এই ব্লগটি সন্ধান করুন

পৃষ্ঠাসমূহ

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড সময়

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১১

প্রসঙ্গঃ নারী স্বাধীনতার অন্তরায় বোরকার স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুপ্রভাব

আসুন শুরুতেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক নিম্নোল্লেখিত সংবাদটির দিকে -

হাইকোর্টের রায়, ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৪-১০-২০১০

কোনো ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত রায়ে বলেছেন, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এটি পঞ্চম সংশোধনী রায়ের মাধ্যমে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। কাজেই কোনো ব্যক্তিকে কোনোভাবেই ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না। এটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। প্রত্যেক নাগরিকেরই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন ও ধর্মীয় পোশাক পরিধানের অধিকার রয়েছে। এর আগে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের কোনো দপ্তরে নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে মেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত না রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে এ আদেশ দিয়েছিলেন।
<--break->
জানা যায়, গত ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে ‘নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজ, বোরকা না পরলে আসতে মানা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব শফিক ও কে এম হাফিজুল আলম। তাঁরা বলেন, পোশাক নির্বাচন করা ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। এ ব্যাপারে জোর করা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়াও বৈষম্যমূলক। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারিসহ অর্ন্তবর্তীকালীন নির্দেশ দেন।

সূত্রঃ
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=137805&hb=2
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-04/news/98732


ফ্রান্সে বেশ কিছুদিন আগে বোরকা পরিধানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । আমাদের দেশে এটি ব্যান না করা হলেও অন্তত এটি পরতে কাউকে বাধ্য করা যাবেনা- এমনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ভাবতে ভালোই লাগে, আমাদের বাংলাদেশ ধর্ম ও মৌলবাদের হিংস্র থাবায় আক্রান্ত হওয়ার পরও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এমন প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা রয়েছে । এই বোরকা এবং তার সমূহ ক্ষতি বা কুফল নিয়েই আজকে আমার কলাম ।
ইসলামী পরিভাষায়, বোরকা হলো নারীকূলের ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য পাবলিক প্লেসে অবশ্য পরিধেয় এমন একটি বহিঃপোশাক যার তিনটি অংশ রয়েছে –

ক) জিবাব-একধরনের ঢিলে বডি কভারিং, যা শরীরকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখে ।
খ) হিজাব – একধরনের হেড কভারিং, যা মাথার চারপাশ ঢেকে রাখে ।
গ) নেকাব – একধরনের ফেসিয়াল কভারিং, অর্থাৎ মুখমণ্ডলী ঢেকে রাখে ।


সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Burqa

সুরা আল আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে এমন পোশাকের স্বপক্ষে বলা হয়েছে –



সুরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে –




চিত্রঃ পাশাপাশি অবস্থিত দুজন নারীকে দেখুন – তাহলে বুঝতে পারবেন বোরকা কতটা কিম্ভূতকিমাকার একটি পোশাক


কোরান শরীফে যাই বলা থাকুক না কেন, বোরকা পরিধান করা শারীরিক, মানসিক,আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সুনিশ্চিত ক্ষতির কারণ । বোরকা পরিধান করা নারী স্বাধীনতার চরম পরিপন্থী। নারী – সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই বোরকা পরিধান রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যান করা উচিত, যেমনটি ফ্রান্স সরকার করেছে । চলুন দেখে নেওয়া যাক, বোরকা কিভাবে ব্যক্তিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করে -

স্বাস্থ্যগত ক্ষতি:

ক) শিশুদের রিকেটস, প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাশিয়া, ব্যাক পেইন এবং অস্টিওপরোসিস

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে এবং প্রবাসী মুসলিমদের মধ্যে বোরকা নিয়ে কিছু চরম ভুল ধারণা মাথায় ঢোকানো হয়েছে ।এই মিথ্যেগুলো মুসলিম বিশ্বে এমনভাবে গণহারে প্রচার করা হয়েছে যে অনেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞান এবিষয়ে কি বলে তা আগেপিছে না ভেবেই এসব মিথ্যেগুলোকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেয় । আসুন দেখি বোরকা এবং তার সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত মিথ্যেগুলো নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান কি বলে –

প্রতিষ্ঠিত মিথ্যেঃ পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা অনেক কম ।(বোরকা পরিহিতা নারীরা ভিটামিন ডি পায়না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে)

সত্যঃ একেবারেই মিথ্যে কথা । বরং নারীদের শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি কেননা,
গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ করে শিশুর হাড় তৈরী হওয়ার সময়ে ভিটামিন ডি (ও ক্যালসিয়াম)মায়ের শরীর থেকে খরচ হয়ে যায় ফলে, সেই ভিটামিন ডি শুন্যতা পূরণ করতে সূর্যালোকে বেশ কিছু সময়ের জন্য অবস্থান খুবই জরুরী ।

লিংকঃ http://www.cnn.com/2010/HEALTH/04/30/vitamin.d.pregnancy/index.html

প্রতিষ্ঠিত মিথ্যেঃ অতিরিক্ত ভিটামিন ডি নারীদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বোরকা পরিধানের ফলে নারী-শরীর সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পায় যেটি তাদের শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি উৎপাদন রোধ করে।

সত্যঃ অতিরিক্ত যে কোন কিছুই ক্ষতিকর, তবে বোরকা পরিধান, গর্ভবতী হওয়া ও অন্যান্য কারণে নারীর শরীরে এমনিতেই ভিটামিন ডি’র চরম অভাব, তাই সেখানে সূর্যালোকে একটানা অনেকক্ষণ থাকলেও হাইপারভিটামিনোসিস ডি হওয়ার সম্ভাবনা নেই । এটি ঘটে সিন্থেটিক ভিটামিন ডি’র অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ।
Note: Hypervitaminosis D symptoms appear several months after excessive doses of vitamin D are administered
লিংকঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Hypervitaminosis_D

প্রখ্যাত পুষ্টিবিদ অ্যাডেল ডেভিস বলেন –
Osteomalacia this disease its name literally means bad bones… results primarily from a severe vitamin-D deficiency. Arabian and Indian women who keep themselves havily veiled frequently develop such painful backs that they can scarcely rise, and they suffer multiple spontaneous fractures and have extremely rarefied bone, all of which clears up dramatically when vitamin D is given them.”(Davis, Let’s Get Well, p.256.)
অর্থাৎ, আরবীয় ও ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে যারা বোরকা পরিহিতা বা নিজেদেরকে বেশ করে আবৃত করে রাখেন, তাদের মধ্যে অস্টিওম্যালাশিয়া বা ব্যাড বোন তথা কোমর ব্যথা এবং স্বতঃস্ফূর্ত বোন ফ্র্যাকচারের প্রবণতা বেশি ।
তিনি তার আরেকটি গ্রন্থে বলেন –
Sir Robert McCarrison, the great English physician, wrote of osteomalacia in India among the Mohammedan women observing the custom of purdah. These women veil their faces at adolescence and rarely go outside their homes.” (Let’s Eat Right to Keep Fit (140)
অর্থাৎ মুসলিম নারীদের মধ্যে অস্টিওম্যালাশিয়ার হার বেশি ।

একইভাবে নামকরা চিকিৎসক ওপি কাপুর তার Deficient sunlight in the aetiology of oseromalacia in muslim women গ্রন্থে বলেন –
In most of the Sunni Muslim women (who form majority of the muslims), in spite of high intake of calcium, osteomalacia is often seen. There are two reasons for this:
1. Use of burkha which prevent sunlight reaching the skin.
2. Living indoors- most of the muslim women specially those staying in the muslim localities, do not move out of the house and thus are not exposed to the sun and often develop osteomalacia.
সূত্রঃ http://www.islam-watch.org/index.php?option=com_content&view=article&id=62:veiling-of-muslim-women-vitamin-d&catid=81:acharya&Itemid=58

ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডার মত শীতপ্রধান দেশগুলোতে মুসলিম ইমিগ্র্যান্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, শীতপ্রধান দেশগুলোতে সূর্যালোকের ইনটেনসিটি বা প্রাবল্য কম বলে সেই সকল দেশে সূর্যালোকে বেশিক্ষণ থাকার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এজন্যই ‘সান বাথ’ –সেসব দেশে একটি কমন ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে । এমন দেশগুলোতে মুসলিম নারীরা বোরকা পরে থাকলে তাদের সমূহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতি । আয়ারল্যান্ডে বোরকা পরিহিতা মুসলিম নারীদের প্রসঙ্গে ডঃ মিরিয়াম ক্যাসি বলেন-
In Ireland, which is experiencing a large influx of muslim immigrants at the moment, women wearing the burqa, doctors are warning, ‘are at increased risk of pelvic fractures during childbirth because of vitamin D deficiency due to a lack of sunlight. “And babies born to women with vitamin D deficiency are also more prone to seizures in their first week of life,” according to Dr Miriam Casey, expert in Medicine for the Elderly at the Osteoporosis Unit in St James’s hospital in Dublin. The burqa – an all-enveloping outer garment, does not allow enough sunlight through to give women sufficient vitamin D, she warns.
সূত্রঃ http://www.digitaljournal.com/article/272307#ixzz1Rv2oEH00

ইমিগ্র্যান্ট মুসলিম নারীদের মধ্যে যে ভিটামিন ডি-র চরম অভাবজনিত সমস্যা বিরাজমান সে সম্পর্কে বিস্তারিত -
There concern arises when these women migrate to countries with lower amounts of sunlight throughout the year compared to their previous home country. Skin tone is darkest at the equator in response to the sunlight.Darker skin blocks out significantly more UV radiation and hence decreases Vitamin D production by an enormous amount (people with dark skin pigmentation may need 20 – 30 times as much exposure to sunlight). All these factors combined with the heavily covering Islamic dress create serious potential health concerns for Islamic migrants in countries away from the equator such as Canada, the United States, Europe and Australia.
সূত্রঃ

Hagenau, T., et al., Global vitamin D levels in relation to age, gender, skin pigmentation and latitude: an ecologic meta-regression analysis. Osteoporosis International, 2009. 20(1): p. 133-140.

Hanley, D.A. and K.S. Davison, Vitamin D Insufficiency in North America. The Journal of Nutrition, 2005. 135(2): p. 332-337

সর্বাধিক আরব-আমেরিকান জনগোষ্ঠীপূর্ণ এলাকা মিশিগানের ডিয়ারবর্নে চালানো একটি সার্ভে থেকে দেখা যায় –

A study was undertaken in Dearborn, Michigan, the most-concentrated Arab-American settlement in the United States to assess the relationship between Vitamin D levels and Islamic dress choice in migrant Arab-American Muslim women. The average vitamin D level was found to be 4 ng/ml in veiled women who undertook no vitamin D supplementation and 7 ng/ml in women who wore the same style veil but chose to take supplements.[17] The threshold for rickets and osteomalacia risk is 8 ng/ml and below; clinical deficiency is considered as anything below 16 ng/ml

অর্থাৎ রিকেটস এবং অস্টিওম্যালাশিয়ার ঝুঁকি মুসলিম নারী ও শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ।

সূত্রঃ Heaney, PR. Functional indices of vitamin D status and ramifications of vitamin D deficiency. American Journal of Clinical Nutrition 2004; 80 : S1706 – S1709

যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পত্রিকার রিপোর্ট দেখি চলুন –

People may be at risk if they are South Asian, African or African-Caribbean and have low exposure to sunlight, for example if they observe Hijab or do not spend much time outside.

