার নরওয়ে সরকার। তাই সুইডিশ কর্তৃপক্ষের উচিত নরওয়ে সরকারকে এই পুরষ্কার প্রদান থেকে বরখাস্ত করে নিজেদের হাতে এর দায়িত্ব তুলে নেওয়া, তখন যোগ্যতার কদর হবে বলে আশা করি এবং সেদিক থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অন্যতম যোগ্য ব্যক্তি।

নরওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রহসনমূলক সিস্টেমে শেখ হাসিনার নোবেলপ্রাপ্তির কোন প্রয়োজনই নেই।

dr_mushfique@yahoo.com


তথ্যসূত্রঃ

১) নোবেল শান্তি পুরষ্কার কমিটি ও ইন্সটিটিউটের সদস্যদের অখ্যাতি ও সাধারণত্ব

২) বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন নোবেল পুরষ্কারের নমুনা

৩) বারাক ওবামার নোবেলপ্রাপ্তি বিতর্ক ও বিবিসির রিপোর্ট

৪) আল গোরের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

৫) ওয়াঙ্গারি মাথাইয়ের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

৬) ইয়াসির আরাফাত, ইযহাক রাবিন ও শিমন পেরেজের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

৭) রিগোবার্তা মেঞ্চুর নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

৮) আনোয়ার সাদাত ও মেনাশিম বেগিনের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

৯) হেনরী কিসিঞ্জারের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক

১০) মুহাম্মদ ইউনূসকে নোবেলপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ইসলাম-নারী ও দারিদ্রকে টেনে নোবেল কমিটির অজুহাতসমূহ

১১) নামকরা রিপোর্টার টম হেইনম্যানের প্রামাণ্যচিত্রের বাংলা ভার্শন (Caught In Micro Debt)

ক) আপলোড করা হচ্ছে, অতিশীঘ্র লিংক দেওয়া হবে

১২) লি ডাক থো-র নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান

১৩) শুধুমাত্র ২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূসের স্মৃতিসৌধ এবং শহীদমিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ (ছবিতে তারিখ দেখুন)

ক) http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=15416 (কমেন্ট অংশের মধ্যভাগে)

১৪) পার্বত্য শান্তি চুক্তিঃ বাঙালি ও পাহাড়ি আদিবাসীদের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি ও সৌহার্দের মাইলফলক

১৫) গঙ্গা পানিচুক্তিঃ ভারত বাংলাদেশের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সমস্যার অবসান

১৬) দুর্নীতিতে লাগাতার পাঁচ বছরের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে গেলে জনসংখ্যার বিপুল অংশের সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন

ক) http://taiyabs.com/2009/12/25205

১৭) ইউকিলিকসের মতই গ্রামীন-লিকসঃ ডঃ ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী করার মূল তদবিরকারী স্টেইন টোনেসন

১৮) স্টেইন টোনেসনের টেলিনর ও আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা

১৯) নোরাডকে সম্ভাব্য বিপদের কথা জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা গোপন চিঠি

২০) টেলিনর নোবেল শান্তি পুরষ্কারের প্রধান স্পনসর তথা মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যবসায়িক পার্টনার

২১) নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী হিসেবে মহাত্মা গান্ধী অবজ্ঞাত ও নোবেল কমিটির অজুহাত

২২) বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাপ্ত পুরষ্কারসমূহ

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

ব্লগটি যতবার দেখা হয়েছে

আমাদের এই বসুন্ধরা

Locations of Site Visitors