দক্ষিণ এশিয়ান, আফ্রিকান এবং ক্যারিবিয়ান আফ্রিকান মুসলিম নারীদের জন্য সূর্যালোক অপরিহার্য, কেননা তাদের মধ্যে সূর্যালোক এক্সপোজারে অনীহা রয়েছে এবং তারা বোরকা-হিজাব পরিধান করে ।

সূত্রঃ http://www.dailymail.co.uk/news/article-469196/Women-hijabs-need-sunlight-risk-illness.html

Breastfeeding is recommended for all babies, however a baby may be at risk if breast-fed and the mother has a low vitamin D level herself.

স্তন্যপান সকল শিশুর জন্য অপরিহার্য এবং সেই সকল শিশুর শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি যাদের মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি কম পরিমাণে রয়েছে ।

vitamin D helps calcium get absorbed from the intestine and pushes the calcium into the bone.

ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের আন্ত্রিক শোষণ ও হাড় কর্তৃক শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই বোরকা পরিহিতা নারীদের এবং তাদের শিশুদের হাড়ের বিকাশ ও গড়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে হয়না এবং পরবর্তীতে তাড়া হাড়জনিত সমস্যায় ভোগে ।

মুসলিম নারীদের মধ্যে বোন টার্ন ওভারের সমস্যা অনেক বেশি । অস্ট্রেলিয়ার মেডিক্যাল জার্নালে একটি ক্রস সেকশনাল স্টাডির রিপোর্ট দেখি চলুন –
Eighty-nine (75%) were veiled and 50 (42%) stated that they were exposed to more than 60 minutes of sunlight per week.
১) Eighty-one women (68.1%) showed evidence of “severe” vitamin D deficiency
২) Fifty-five (46.2%) Muslim women were found to have elevated urinary DPYD excretion rates.
৩) Hyperparathyroidism occurred in 46 (38.6%) women.
সূত্রঃ http://www.mja.com.au/public/issues/177_03_050802/dia10809_fm.html

আশ্চর্যজনকভাবে, পৃথিবীর সবচেয়ে সূর্যালোক প্রবণ অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যে রিকেটস ও অস্টিওম্যালাশিয়ার হার খুব বেশি, এর পেছনে কারণ বোরকা পরিধান । বিশিষ্ট চিকিৎসক ও গবেষক মাইকেল হোলিকের রিপোর্ট বলে-
Remarkably, in the sunniest areas of the world, rickets is a major health problem. Because of the practice of purdah or wearing a burka , avoidance of exposure of any skin to sunlight, and the fact that few foods are fortified with vitamin D, upward of 35–80% of children in Saudi Arabia
সূত্রঃ Resurrection of vitamin D deficiency and rickets  http://www.jci.org/articles/view/29449/version/1

সৌদি আরবে বোরকা এবং হিজাব বাধ্যতামূলক, সেখানে কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে কতিপয় নারীর ওপর চালানো সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায় –

A study performed by doctors at King Fahd University Hospital in Saudi Arabia, showed that out of all 52 women tested, all had seriously deficient levels of Vitamin D and were at risk of many serious health problems, despite living in one of the sunniest places on the planet.

সূত্রঃ Elsammak, M.Y., et al., Vitamin D deficiency in Saudi Arabs. Hormone and Metabolic Research, 2010. 42(5): p. 364-368.

In a study undertaken in Jordan, 83.3% of women wearing the most covering style of Islamic dresses were found to be deficient in summer time. This is rather striking when compared to the fact only 18.2% of Jordanian men studied were found to be deficient.

মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দেশ জর্ডানে চালানো সার্ভেতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৮৮.৩ % হিজাবী ও বোরকা পরিহিতা মহিলা ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন । অথচ, সূর্যালোকে অবস্থান করার কারণে মাত্র ১৮.২ % পুরুষের ভিটামিন ডি’র অভাবজনিত সমস্যা রয়েছে ।

সূত্রঃ Mishal, A.A., Effects of Different Dress Styles on Vitamin D Levels in Healthy Young Jordanian Women. Osteoporosis International, 2001. 12(11): p. 931-935

জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্সের রিপোর্টঃ

1)Rickets upsurge among UK Asians
2)Middle Eastern women may have vitamin D deficiency


সূত্রঃ

ক) http://news.bbc.co.uk/2/hi/health/1154211.stm

খ) http://www.reuters.com/article/2007/06/25/us-middle-deficiency-idUSHAR56610220070625

অস্টিওপরোসিসের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে – মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তিকালের পর নারীর দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং মধ্যবয়সী পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়া । অতিরিক্ত সময় শুয়ে থাকা, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, ক্রনিক কিডনী ডিজিজ, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম এবং ভিটামিন ডি জনিত অভাব, এই রোগের অন্যতম কারণ । বোরকা পরিধানের কারণে শরীর পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়না আর বোরকা পরে কাজকর্ম, শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা করাও অসুবিধাজনক । তাই বোরকা পরিহিতা নারীদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস হওয়ার প্রবণতা বেশি । ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি একসঙ্গে এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।

সূত্রঃ

http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmedhealth/PMH0001400

http://www.webmd.com/osteoporosis/guide/vitamin-d-for-osteoporosis

খ) স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বোরকা পরিহিতাদের মধ্যে বেশি
স্তন ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর প্রধান ফ্যাক্টর না হলেও অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির ভূমিকা রয়েছে । আরব বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য মূলত দায়ী চরম রক্ষণশীল ইসলামিক সমাজ এবং এতে এই বিষয়টি ট্যাবুর মতই একপ্রকার নিষিদ্ধ । পুরুষ চিকিৎসককে স্তন দেখাতে হবে – একজন পুরুষ স্তন দেখে ফেলবে বলে অনেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যাপারে নিরুৎসাহী । কি নিদারুণ পরিহাস যে, ইসলামের কাছে জীবন নয় বরং ইসলামী নিয়মকানুন বেশি বড় । মানুষ মারা যাচ্ছে, তারপরও সেই তথাকথিত অনিয়মের নিয়মকেই তারা বড় করে দেখছে । দেখুন -

One Saudi woman ignored the cancer growing in her breast because she didn’t want to risk a referral to a male doctor. Another was divorced by her husband on the mere suspicion she had the disease, while a third was dragged away from a mammogram machine because the technicians were men.


লিংকঃ http://www.msnbc.msn.com/id/21455455/ns/health-cancer/t/breast-cancer-often-untreated-middle-east/

ব্রেস্ট ক্যান্সার সেল ধ্বংস করতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ, এটি বিজ্ঞানী জো এলেন ওয়েলশের ২৫ বছরব্যাপী রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে । ভিটামিন ডি ও ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে তার রিসার্চ পেপারগুলো পড়তে হলে এখানে যান –

লিঙ্কঃ http://www.ajcn.org/content/80/6/1721S.abstract

অতিরিক্ত পাঠঃ

Gissel T, Rejnmark L, Mosekilde L, Vestergaard P. Intake of vitamin D and risk of breast cancer–a meta-analysis. Journal of Steroid Biochemistry and Molecular Biology 2008; 111(3–5):195–199.

http://abcnews.go.com/GMA/OnCall/study-vitamin-d-kills-cancer-cells/story?id=9904415

http://abcnews.go.com/GMA/OnCallPlus/story?id=3759570&page=1

http://www.thepeninsulaqatar.com/qatar/131111-arab-women-at-risk-of-breast-cancer-studies.html

এভাবে অজস্র আরব নারী চিকিৎসাহীনভাবেই ধীরে ধীরে ম্যালিগন্যান্ট ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ।বোরকা পরিধান ব্রেস্ট ক্যান্সার ম্যালিগন্যান্ট স্টেজে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক ।

গ) কলোরেকটাল, প্রোস্টেট, স্কিন ও প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি মোকাবেলায় ভিটামিন ডি
উপরিউল্লেখিত ক্যান্সার মোকাবেলায় ভিটামিন ডি – এর পজিটিভ ভূমিকা রয়েছে, উক্ত ক্যান্সারের রোগীরা বোরকা পরলে নিশ্চিতভাবেই দ্রুত ম্যালিগন্যান্সির দিকে অগ্রসর হয়ে পড়ে ।

সূত্রঃ http://www.cancer.gov/cancertopics/factsheet/prevention/vitamin-D

প্রশ্নঃ মেলানোমা নামক ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য কি বোরকা পরিধান করা আদৌ জরুরী ?
উত্তরঃ একবারেই জরুরী নয় ।

Melanoma is less common than other skin cancers

সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Melanoma

ডঃ নেস বলেন -
Melanoma occurs less often than basal cell and squamous cell skin cancers
অর্থাৎ, অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় মেলানোমা হওয়ার সম্ভাবনা বিরল । আসুন গ্রাফটি দেখি -


সূত্রঃ http://www.cdc.gov/Features/dsWomenTop10Cancers/

দেখা যাচ্ছে – প্রিভ্যালেন্সের বিচারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের অবস্থান যেখানে শীর্ষে, মেলানোমার অবস্থান সেখানে ৭ম স্থানে । রেশিও বিচারে ব্রেস্ট ক্যান্সার ১২০.৪ এবং মেলানোমা মাত্র ১৫.৪, ১২০.৪ – ১৫.৪ = বিশাল ১০৫ ব্যবধান ! তাছাড়া সূর্যালোকে সারাদিন অবস্থান করার কথা কিন্তু কোথাও কোন মেডিক্যাল রিসার্চ বা সার্ভেতে বলা হয়নি এবং দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ বোরকা ছাড়াই সূর্যালোকে অবস্থান করছে । তাদের বিপুল অংশের কি মেলানোমা হয়েছে ? হয়নি ! কিছু সংখ্যক প্লাস্টিক সার্জনরা মেলানোমার পক্ষে অতিরিক্ত লিখে থাকেন কেননা, তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের শুধুমাত্র চর্ম বিষয়টির সঙ্গেই জড়িত এবং নিজের বিষয় বলে সেটিকে বাড়িয়ে লেখেন, (মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষে যখন ছিলাম তখন দেখতাম প্রত্যেকটি সাবজেক্ট নিজের সম্পর্কে গুণগান গাইছে, যেমন পার্কের কমিউনিটি মেডিসিনে রয়েছে উক্ত বিষয়ের সাথে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন নিয়ে এমন সব কথাবার্তা বা তুলনা যেন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন কিছুই নয়)। তাছাড়া মেলানোমা এমনিতে হয়না, এটি হতে হলে মাত্রাতিরিক্ত এক্সপোজার (Over Exposure) প্রয়োজন এবং মাত্রাতিরিক্ত এক্সপোজার শুধুমাত্র তাদেরই হয় যাদের সূর্যালোকে প্রতিদিন একটি বিশাল সময় অবস্থান করে কাজ করতে হয় । আর আরেকটি বিষয় হলো – মানবসৃষ্ট সমস্যা ওজোন লেয়ারের ক্ষয়, অর্থাৎ গ্রীন হাউজ এফেক্টের পরিণামে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি অধিকহারে পৃথিবীতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে । এটি মানবসৃষ্ট সমস্যা আর পরিমিত আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর, এটিই ভিটামিন ডি উৎপাদন-উদ্দীপক ।

ঘ) ভিটামিন ডি-র মত স্বাস্থ্যকর ভিটামিন থেকে বোরকা পরিহিতা নারীরা বঞ্চিত

বোরকা পরিহিতা নারীদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ অন্যান্য রেস্পাইরেটরি ডিজিজের প্রকোপ বেশি ।

সূত্রঃ

Cannell JJ, Vieth R, Umhau JC, et al. (December 2006). “Epidemic influenza and vitamin D”. Epidemiol. Infect. 134 (6): 1129–40. doi:10.1017/S0950268806007175. PMC 2870528. PMID 16959053.


Cannell JJ, Zasloff M, Garland CF, Scragg R, Giovannucci E (2008). “On the epidemiology of influenza”. Virol. J. 5: 29. doi:10.1186/1743-422X-5-29. PMC 2279112. PMID 18298852.

http://en.wikipedia.org/wiki/Vitamin_D_and_influenza
পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজিজের অন্যতম প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর ভিটামিন ডি জনিত অভাব । হাই ব্লাড প্রেশার, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, এথেরোস্ক্লেরোসিসসহ বিভিন্ন কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যার পেছনে ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।
সূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Vitamin_D (কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ অংশ)

Pittas, AG; Chung, M; Trikalinos, T; Mitri, J; Brendel, M; Patel, K; Lichtenstein, AH; Lau, J et al. (March 2010). “Systematic review: Vitamin D and cardiometabolic outcomes”. Annals of Internal Medicine 152 (5): 307–14.


বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়, নতুন চুল গজানোর ক্ষমতাও হ্রাস পায় । ভিটামিন ডি-র সাথে হেলদি হেয়ার ফলিকল গ্রোথের সম্পর্ক রয়েছে ।

সূত্রঃ Amor, KT; Rashid, RM; Mirmirani, P (2010). “Does D matter? The role of vitamin D in hair disorders and hair follicle cycling”. Dermatology online journal 16 (2): 3. PMID 20178699.

রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, জুভেনাইল ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অটোইমিউন ডিজিজ প্রতিরোধে
ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মাইকেল হলিকের রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে -

সূত্রঃ Holick, MF (2004). “Sunlight and vitamin D for bone health and prevention of autoimmune diseases, cancers, and cardiovascular disease”. The American Journal of Clinical Nutrition 80 (6 Suppl): 1678S–88S. PMID 15585788.

পারকিনসন্স এবং আলঝেইমার্স ডিজিজের সঙ্গে ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।এমনকি অধুনা গবেষণায় টিউবারকুলোসিস এবং এইচআইভি প্রতিরোধক হিসেবেও ভিটামিন ডি-র ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে ।

সূত্রঃ Evatt, ML; Delong, MR; Khazai, N; Rosen, A; Triche, S; Tangpricha, V (2008). “Prevalence of vitamin d insufficiency in patients with Parkinson disease and Alzheimer disease”. Archives of neurology 65 (10): 1348–52. doi:10.1001/archneur.65.10.1348. PMC 2746037. PMID 18852350.

বোরকা পরিহিতা নারীরা বোরকা পরিহিত বলেই জীবনের অধিকাংশ সময় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আলোবাতাস থেকে বঞ্চিতা হন এবং তাদের শরীরে অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে । তারা একটি অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করেন, এভাবে যাপিত জীবনকে জীবন বলেনা । উপরিক্ত রোগগুলো ছাড়াও মাসল ক্র্যাম্প, বাচ্চাদের রিটার্ডেড গ্রোথ, দাঁত দেরীতে ওঠা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়।

অনেক পণ্ডিতম্মন্য মূর্খ মুসলিম ব্যক্তিরা বলে থাকেন – ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেলেই তো হয়, বোরকা ছাড়া যাবেনা । তারা অজ্ঞ বলেই এমনটি বলে থাকেন কেননা ন্যাচারাল সোর্স আর সিন্থেটিক সোর্সের মধ্যে অনেক পার্থক্য ।

প্রশ্নঃ ভিটামিনগুলোর ন্যাচারাল সোর্স আর সিন্থেটিক সোর্সের মধ্যে কোনটি অধিকতর ভালো ?

উত্তরঃ নিঃসন্দেহে ন্যাচারাল সোর্স । কেননা ,

১) সিন্থেটিক সোর্স নিজে একটি কেমিক্যাল এবং সেটিকে ভিটামিনে সিন্থেসাইজ করা হয়েছে, তাছাড়া এতে অন্যান্য বিভিন্ন কেমিক্যাল রয়েছে আর কেমিক্যাল বলেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা হলেও রয়েছে, কিন্তু ন্যাচারাল সোর্সে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি অনুপস্থিত । ভিটামিন টক্সিসিটির জন্য সিন্থেটিক সোর্স দায়ী, ন্যাচারাল সোর্স নয় ।

২) সিন্থেটিক সোর্সে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভিটামিনটি থাকে, কিন্তু ন্যাচারাল সোর্সে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তথা উক্ত ভিটামিনটির প্রভাবকগুলো উপস্থিত থাকে ।

৩) ন্যাচারাল ভিটামিনের বায়ো-অ্যাভেইলিবিলিটি অত্যন্ত বেশি অর্থাৎ শরীর এটিকে সিন্থেটিক ভিটামিনের চেয়ে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে শরীরের পুষ্টি সাধনে কাজে লাগাতে পারে । এটি জলদি শরীর দ্বারা শোষিত হয় বলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও কম থাকে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তখন শরীরের অন্যান্য কাজে যেমন – ফ্রি র‍্যাডিকাল ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ পায় । আমরা রোগীকে মাঝে মাঝে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করি এবং রোগী কয়েকদিন বা কয়েকমাস পরে অভিযোগ করেন, ভিটামিন খেয়ে তো কোন লাভ হলো না । এর কারণ এখানেই, সিন্থেটিক ভিটামিনের বায়ো-অ্যাভেইলিবিলিটি কম, তাই অনেকের শরীরই এটিকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে গ্রহণ করতে পারেনা ।
তাই সূর্যালোকের সমতুল্য বিকল্প কখনো ডায়েটারী সাপ্লিমেন্ট হতে পারেনা ।

সূত্রঃ

http://www.usingvitaminswisely.com/natural-vitamins.html

http://psicologiauigv.com/synthetic-vs-natural-vitamin-supplements-which-is-better.html

ঙ) বোরকা শরীরে তাপ উৎপাদক এবং ঘর্ম উৎপাদক একটি পোশাক, হিট স্ট্রোক ও বোরকার ভূমিকা

বোরকা সাধারণত কালো বা নীল রঙের হয়ে থাকে, এবং হালকা রংয়ের চেয়ে গাঢ় রং অনেক বেশি তাপ শোষণ করে। ফলে গাঢ় রংয়ের পোশাক পরলে গরম বেশি লাগে, শরীর জলদি ঘেমে যায় এবং বোরকায় তাপ বের হওয়ার জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় তাপ শরীরেই রয়ে যায় ।

এখানে সায়েন্টিফিক লজিকটি হলো –

কালো রঙের পোশাক কালার স্পেকট্রামের সকল আলোকরশ্মি শোষণ করে, তাই যত আলোকরশ্মি শোষিত হচ্ছে তত বেশি তাপশক্তি শোষিত হচ্ছে কেননা সূর্যরশ্মির মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিন্ন শক্তিরই দুটি রূপভেদ আলোকশক্তি এবং তাপশক্তি । অন্যদিকে সাদা রঙের পোশাক কোন আলোকরশ্মিই শোষিত করেনা বরং সেগুলো প্রতিফলিত করে । এই যুক্তির ওপর ভিত্তি করেই সাদা রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি প্রস্তুত করা হয় ।

সূত্রঃ http://www.whyzz.com/why-do-dark-colors-absorb-heat

শরীরে অত্যাধিক ঘর্ম উৎপাদনের ফলে ১) পানিশূন্যতা ২) ঘামের দুর্গন্ধ ৩) মূর্ছা যাওয়া ৪) মাথা ঘোরা ৫) অস্থিরতা ৬) জ্বর ৭) বুক ধড়ফড়ানি ৮) হাইপারথার্মিয়া ৯) মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ১০) মানসিক অস্বস্তি ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Hyperhidrosis

হিট ইলনেসগুলোর অন্যতম কারণ বোরকা যা থার্মোরেগুলেশন চরমভাবে ব্যহত করে । হিট ইলনেসের মধ্যে রয়েছে –
১) হিট স্ট্রোক ২) হিট এক্সজোশন ৩) হিট সিনকোপ ৪) হিট ইডিমা ৫) হিট ক্র্যাম্পস ৬) হিট র‍্যাশ ৭) হিট টেটানি
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য হালকা রঙের সুতি পোশাক পরতে বলা হয় আর সেখানে গাঢ় রংয়ের বোরকা পরলে এভাপোরেশন বা বাষ্পীভবন সহজে হতে পারেনা তাই শরীরে তাপ রয়ে যায়, তাপ বের হতে পারেনা –

In environments that are not only hot but also humid, it is important to recognize that humidity reduces the degree to which the body can lose heat by evaporation. In such environments, it helps to wear light clothing such as cotton in light colors

সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Heat_stroke

চ) বোরকা পরিধান করা নারীদের মধ্যে অত্যাধিক ঘুমকাতরতা এবং শুয়ে থাকার প্রবণতা খুবই বেশি যেটি অনেক নন কমিউনিকেবল ডিজিজের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর


সূর্যের আলো চোখের মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে মেলাটোনিন নামক হরমোন তৈরী করতে বাধা দেয়, উল্লেখ্য এই হরমোনটি শুধু অন্ধকারেই প্রস্তুত হয়, আলোতে হতে পারেনা । মেলাটোনিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেমনঃ অনিদ্রার রোগীদের নিদ্রা আনয়ন করতে নিদ্রা উদ্দীপক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সূর্যালোক থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হওয়ায় অনেক মুসলিম নারী মেলাটোনিনের অধিক নিঃসরণের ফলে দিনের বেলাতেও ঘুমকাতরতা অনুভব করেন যেটির কারণে তাদের মধ্যে শুয়ে থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং এটি ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ,ওবেসিটি বা স্থূলতাসহ বিভিন্ন অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টররূপে কাজ করে।

সূত্রঃ http://www.truestarhealth.com/members/cm_archives13ML3P1A8.html

শারীরিক ক্ষতির দিকগুলো তো গেল, এবার আসা যাক সামাজিক ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বোরকা কেন বর্জনীয় ।



চিত্রঃ এই কি বোরকাওয়ালীদের নাচের নমুনা ?

ক) বোরকা পরিধান করা নারীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনা । যে কোন ধরনের নৃত্যকলায় অংশগ্রহণ করা এবং দক্ষ নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে । বোরকা পরিধান করলে বর্তমানের মিউজিক ভিডিওনির্ভর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে একজন গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব, ফেসিয়াল বিঊটি নির্ভর চলচিত্র জগতে একজন নায়িকা বা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। অর্থাৎ, বোরকা পরিহিতা নারীদের প্রাণ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তারা প্রাণহীন কেননা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ একজন মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন, বোরকা পরিধান সেই সাংস্কৃতিক জীবনের অধিকার একজন নারী থেকে কেড়ে নেয়, তাকে অথর্ব জড় পদার্থের মতই করুণভাবে সমাজে বাঁচিয়ে রাখে ।



চিত্রঃ চরম মানবেতরভাবে আলো বাতাস বঞ্চিতা হয়ে চলে বোরকা পরিহিতা মুসলিম নারীদের শরীরচর্চা

খ) পুরুষের মত নারীদেরও খেলাধুলা করার অধিকার ও ইচ্ছে রয়েছে । বোরকা পরিধান করে খেলাধুলাতে অংশগ্রহণ এবং দক্ষতার পরিচয় রাখা সম্ভব নয় । বোরকা পড়ে ক্রিকেট ফুটবল হকি খেলা সম্ভব নয়, বোরকা পড়ে দৌড়নো সম্ভব নয়, হার্ডল অতিক্রম করা সম্ভব নয়, লংজাম্প, হাইজাম্প পোলভল্টে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। রেসলিং, বক্সিং, জুডো, কুংফু কারাতে করা সম্ভব নয়, সাঁতার কাটা সম্ভব নয় । নারীদের কি জন্মই হয়েছে পুরুষের যৌনচাহিদা মেটানো আর বাচ্চা পয়দা করার জন্য ? নারীদের কি স্বাদ আহলাদ কিছুই নেই ? বাংলাদেশের কত নারী ক্রিকেটপাগল, সমাজব্যবস্থা ইসলামিক এবং কট্টর পুরুষতান্ত্রিক না হলে তারাও আজকে ক্রিকেট খেলতো, কিন্তু জন্ম থেকেই যে সিস্টেম দেখে আসছে তারা, তাতে এসব খেলাধুলায় শুধুমাত্র সাপোর্ট করা ছাড়া আর কোণ গত্যন্তর থাকেনা তাদের । ভারতের টেনিস প্রতিভা সানিয়া মির্জা শর্টস পড়ে খেলে দেখিয়ে দিয়েছেন তার যোগ্যতা ।

গ) বোরকার দুটি বা শতচ্ছিদ্র দিয়ে কোন বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা চরম অসুবিধাজনক, স্কুল কলেজে পড়াশোনা করা, ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখায় চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়, পর্দার মধ্যে দিয়ে বইয়ের লেখা পড়াও চরম বিরক্তিদায়ক এবং পুস্তক পাঠে অনীহা উদ্দীপক । কেমিস্ট্রি বা ফিজিক্স ল্যাবরেটরীতে বোরকা পরিহিত অবস্থায় প্র্যাকটিক্যাল করলে তাতে যে কোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাছাড়া এভাবে প্র্যাকটিক্যাল করাটাও অসুবিধাজনক । উপরন্তু, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক শিক্ষিকারাও সমস্যায় পড়ে যান, কেননা বোরকা পরিহিতা শিক্ষার্থীদের কে কোনটা তা নির্ধারণে সমস্যা দেখা দেয়, আবার ক্লাস রোল কলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়, বোরকা পরিহিত বলে চেহারা দেখার অবস্থা নেই, এটির সুযোগ নিয়ে অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকেনা বা অনুপস্থিত বান্ধবীদের জন্য প্রক্সি দেয় ।

ঘ) বোরকা পরিধানে প্রয়োজনের সময় দ্রুত হাঁটা যায়না আবার বিপদের সময় দৌড়নোও যায়না কেননা দ্রুত হাঁটতে বা দৌড়তে যেয়ে নিচে বোরকার কাপড়ের সঙ্গে পা যে কোন মুহূর্তে ফেসে যেতে পারে, হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ে মুহূর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক – কোন এক বোরকা পরিহিতা মহিলাকে কিছু দুর্বৃত্ত তাড়া করলো, এমতাবস্থায় মহিলাটি যদি বোরকা পরিহিতা না হয়ে জিন্স পরিহিতা হতো, তাহলে সে দৌড় দিয়ে হয়তো বিপদ এড়োতে পারতো বা নিরাপদ অবস্থানে যেতে পারতো, কিন্তু বোরকা পরার কারণে সেই মহিলাটি বেশি দূর এগোতেই পারবেনা, মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে ।

ঙ) বোরকার শতচ্ছিদ্র দিয়ে বা পর্দার ভেতর থেকে বস্তুর অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া অসুবিধাজনক, রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় বোরকার পর্দা বা শতচ্ছিদ্র দিয়ে দেখতে হয় বলে রাস্তা পারাপারে বিশেষত সাইড ভিউ সম্পর্কিত সমস্যা হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক এবং মুহূর্তের অসাবধানতায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ।



চ) বোরকা নারীকে সকল প্রকার সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, বোরকা পরে অফিস আদালতে চাকুরী করা অসুবিধাজনক, চিত্রশিল্পী হওয়ার পক্ষে প্রতিবন্ধক, বোরকা পরিহিতা নারী বোরকা পরিধানের কারণে পুরুষের মত অন্যান্য কাজ করতে অসমর্থ হয়, ফলে সেই সমাজে পুরুষ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে এবং নারীকে ইচ্ছেমত শোষণ করতে পারে । বোরকা পরিধানের ফলে নারী কার্যতভাবে পুরুষের অধীনস্তা হয়ে পড়ে । যেহেতু নারী বোরকা পরিধানের ফলে গৃহকর্ম ব্যতীত অন্য সকল সাংস্কৃতিক সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরামসে এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেনা, সেহেতু এটি সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বোরকা – নারী স্বাধীনতার একটি প্রধান অন্তরায় ।





চিত্রঃ দেখুন পানির মধ্যে থেকে হঠাৎ করে ভেসে উঠলো একটি নিনজা

ছ) বোরকা পরিধানের কারণে নারীকে সোজা বাংলা ভাষায় ভুত পেত্নীর মত দেখায় । বোরকার মধ্যে কোন সৌন্দর্য নেই, কালো বা নীল বা অন্য রঙের একটি সম্পূর্ণ একরঙা পোশাক, পুরোটিই ঢাকা, ডিজাইনের কোথাও কোন বৈচিত্র্য নেই, নেই কোন প্যাঁচ, নেই কোন হাতের কাজ,নেই কোন আচল,নেই কোন বক্রতা। ঐটি পরলে দেখতে চরম কুশ্রী লাগে ।



চিত্রঃ কারো চেহারা চেনার উপায় নেই, এই চিত্র তোলা অপ্রয়োজনীয় এবং নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক নয় কি ?




চিত্রঃ দেখুন হরর মুভির ভুতপ্রেত-পেত্নীদের মতই বোরকাওয়ালীদের ভৌতিক মিছিল

একটা জায়গায় অজস্র কালো বোরকাধারীদের যদি কুড়াল বা লাঠি হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটি হরর মুভির প্রেতাত্মাদের মিছিলের মতই মনে হবে । যেই পোশাকে নারীকে ভুতুড়ে দেখায়, চোখ মুখ নাক হাত পা কিছুই দেখা যায় না, অর্থাৎ ঐ পোশাকের ভেতরে যে একটি মানুষ আছে সেটারই প্রমাণ পাওয়া যায়না, সেই পোশাকের মধ্যে কিসের সৌন্দর্য ?

জ) বোরকা –অপরাধী,সন্ত্রাসী,উগ্রবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য চরম আশীর্বাদস্বরূপ একটি পোশাক কেননা এই পোশাক পরিধান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে সফলভাবে আত্মগোপন করা যায়, গ্রেফতার এড়ানো যায়, আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো যায় এবং যখন খুশি তখন দেশের এখান থেকে সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা বজায় রাখা যায় ।

ভিডিওটি দেখুনঃ 

পাকিস্তানের লাল মসজিদে ইসলামিক জঙ্গিবাদীরা অবস্থান নিয়েছিলো কিন্তু তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের জঙ্গি প্রশ্নে দৃঢ়তা এবং অনমনীয়তার সুবাদে তাড়া সেখানে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেশিক্ষণ চালাতে পারেনি, তাদের অন্যতম নেতা মওলানা আব্দুল আজিজ নিতান্তই নির্লজ্জের মত বোরকা পরে পালাতে যেয়ে ধরা পড়েন ।
পাকিস্তানের কোহাটে একটি রিফিউজি ক্যাম্পে বোরকা পরিহিত দুই ইসলামিক জঙ্গিবাদী আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ৪১ জনের মৃত্যুর কারণ হয় ।

সূত্রঃ http://www.rightsidenews.com/201004229692/world/terrorism/the-burqa-bomb.html



চিত্রে দেখুন আফগানিস্তানে ইসলামিক জেহাদী জঙ্গিবাদীরা কিভাবে বোরকার মাধ্যমে আত্মগোপন করে এবং বোরকার আড়ালে বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র, রাইফেল ও গোলাবারুদ লুকিয়ে চলাফেরা করে ।

সূত্রঃ http://www.hadihairan.com/2011/07/photo-story-burqa-terrorism.html



চিত্রঃ বোরকা পরিধান করে দোকান ভাংচুরের মাধ্যমে লুটপাট চলছে

প্রখ্যাত লেখক তথা পলিটিক্যাল ব্লগার ড্যানিয়েল পাইপসের আর্টিকেলগুলো থেকে পাওয়া যায়, বোরকার আড়ালে অপরাধী সন্ত্রাসী ও ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গিবাদীদের সন্ত্রাসী ও জেহাদী অপতৎপরতার অজস্র ছবি ও বর্ণনা –

সূত্রঃ http://www.danielpipes.org/blog/2006/11/niqabs-and-burqas-as-security-threats

বোরকা যে নারী –সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য চরম ক্ষতিকর, তা উপরিউক্ত আলোচনা থেকেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত । তবে এগুলোর বাইরে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, সেগুলো হলো –

ক) যে আল্লাহ একেবারেই নগ্নভাবে পৃথিবীতে নর ও নারী প্রেরণ করেছিল, তার হঠাৎ করে নারীর নগ্ন উরু নগ্ন বাহু দেখে বিচলিত হওয়ার কারণ কি? তিনি যখন সর্বজ্ঞ তখন কেন সৃষ্টির শুরু থেকেই বোরকা প্রথা চালু হলো না ? কেন হঠাৎ তার এহেন মন পরিবর্তন ? আর সর্বজ্ঞ আল্লাহ কি ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য উল্লেখিত ব্যাপার সম্পর্কে জানতেন ? জানলে কি বোরকা প্রচলিত হতে দিতেন ? (আল্লাহ বলে কিছু নেই )

খ) নারী দেখলেই পুরুষ কামার্ত কামাতুর হয়ে পড়বে কেন ? বিপরীতক্রমে নারী যদি একজন পুরুষকে খালি গায়ে বা বোরকাহীন অবস্থায় দেখে তাহলে সে কামার্ত – কামাতুর হয়ে পড়বে কিনা ? যদি নারী পুরুষের মতই মানুষ হয়, তাহলে তো পুরুষের মত তারও কামার্ত হয়ে পড়ার কথা এবং সেক্ষেত্রে পুরুষের জন্য কেন নারীর মতই একই ধরনের বোরকা প্রযোজ্য হবেনা ? উল্লেখ্য,মুসলিম নারীরাও অনেক সময় কামার্ত হয় কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে তা প্রকাশ করেনা ।ইরানের অনেক নারী কারণে অকারণে বোরকার নিচে কিছু না পরেই ডাক্তারের কাছে যান এবং চেকআপ করান । পাকিস্তানের মত ইসলামিক রাষ্ট্রে যেই নারী দিনের বেলায় বোরকাওয়ালী বা পাবলিক প্লেসে বোরকাওয়ালী, সেই নারীই প্রাইভেটপ্লেসে নগ্ন হয় কিংবা রাতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পাঞ্জাবী মুজরা নাচ নাচে ।পাকিস্তানে নারী কর্তৃক এমনকি পুরুষও ধর্ষিত হয়েছে ।চিত্রে দেখুন –



তাহলে আল্লাহ পুরুষের জন্যও বোরকা প্রবর্তন করলেন না কেন (হাহা) ?



গ) নারীকে বোরকাবন্দী করার মাধ্যমে কি পুরুষ তাকে নিজের অধীনস্তা একটি অক্ষম প্রজাতিতে রূপান্তরিত করে তুলছে না ? এটি কতটুকু মানবিক ? তাছাড়া বোরকাবন্দী করার ফলে কি সেটির এফেক্ট হিসেবে একটি সেক্সিস্ট কালচারের জন্ম হচ্ছেনা ? বোরকা পরিধান কি একপ্রকার মানসিক দাসত্ব নয় ?

ঘ) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক নারীকে তার নিজের ভাই-বোনের ছেলেদের সামনে পর্দা করার কোন প্রয়োজন না থাকলেও স্বামীর ভাই-বোনের ছেলেদের সামনে পর্দা করার বিধান রয়েছে ।তবে কি মুসলমানরা তাদের ফুফু খালাকে দেখে মায়ের দৃষ্টিতে আর চাচী মামীকে বউয়ের দৃষ্টিতে? আর মামা-চাচা কে কোন দৃষ্টিতে দেখে ? শুধুমাত্র ইসলামের মতো পুরোপুরি বিকারগ্রস্থ সংস্কৃতির মানুষদের পক্ষেই নিজের পরিবার সম্পর্কে এমন অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা সম্ভব।

ঙ) সুন্দরী বোরাকের পিঠে চড়ে অক্সিজেন বিহীন বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে নিতে আর বায়ুহীন আকাশে প্রশস্ত দু’ডানা বজ্র শক্তিতে ঝাপটাতে ঝাপটাতে আলোর থেকেও দ্রুত গতিতে মুহাম্মদ যখন দোযখের দ্বার প্রান্তে পৌছাল নরকের ক্ষুধার্ত শয়তান তখন কয়েকজন তথাকথিত নির্লজ্জ নারীকে আগুনে ছেকে শিক কাবাব বানাতে ব্যস্ত।এসব নারীর অপরাধ ছিল এই যে- তারা নাকি পরপুরুষদের নিজেদের চুল দেখিয়েছিলো !চুল দেখানোও ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ । সে বিচারেই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অজস্র দেশের অজস্র মুসলিম নারীরাও দোজখে যাবে, এটি নিশ্চিত !আমার প্রশ্ন হলো – চুল দেখালে আদৌ কি কোন ক্ষতি হয় ? আরেকটি প্রশ্ন – তথাকথিত কেয়ামতের আগে এই নারীদের শাস্তিপ্রদান করা কি অবিচার এবং নিয়মভঙ্গ নয় ? কেয়ামতের আগে তারা দোজখে আসলোই বা কিভাবে ?



চিত্রঃ ইসলামিক চিত্র, সামান্য চুল দেখানোর অপরাধে ( ইসলামী ভাষ্যমতে) নারীদের লজ্জাহীন বলে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে

Mohammed, along with Buraq and Gabriel, visit Hell, and see a demon punishing “shameless women” who had exposed their hair to strangers. For this crime of inciting lust in men, the women are strung up by their hair and burned for eternity. Persian, 15th century.

সূত্রঃ http://spiralupward.com/?p=1239
http://zombietime.com/mohammed_image_archive/islamic_mo_full/

প্রশ্নঃ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের হার কম হওয়ার পেছনে রহস্যটা কি ?

উত্তরঃ আসলে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের হার প্রচুর কিন্তু বেশ কিছু কারণে সেই কেসগুলো রিপোর্টেড হয়না যার কারণে এই ঘটনাগুলো আড়ালেই থেকে যায় ও আমাদের সামনে একটি ভুল তথ্য উপস্থাপিত হয় যে – সেসব দেশে ধর্ষণ কম হয় । আমাদের দেশেও ২০০১ সালের পরে অজস্র হিন্দু নারী বিএনপি জামাতপন্থী নরপশুদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হলেও ১০% কেসও রেজিস্টার্ড হয়নি ।
পুরুষকে স্তন দেখাতে হবে বলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপার তারা চেপে যায় । একইভাবে ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করলে সমাজে অচ্ছুৎ হয়ে যাবে তথা প্রমাণিত না হলে বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে হত্যার মত নির্মম শাস্তি পেতে হবে – এমন আশংকায় সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের কেস রিপোর্টই হয়না ।
সভ্য দেশগুলোতে ধর্ষণের কেসগুলো ঠিকমত রেজিস্টার্ড হয় কেননা নারী সেসব দেশে স্বাধীন এবং পুরুষের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা গোপন করেনা, মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের কেসগুলো রেজিস্টার্ডই হয়না কেননা এতে নারী আরো বিপদে পড়বে। সৌদি আরব চরম পুরুষতান্ত্রিক দেশ। সেখানে নারীরা পদে পদে ধর্ষিতা হলেও তারা মুখ খোলেনা, জানে যে এর বিচার তো হবেইনা বরং এটি প্রকাশ পেলে তার বিয়েও হবেনা । সৌদি আরবের অদ্ভুত ইসলামিক আইনে ৪ জন পুরুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য লাগে ধর্ষণের কেস প্রমাণ করতে, নারীকে যেই পুরুষটি ধর্ষণ করেছে সেই পুরুষ বাদে বাকি পুরুষকে নারী কেন সাক্ষ্য হিসেবে জোগাড় করবে এবং সেটি কিভাবেই বা করবে ? এমন অবাস্তব নিয়মের কারণে সৌদিতে ধর্ষণের কেসই হয়না, এর মানে এই না যে সেখানে ধর্ষণ হচ্ছেনা। সেখানে ধর্ষণ প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে, পর্ণ সাইটগুলোতে আরবীয় ক্লিপগুলোর আধিক্য দেখে সেটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ।
কোরান শরীফের অদ্ভুত নিয়ম ৪ সাক্ষী উপস্থাপন করা -







তাহলে রেপ কেস রিপোর্টেড হবে কিভাবে ?

আপনার মত অনেক মুসলিমের মধ্যেই এই বিশ্বাস রয়েছে যে, নারী ধর্ষিতা হলে সেটি তারই দোষ কেননা সে পর্দা করেনি মানে পুরুষকে প্রলুব্ধ করেছে তাকে ধর্ষণ করার জন্য । এই রকম চরম নোংরা এবং চরম অসুস্থ মনমানসিকতা আপনাদেরই থাকতে পারে। দেখুন -

There’s also an impression, among a large number of Muslim followers, that if a woman is raped, it’s usually her fault; that her mere presence in the street without a veil, for example, has ‘tempted’ the poor man to rape her. A notorious example of this mentality among Western Muslims is a 7th century misogynistic Australian barbarian called Taj El-Din Al-Hilali, who said in a Friday sermon that if a woman gets raped, it is mostly the woman’s fault because she wasn’t in her home. He also said:
If you take out uncovered meat and place it outside on the street, or in the garden or in the park, or in the backyard without a cover, and the cats come and eat it … whose fault is it, the cats or the uncovered meat? The uncovered meat is the problem.
সূত্রঃ http://www.islam-watch.org/index.php?option=com_content&view=article&id=357:rape-in-islam-and-its-four-witnesses&catid=119:fakhour&Itemid=58

মুসলিম জাতি যে চরম ধর্ষকামী জাতি তা কোরান থেকেই সুস্পষ্ট (সুরা নিসা ৪ আয়াত ২৪ এবং সুরা আল মুমিনুন ২৩ আয়াত ৬ দ্রষ্টব্য)




দাসীদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম ( এটি ধর্ষণ) এবং যুদ্ধবন্দীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম ( এটিও ধর্ষণ) ।

ইরানের নাজানিন মাহাবাদ ফাতেহির কথা কে না জানে -

In Iran, Nazanin Mahabad Fatehi faced the death penalty for defending herself and her niece from being raped. As she defended herself with a knife, she stabbed one of the attempted rapists to his death. Without four male witnesses, she faced the death sentence. (She was released due to intense international and media attention

মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণের বিচার চাইতে গেলে সেটি ৪ সাক্ষীর অভাবে প্রমাণ করা যায়না । উল্টো বিচার দাবীকারীকে শাস্তি পেতে হয় ।
If she cannot produce four witnesses, her case turns into a chastity crime and is thus punished accordingly. Alternatively, she may be punished for making perceived false accusations. Also, at least one school of jurisprudence considers pregnancy sufficient evidence for sexual misconduct, so if a rape victim becomes pregnant and she cannot prove the rape, she can face lashing or death by stoning.
যে পুরুষটি ধর্ষণ করেছে, তার সাথে আর ৩ সদস্য থাকলে তারাও ধর্ষণে যোগ দেবে এবং কোনদিনও তারা ধর্ষিতার পক্ষে সাক্ষ্য দেবেনা । তাহলে ৪ সাক্ষী আসবে কিভাবে ? অর্থাৎ, ৪ সাক্ষী না পেলে ধর্ষণের কেসটি চ্যাসটিটি ক্রাইম বা সতীত্ব হারানোর তথাকথিত অপরাধের কেসে রূপান্তরিত হবে এবং ইসলামী বিধানমতে নারীকেই শাস্তি দেওয়া হবে । উপরন্তু নারী যদি এক্ষেত্রে গর্ভবতী হয়ে যায়, তাহলে তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে ।
যেহেতু ৪ সাক্ষী কখনোই উপস্থাপন করা যাবেনা, সেহেতু নারীরা কখনোই চাইবেনা ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করতে কেননা এতে তাদের নিজের জীবনই বিপন্ন হবে, তাদেরকে পাথর মেরে আর বেত্রাঘাত করে মেরে ফেলা ও শাস্তি দেওয়া হবে । তাই সৌদি আরবে ধর্ষণ কম কথাটা সম্পূর্ণই মিথ্যে, আসল বাস্তবতা এই ৪ সাক্ষী জোগাড় করতে না পারার মাঝেই নিহিত । কিছু চিত্র দেখি চলুনঃ









কিরম নৃশংসতা কিরকম বর্বরতা ! এই হলো ইসলামের স্বরূপ !

সূত্রঃ

http://www.faithfreedom.org/Gallery/6.htm

http://tulisanmurtad.blogspot.com/2010/10/stoning.html

http://www.time.com/time/quotes/0,26174,1872529,00.html

http://angrywhitedude.com/2011/04/the-stoning-of-soraya-m-the-true-message-of-islam/

http://en.wikipedia.org/wiki/Stoning

প্রশ্নঃ কোন নারী যদি নিজের ইচ্ছেয় বোরকা পরতে চান তবে তাকে বাধা দেওয়া উচিত কিনা এবং এটি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কিনা ?

উত্তরঃ না, এটি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয় । বোরকা নারীর নিজের বুদ্ধি বিবেচনায় অ্যাডোপ্ট করা পোশাক নয়, এটি ধর্মই নারীর ওপর আরোপ করেছে, আরোপ মানে একপ্রকার ফোর্স বা বাধ্য করাই । মধ্যপ্রাচ্যের পুরুষকেন্দ্রিক সমাজে জন্মের শুরু থেকেই একটি নারী তার আশেপাশের সমাজে বোরকার প্রচলন দেখে এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের আইনে বাধ্যতামূলক -বোরকা পরিধানে বাধ্য হয় । যদি ধর্ম বা রাষ্ট্রের এমন আইন না থাকতো এবং পরিবারের এনফোর্সমেন্ট না থাকতো এবং তারপরও যদি নারী বোরকা পরতে চাইতো তাহলে আমি বলতাম যে – হুম, নারীর নিজের ইচ্ছেয় বোরকা পরার স্বাধীনতা রয়েছে । কিন্তু এগুলো চাপানো হয়, তাই এখানে কিছু নারী যে বোরকার পক্ষে আন্দোলন করে, সেগুলো শিশুকাল থেকেই তার মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া ধর্মবিশ্বাস এবং বোরকা পরিধানে অভ্যস্ত করে তোলা থেকেই, নিজের ইচ্ছেয় নয় ।

তাছাড়া বোরকার এত কুফল রয়েছে যে বোরকা পরিধানকে কখনোই ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে প্রশ্রয় দেওয়া চলেনা । ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিতে হলে ধূমপান-সমকামিতা-যৌন স্বেচ্ছাচারিতা-মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি সকল কিছুকেই ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে চালানো যায়, যা ব্যক্তিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য অপরিসীম ক্ষতি বয়ে আনে । তাই বোরকাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে না বলুন, বোরকা কালচারকে বয়কট করুন ।

অতিরিক্ত পাঠঃ

http://forum09.faithfreedom.org/viewtopic.php?f=30&t=6113#p100540

http://www.faithfreedom.org/forum/viewtopic.php?p=42499

http://www.faithfreedom.org/forum/viewtopic.php?t=21469

http://www.faithfreedom.org/forum/viewtopic.php?t=20917

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১১

প্রসঙ্গঃ বাংলা এবং বাঙ্গালির চিরন্তন সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আমাদের সংবিধান

দ্বিজাতিতত্ত্বের ধোঁয়াটে ফানুসে উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামক ২টি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্ম হয় । দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ব্যক্তিগত জীবনে ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে প্রভাবিত একজন সেক্যুলার মুসলিম ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সেক্যুলার হওয়ার পরও দ্বিজাতিতত্ত্বের মত একটি ধর্মভিত্তিক পন্থা উপমহাদেশের জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন। এর পেছনে কারণ ছিলো, মুসলমান গোষ্ঠীর পশ্চাৎপদসরিত করুণ অবস্থা যার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী ছিলো।  ব্রিটিশ আমলে তারা ব্রিটিশদের সকল প্রকার সাহায্য করা থেকে বিরত থাকে এবং ইংরেজি শিক্ষাকে উপেক্ষা করে। পক্ষান্তরে হিন্দু জনগোষ্ঠী ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ব্রিটিশদের কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে এবং ব্রিটিশদের মনোভাজন হয়। ফলে সমাজে এবং চাকুরীক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা অর্জন করতে গেলে যে গোঁয়ার হয়ে থাকা চলবে না এটি তারা অনুধাবন করতে পারলেও মুসলমান জনগোষ্ঠী তা পারেনি এবং নিজেদের গোঁয়ার্তুমির কারণে তারা সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে ।তাদের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি সাধনের নিমিত্তে জিন্নাহ সাহেব নিজে সেক্যুলার হওয়া সত্ত্বেও দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমে ভারত বিভাজনের দাবী উত্থাপন করেন । এতে মুসলমানদের সামগ্রিক অবস্থার কিছু উন্নয়ন ঘটে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি চরমভাবে বিনষ্ট হয়। পুরো উপমহাদেশে ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে,ধর্মভিন্নতার কারণে মানুষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, লুটতরাজ করে, বাড়িঘর জমিজমা বসতভিটা সকল কিছু দখল করে নেয়,রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয় গোটা উপমহাদেশকে ।সেই দ্বিজাতিতত্ত্বের মত ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িক পদ্ধতিকে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ সমর্থন জানিয়েছিলো,ভারতের জনগণের মধ্যে ছিলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া,অনেক নামকরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধিতা করেছিলেন। 



ভিডিওসূত্রঃ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধিতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ভাষণ দিচ্ছেন

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন একজন ধার্মিক মৌলানা মুসলমান,তিনি চেয়েছিলেন সাম্প্রদায়িকতার উন্মত্ত আবেগে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গে টুকরো টুকরো না হোক,তিনি মনেপ্রাণে সেক্যুলার ছিলেন, তিনি বুঝেছিলেন, সাম্প্রদায়িক ঐক্য বজায় থাকলে উপমহাদেশের প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে এবং বিশ্বের মানচিত্রে ভারতবর্ষ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে সম্মানের সঙ্গে অবস্থান করবে যেখানে হিন্দু মুসলিম জাতিবিদ্বেষ ভেদাভেদ থাকবেনা এবং উপমহাদেশের জনগণ ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ঊর্ধ্বে উঠে প্রজাতন্ত্রের জন্য কাজ করতে পারবে । ধর্মনিরপেক্ষতার মন্ত্রে দীক্ষিত মৌলানা আজাদ অখন্ড ভারতের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলেছিলেন -

I am proud of being an Indian. I am part of the indivisible unity that is Indian nationality. I am indispensable to this noble edifice and without me this splendid structure is incomplete. I am an essential element, which has gone to build India. I can never surrender this claim.

হাসরাত মোহানী,আল্লামা মাশরীকি,আসাফ আলি,হাকীম আজমল খান,ডঃ মুখতার আহমেদ আনসারী,আব্দুল কাইউম আনসারী,ডঃ সাইফুদ্দিন কিসলু,আব্দুল মোতালিব মজুমদার,আব্দুল মজিদ খাজা,একে ফজলুল হক,খান আব্দুল ওয়ালী খান,খান,হুমায়ূন কবির,আব্দুল গাফফার খান এবং জি এম সাইয়্যেদের মত নামকরা মুসলিম নেতারা সেক্যুলার চিন্তক ছিলেন এবং উপমহাদেশ বিভক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন ।তারা মুসলমান ছিলেন,অনেকেই ছিলেন নামকরা ইসলামিক চিন্তাবিদ, তারা নাস্তিক/অজ্ঞেয়বাদী/ধর্মহীন ছিলেন না, তাদের মত ইসলামিক চিন্তাবিদেরা যদি সেক্যুলারিজমের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন, তাহলে আমাদের দেশের সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠী কেন পারবে না ?  


লিংকঃ http://forum.urduworld.com/f101/quaid-e-azam-islam-pakistan-329785/

তবে উল্লেখ্য, সরোজিনী নাইডু অভিহিত আম্ব্যাসেডর অব হিন্দু মুসলিম ইউনিটি খ্যাত ধর্মনিরপেক্ষ মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ জীবনের শেষদিকে তার ভুলটি বুঝতে পেরেছিলেন, ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের প্রতি ক্রমশঃ তিনি বিতৃষ্ণ বা মোহমুক্ত হয়ে পড়ছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ অভিন্ন ভারতবর্ষই ছিল বিচক্ষণপন্থা ।

সূত্রঃ

It is said that when the then Viceroy of India, Lord Louis Mountbatten, learned of Jinnah's ailment he said 'had they known that Jinnah was about to die, they'd have postponed India's independence by a few months as he was being inflexible on Pakistan'.(Collins, L; Lapierra, D, 1975, Freedom at Midnight, Preface p. xvii)

আসুন এই সুযোগে শুনে নেই প্রখ্যাত গজলশিল্পী জগজিৎ সিংয়ের সেই বিখ্যাত গানটি

ম্যায় না হিন্দু না মুসলমান, মুঝে জিনে দো দোস্তি হ্যায় মেরা ঈমান, মুঝে জিনে দো



ভিডিওর শেষে দেখুন হিন্দু মুসলিমের এই সম্প্রীতিই কি আমাদের কাম্য নয় ? অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতাই পারে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টানকে একই সূত্রে বাঁধতে ।

যাই হোক, সেক্যুলারিজম নিয়ে উইকিপিডিয়ার বিশ্লেষণটি দেখা যাক -


Secularism is the belief that government or other entities should exist separately from religion and/or religious beliefs.In one sense, secularism may assert the right to be free from religious rule and teachings, and the right to freedom from governmental imposition of religion upon the people within a state that is neutral on matters of belief. (See also Separation of church and state and Laïcité.) In another sense, it refers to the view that human activities and decisions, especially political ones, should be unbiased by religious influence.

সূত্রঃ Kosmin, Barry A. "Contemporary Secularity and Secularism." Secularism &amp; Secularity: Contemporary International Perspectives. Ed. Barry A. Kosmin and Ariela Keysar. Hartford, CT: Institute for the Study of Secularism in Society and Culture (ISSSC), 2007.

অর্থাৎ, সরকার এবং তৎসংশ্লিষ্ট সস্থাগুলো ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস আচারাদি দ্বারা পরিচালিত হবেনা। এক সেন্সে, এটি ধর্মীয় আইনকানুন এবং শিক্ষা থেকে নিজেকে মুক্ত করা, আবার অন্য সেন্সে, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধর্মীয় পক্ষপাতদুষ্টতা বা বৈষম্য যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে প্রবর্তিত একটি মতবাদ ।


এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত, কেননা এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনেকেই সেক্যুলারিজমকে প্রথমে উল্লেখিত ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নেয় । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে -সেক্যুলারিজম শব্দের এহেন দ্ব্যর্থকতার কারণে সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা দুটি শব্দই সংবিধান থেকে নিশ্চিতভাবে বাদ দেওয়া উচিত এবং সেক্যুলারিজমের স্থলে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা উল্লেখ করে সংবিধান সংশোধন করা উচিত । এ প্রসঙ্গে জর্জ হোলিয়ক তার ইংলিশ সেক্যুলারিজম গ্রন্থে সেক্যুলারিজম মূলত কাদের জন্য প্রযোজ্য এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন -

Secularism is a code of duty pertaining to this life, founded on considerations purely human, and intended mainly for those who find theology indefinite or inadequate, unreliable or unbelievable. Its essential principles are three: (1) The improvement of this life by material means. (2) That science is the available Providence of man. (3) That it is good to do good. Whether there be other good or not, the good of the present life is good, and it is good to seek that good.

সূত্রঃ

Holyoake, George J. (1896). English Secularism. Chicago: The Open Court Publishing Company.

অর্থাৎ যারা ধর্মকে অনির্দিষ্ট, অপর্যাপ্ত, অনির্ভরযোগ্য এবং অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন, মূলত তাদের জন্যই সেক্যুলারিজম প্রযোজ্য । তবে এটাও বলেছেন

Holyoake held that secularism and secular ethics should take no interest at all in religious questions (as they were irrelevant), and was thus to be distinguished from strong freethought and atheism.

সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Secularism

সেক্যুলারিজম এবং সেক্যুলার এথিকের যে কোন ধর্মসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবস্থান নেওয়া উচিত নয় এবং তাই মুক্তচিন্তা এবং নাস্তিক্য থেকেও এটি পৃথক থাকা দরকার । আবার চার্লস ব্র্যাডলহ, পিটার সিঙ্গার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ একে পুরোদস্তুর নন-রিলিজিয়াস মতাদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন । অর্থাৎ এখানেও আবার সেই দ্ব্যর্থকতা ।

তাই সংবিধানে শুধু সেক্যুলারিজম শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করাটা সঠিক হবেনা , বরং মতদ্বৈততা এবং বিভ্রান্তি বেড়েই চলবে। স্টেট সেক্যুলারিজম শব্দটি বিভ্রান্তি এবং মতপার্থক্য নিরসনের একটি তুলনামূলক ভালো বিকল্প হতে পারে। সেক্যুলার স্টেট বলতে বোঝায়

A secular state is a concept of secularism, whereby a state or country purports to be officially neutral in matters of religion, supporting neither religion nor irreligion


সূত্রঃ
) Madeley, John T. S. and Zsolt Enyedi, Church and state in contemporary Europe: the chimera of neutrality, p. , 2003 Routledge
) http://en.wikipedia.org/wiki/Secular_state

অর্থাৎ সেক্যুলার স্টেট সেক্যুলারিজমেরই একটি শাখা বা মতবাদ যেখানে শুধুমাত্র স্টেট বা রাষ্ট্র ধর্মের যাবতীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকবে (ব্যক্তিগত বিষয়ে নয়, কেননা রাষ্ট্রের কাজ রাষ্ট্র সংক্রান্ত, ধর্মে ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস নিয়ে নয় ), অর্থাৎ ধর্মের সপক্ষেও যাবেনা কিংবা বিপক্ষেও যাবেনা, ধর্ম নয় বরং মানবিকতা এবং জনগণের যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অবস্থান নির্ধারিত হবে । উইকিপিডিয়াতে দেখি

A secular state also claims to treat all its citizens equally regardless of religion, and claims to avoid preferential treatment for a citizen from a particular religion/nonreligion over other religions/nonreligion.

অর্থাৎ, সেক্যুলার স্টেটে রাষ্ট্রের সকল জনগণকে সমানভাবে গণ্য করা হবে, নির্দিষ্ট ধর্মের জনগণের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা থাকবেনা । এই যে - নির্দিষ্ট ধর্মের জনগণের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা বা অধিকতর সুযোগসুবিধা প্রদান কিংবা অন্য ধর্মের প্রতি বৈষম্যকরণ এবং সংখ্যালঘু শব্দটি, এগুলো রাষ্ট্র সমাজ এবং জনগণের জন্য ক্ষতিকারক, এবং ধর্মীয় রাষ্ট্রে এই বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে ঘটে বলেই স্টেট সেক্যুলারিজম মতবাদের উৎপত্তি ।
 
ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয় কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করা। এক অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রকাশ করে। এই মতবাদ অনুযায়ী,সরকার কোনরূপ ধর্মীয় হস্তক্ষেপ করবে না,কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবে না এবং কোন ধর্মে কোন প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করা হবে না। ধর্মনরপেক্ষতা সেই বিশ্বাসকে ধারণ করে যাতে বলা হয় মানুষের কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধাণ্তগুলো, বিশেষত রাজনীতিক সিদ্ধান্তগুলো, তথ্য এবং প্রমাণ এর নির্ভর করবে,কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নয়। অর্থাৎ বলা যায় - ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। রাজনৈতিক ব্যবহারের দিক থেকে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা হল ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করার আন্দোলন,যাতে ধর্মভিত্তিক আইনের বদলে সাধারণ আইন জারি এবং সকল প্রকার ধর্মীয় ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ গড়ার আহবান জানানো হয়। উপমহাদেশে সেক্যুলারিজম শব্দটির মূল অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়না। যেখানে অন্যান্য দেশে সেক্যুলারিজম বলতে ধর্ম এবং রাষ্ট্র পৃথক থাকবে বোঝানো হয়, সেখানে উপমহাদেশে এটি সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় । আমি এই লেখায়  সেক্যুলারিজম বলতে ২য়টিকেই বোঝাবো, যেহেতু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ২য়টিই অধিকতর প্রাসঙ্গিক বা  যুক্তিযুক্ত ।

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র যে ব্যর্থ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাকিস্তান। পাকিস্তান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র, সেখানে আজ পর্যন্ত কোন হিন্দু বা খ্রিষ্টান দেশের সর্বোচ্চ পদগুলোতে অধিষ্ঠিত হতে পারেনি, তাদের কেউই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেনি, সেদেশে জঙ্গিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে এবং এই জঙ্গিবাদের কারণে প্রতিদিন অকাতরে যে মানুষগুলো মরছে, তারা কিন্তু মুসলিমই । সেক্যুলারিজম নেই বলেই সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্যহীনতা, বৈষম্য, অরাজকতা, পক্ষপাতদুষ্টতা, জঙ্গিবাদের উত্থান, মানবাধিকারের ভূলুণ্ঠিত অবস্থা । সেখানে আজও খ্রিষ্টান ধর্মাবলবম্বীদের আগুনে পোড়ানো হয়, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীদের সংস্কারমূলক কাজের পরিণাম হয় তাদের জীবননাশ, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সন্তান হরহামেশা কিডন্যাপ করা হয়, রিপোর্ট হয়না, হলেও লাভ হয়না । সেক্যুলারিজম থাকলে ধর্মের নামে এই অরাজকতাগুলো হতে পারতো না । সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের ৪% ভিন্ন ধর্মবলম্বী জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হতো, দেশের ৯৬% জনগণের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এবং সম্প্রীতিবোধের সৃষ্টি হতো, তখন হিন্দু মুসলিম উভয়ে মিলে দেশের জন্য সমান মমত্ববোধ নিয়ে কাজ করতো । কিন্তু সেক্যুলারিজম নেই বলে আজ সেখানে মুসলমানদের চরম আধিপত্য এবং স্বেচ্ছাচার, হিন্দুদের কৌশলী এবং দেশপ্রেমহীন ভারতপন্থী মনোভাব, জঙ্গিবাদের আগ্রাসন, রাষ্ট্রে অন্যায় ও দুর্নীতির চরম উত্থান । তাহলে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বানিয়ে পাকিস্তানের কি আদৌ কোন  লাভ হলো

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশও ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর একটি, পাকিস্তানের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশও সেই পাকিস্তানেই পরিণত হয়েছে, দুর্নীতিতে ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত পাকিস্তানের চেয়েও উৎকর্ষ লাভ করে বাংলাদেশ, যার কারণে পরপর ৫ বছর দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়, জঙ্গি বিষয়ে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তান থেকে তুলনামূলক কম উৎকর্ষ (!) লাভ করলেও বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদ ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো, বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, ইলিয়াস কাশ্মিরী, মুফতী হান্নান, সাহেব আলি, রফিকুল ইসলাম, একরামুল হক ইত্যাদি ইসলামিক জঙ্গিবাদীরা বিএনপি-জামাত শাসনামলে দেশে দোর্দণ্ড প্রতাপ চালিয়েছে। নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, একদিনে ৫০১ টি বোম্বব্লাস্ট করেছে, শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা করেছে, আইভী রহমান সেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান ধর্মে বিশ্বাসহীন ছিলেন বলে তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, বাংলার সক্রেটিস বলে খ্যাত বহুমাত্রিক লেখক ডঃ হুমায়ুন আজাদ তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন । আক্রান্ত হয়েছেন আরো অনেকেই, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হলে এই জঙ্গিবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যা রাষ্ট্রের প্রভূত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় । আফগান যুদ্ধের সময় থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং পাক গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই মিলে তালেবানের মত জঙ্গিবাদী দলের সৃষ্টি করেছিলো, ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার পর থেকেই এই দুইয়ের প্রভাবে এদেশে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল এবং উত্তরোত্তর জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

২০০১ সালের ১-২ কোটি ভুয়া ভোটার সম্পন্ন নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোটের অবিশ্বাস্য বিজয়ের পরে তাদের নেতাকর্মীরা এথনিক ক্লিনজিং করতে সচেষ্ট হন, সংখ্যালঘুরা একসময়কার ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী আওয়ামীলীগকে  ভোট দেয় বলে তাদের পরিবারের নারীদের প্রতি চলে বিএনপি-জামাত জোটের উন্মত্ত পাশবিকতা, অজস্র হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়, অজস্র নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় বা নীরবে চুপ করে থাকে আর আমরা শহরের বাসিন্দারা শহরে বসে আরামে ভাবলেশহীনভাবে দিনাতিপাত করে যাই । হিন্দু নারীদের প্রতি এই গণধর্ষণ মনে করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পাশবিক যৌনউন্মত্ততার কথা । তাহলে, বিএনপি-জামাত নেতাকর্মী এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মধ্যে পার্থক্য থাকলো কি ? ১৯৭১ সালে ধর্ষিতা নারীদের আমরা সম্মানের সঙ্গে বীরাঙ্গনা বলে অভিহিত করি । এই হিন্দু নারীগণও কি বীরাঙ্গনা নয় ? যুদ্ধাপরাধী এবং নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিচার হলে বিএনপি জামাতের এই নেতাকর্মীদের বিচার হবেনা কেন ? অথচ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে মানবতার প্রতি এই চরম অন্যায়কর্মটি সম্পন্ন হতে পারতো কি ?

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক নামকরা ব্যক্তিবর্গ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রভূত অবদান রেখেছেন, দেশের জন্য কাজ করেছেন, ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ । জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, আনন্দ পায়ান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, শিবসদন চক্রবর্তী, এস কে লাল, হেমচন্দ্র বসাক, হাসিময় হাজরা, নরেন ঘোষ, এস কে সেন, অমূল্য কুমার চক্রবর্তী, আর সি দাস, মিহির কুমার সেন, অনীল কুমার সিনহা, সুনীল চন্দ্র শর্মা, কাজল ভদ্র, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, ইন্দু সাহা, দানবীর রনদ প্রসাদ সাহা, যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ বুদ্ধিজীবী ১৯৭১ সালে নিহত হয়েছিলেন ।

সূত্রঃ Bangladesh: A souvenir on the 1st anniversary of victory day december 16, 1972 Page – 88-89)

হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতায় সাফ হয়ে যায় । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেই জনগোষ্ঠীর এত বিশাল অবদান,তাদের বঞ্চিত করে কেন আজকে দেশের সংবিধান রচনা করা হবে ?

 

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে বলেই আজকে অনেকে ব্লাসফেমী আইনের কথা বলতে পারছে, নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীদের হুমকি দেওয়া কিংবা আক্রমণ করার মাধ্যমে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং অমান্য করার  ধৃষ্টতা দেখাতে পারছে । রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে বলেই অন্যান্য ধর্মের জনগণকে আলাদা করে দেখার একটা সুযোগ তৈরী হয়েছে । তাদেরকে সংখ্যালঘু বলার মওকা পাওয়া গেছে, তাদেরকে পৃথক গোষ্ঠী হিসেবে অনেকটা জিম্মি করে রাখার সুযোগ পাওয়া গেছে, অর্থাৎ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দিয়ে বাংলাদেশের সংহতি এবং ঐক্যকে বিনষ্ট করার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু,নামাজী এবং রোজা রাখেন ;ধর্ম পালন করেন তাতে কোন আপত্তি আগেও ছিলোনা,এখনো নেই ।যখন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিলো,তখনও এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত ছিল এবং তারা ধর্মীয় সবকিছুই ঠিকমত পালন করেছে । সে সময়ের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মানুষ যদি ধর্মহীন না হয়ে থাকে, তাহলে আজকেও হবেনা । তাই যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে প্রচার করতে চায় তারা কি চরম মিথ্যেচার করেনা ?

১৯৭২ সালের সেই সুভ্যেনিরে বিএনপিপন্থী অধ্যাপক সৈয়দ আলি আহসান বলেছেন

It was not possible for the Bangalees to carry on their life in Pakistan under an artificially imposed sense of religious restrictions giving up all their intrinsic feelings and emotions and obliterating the last trace of their distinctive existence


সূত্রঃ Bangladesh: A souvenir on the 1st anniversary of victory day december 16, 1972 Page-12
 
চিত্রঃ ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের ১ম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা
বাঙালি জাতি যে ধর্মনিরপেক্ষ জাতি ছিলো,হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রীতিতে পূর্ণ আস্থাবান ছিলো তার প্রমাণ সৈয়দ আলি আহসানের এই বাক্যটি । সেসময়ে এদেশের জনগণ ধর্মভিত্তিক বা ইসলামী আবেগে পরিচালিত হয়নি বরং গনতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মহামন্ত্রে পরিচালিত হয়েছিল। সেজন্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম সংবিধানে দেশ পরিচালনার জন্য এই চারটি মূলমন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো । এ নিয়ে সেসময়ে কোন বিতর্কের ঝড় ওঠেনি, কেননা জনগণের প্রত্যাশা এমনই ছিলো । গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় কোন বিশেষ ধর্ম উল্লেখিত থাকতে পারেনা, এমনটি হলে সেটি আর গণতান্ত্রিক থাকেনা, হয়ে যায় একনায়কতান্ত্রিক । তাই একনায়কতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাটা নিশ্চিতভাবেই গনতন্ত্রের নীতির সঙ্গে চরমভাবে সাংঘর্ষিক ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরাচার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দেশের পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তারই একটি ছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকেই ধর্ষিত করা হয়েছিলো, এটি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ হয়নি সামরিক শাসক এবং রাজাকারদের মদদদাতা জিয়াউর রহমানের।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বহাল করে সংবিধান থেকে যেসব বিষয় বাদ দেয়া হয়েছিল তা হলো

১)জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিয়ে করা হয়েছিল জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ (মুক্তিযুদ্ধ শব্দটাই মুছে ফেলার অপচেষ্টা, জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ শব্দটির প্রতি এত বিদ্বেষ ছিলো কেন ?)

২)বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ (নাগরিকত্ব বাংলাদেশী হতে পারে কিন্তু জাতীয়তাবাদ আজকের বা ১৯৭১ সালের প্রতিষ্ঠিত বিষয় নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ হাজার বছরের জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলো, তাই নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা একেবারেই কাম্য নয় )

৩)ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছিল এবং

৪)সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র।


এই সেই জিয়াউর রহমান যিনি প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেনই না, সম্প্রতি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন,জিয়া মুক্তিযুদ্ধের কোন পর্যায়েই সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। ছিলেন প্রথম দিকে এরিয়া কমান্ডার। পরে জেড ফোর্সে কমান্ডার (কালের কণ্ঠ, ৯ ডিসেম্বর ২০১০) তিনি ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে চরম উচ্চাভিলাষী, যে কারণে নিজেকে মুক্তিসংগ্রামের প্রধান হিসেবে দাবী করে কালুরঘাটে রেডিওতে ঘোষণাও করেছিলেন (সেটি প্রচার করা হয়নি), অধঃস্তন কর্মকর্তাদের চাপে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ১৯৭৫ সালে কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং ১৯৭৯ সালে তাকে বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে জিয়াউর রহমান দেশের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেন, জয়পুরহাটের রাজাকার আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী বানান, সেই ধারাবাহিকতায় ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি শাসনামলে রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রী বানানো হয় । দেলোয়ার হোসেন সাইদীরা বিএনপি জামাত জোটের ব্যানারেই এমপি নির্বাচিত হন ।

দ্রোহের লেখক সাংবাদিক সানাউল্লাহ লিখেছেন,

জিয়া অনেকটা পরিস্থিতির চাপে আর খালেদ মোশাররফ পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন

সূত্রঃ http://www.droho.net/?p=1348
http://www.shobdoneer.com/mdjakirhosain/10053

একই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন

১৯৭১ সালে জিয়া পাকিস্তান বাহিনীর হয়ে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন। অধস্তন সৈন্যদের চাপে বাধ্য হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন


সূত্রঃ http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&amp;view=article&amp;id=2008:2011-02-01-16-45-30&amp;catid=49:2010-08-31-09-43-32&amp;Itemid=83

এজন্যই বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন

একবার যে রাজাকার, সব সময়ই সে রাজাকার। কিন্তু একবার যে মুক্তিযোদ্ধা, সব সময় মুক্তিযোদ্ধা না-ও থাকতে পারে।

এই সেই জিয়াউর রহমান, যিনি

১. জিয়া বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নসাধ স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুনিয়াব্যাপী সাড়া জাগানো রণধ্বনি জয়বাংলা_কে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন।
২. জিয়া সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করছেন, সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটি মুছে ফেলেছেন।
৩. জিয়া হানাদার পাকি-সামরিক জান্তার সহযোগী ঘৃণিত মুসলিম লীগ জামায়াতীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন।
৪. জিয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে বিভ্রান্ত বাম চৈনিকদের রাজনীতির ঘরবাড়ি দিয়েছেন।
৫. জিয়া কুখ্যাত রাজাকার-এ-আযম গোলাম আযমকে দেশে এনে পুনর্বাসন করেছেন।
৬. জিয়া আব্দুল আলিম এবং শাহ আজিজুর রহমানের মত রাজাকারদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।
৭. জিয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে বড় বড় চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।
৮. জিয়া দালাল আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন ১১ হাজার রাজাকার আল-বদরকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেন।
৯. জিয়া টাকা-পয়সা কোন সমস্যা নয় (Money is no Problem) বলে গোটা সমাজকে নীতিহীন দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার পথ তৈরি করেছিলেন।
১০. জিয়া হিযবুল-বাহার রাজনীতি করে দেশের মেধাবী ছাত্র ও যুব সমাজকে আদর্শহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেন।

তাই তার রাজাকার ও তার দোসর পরিপুষ্ট বিএনপি সরকারের আমলের সংবিধান কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা, তার কত বড় ধৃষ্টতা যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শব্দটি পালটে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন । ধর্মনিরপেক্ষতাকে গলা টিপে হত্যা করে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশের মানুষকে ধর্মান্ধ এবং অমানবিক অবিবেচক করে তুলতে চেয়েছেন ।

আজকে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ছেলেমেয়েদের ভারতে পাঠিয়ে দেন, নিজের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়েই তাদের এহেন সিদ্ধান্ত । দিনদিন অবহেলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, অন্যায় এবং বৈষম্য সয়ে সয়ে আজকে তারা দেশ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত, তাদের দেশপ্রেম জাগবে কিভাবে যদি তারা তাদের মানবিক অধিকার না পায় ? কেন একটি অনুষ্ঠানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম শুধু আবৃত্তি করা হবে ? কেন একজন হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানের ধর্মের প্রথম বাণী আবৃত্তি করা হবেনা ? তবে কি তারা দেশের ২য় শ্রেণীর নাগরিক ? শুধু বিসমিল্লাহ উচ্চারণে কি তাদের ধর্মানুভূতি আহত হবেনা ? তারা কি নিজেদের বঞ্চিত বলে মনে করবেনা ? কেন আমরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র এবং বিসমিল্লাহ প্রবর্তনের মাধ্যমে তাদেরকে দেশবিমুখ করে তুলবো ? কেন আমরা তাদের অধিকার না দিয়ে এবং অত্যাচার নির্যাতন করে বাংলাদেশ বিদ্বেষী করে তুলবো ? এদেশে তাদের জন্ম, তারা এদেশের নাগরিক, তারা এদেশের জন্যই কাজ করবে, অন্য দেশের জন্য নয়। কেন তারা ভারতে চলে যাওয়ার চিন্তায় থাকবে ? কেন তারা ছেলেমেয়েদের ভারতে পড়াশোনা করতে এবং সেটল হতে পাঠাবে ? ১৯৭১-এ তাদের যেরূপ অবদান, ২০১১ তেও তারা সেরূপ অবদান রাখতে পারতো যদি তাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করা হতো । এই সবকিছুর মূলে এই সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাত । পুরো দেশটাকে নষ্ট করে দিয়ে গেছে সে, পয়সা দিয়ে সুযোগ সুবিধা দিয়ে এদেশের বেশ কিছু মানুষের বিবেক কিনে নিয়েছিলো এই কুখ্যাত ব্যক্তিটি, দম্ভের সাথে ঘোষণা করেছিলো-আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিক্যাল্ট । সেই জালে শেষ পর্যন্ত সে নিজেও ফাঁসলো, ১৯৮১ সালেই এই ধূর্ত উচ্চাভিলাষী শাসকের মহাপতন । কিন্তু দেশটা ততদিনে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।


১৯৮২ সালে বিশ্ববেহায়া হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন । জিয়াউর রহমান চাপে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু মনে মনে তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলোনা, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তার কোন কৃতিত্ব বা অবদানের নজীরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাওয়া যায়না, আর হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তো মুক্তিযুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেননি ।

বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তিনি পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও ফিরে আসেন

সেই এরশাদ ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রের ধর্ম আবিষ্কার করেন, অবশ্য এর জন্য নোবেল পুরস্কার তিনি পাননি, জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহ লাগিয়ে বাংলার সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন, হুসেন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বুকে নির্দ্বিধায় ছুরি বসিয়ে দেন । বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু কখনোই দাবী করেনি, রাষ্ট্রধর্ম এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার, এক এরশাদ এসে তার বিকৃত মস্তিষ্ক থেকে এই বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে দেন। বাংলাদেশে আজকে এরশাদের সমর্থক কজন ? আর রাষ্ট্রধর্ম করার বিরোধিতা করে শুধু আওয়ামী লীগ কেন, বিএনপি ও বিএনপিপন্থী ৭ দল ১৯৮৮ সালে সফল হরতাল পালন করেছিল, সেটি এদেশের তরুণ প্রজন্ম হয়তো জানেনা, কেননা তাদের জন্ম হয়নি বা শিশু অবস্থায় ছিলো তারা, কিন্তু তাদের পূর্বসূরিরা তো জানেন, সেটি কেন তারা তাদের সন্তানদের বলেন না ?


সেই বাংলাদেশের মূলনীতির গায়ে এবার ছুরি বসাতে যাচ্ছেন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাদের প্রধান প্রবক্তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আসলে ভয় পেয়েছেন, আড়াই বছরের সরকার বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করলেও সেগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তপনা এবং মন্ত্রী-আমলাদের অবিবেচক উদ্ভট বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে। মুহাম্মদ ইউনূস লিমন শেয়ার বাজার- ছাত্রলীগ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনসমালোচিত হচ্ছে সরকার, বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দিলে আবারো জনসমালোচিত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে, তাই বাস্তবতার নীরিখে তিনি এবিষয়ে উচ্চবাচ্য করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন, তাছাড়া বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দিলে তাদের প্রধান শরীক জাতীয় পার্টির হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নাখোশ হবেন আর মহাজোট থেকে এরশাদ সরে দাঁড়ালে তার পুরো ফায়দা লুটবে রাজাকারদের দল বিএনপি এবং জামাত  - এমনটা আশংকা করেই শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছেন না, দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ তিনি বিএনপি জামাতের হাতে তুলে দিতে চাননা, মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট করে স্বীয় ভোটব্যাংক নষ্ট করতে তিনি একেবারেই আগ্রহী নন । তাই অবশ্যই এটি একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত । কেননা, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি আসবে। আর ক্ষমতা ছাড়া দেশের উন্নতি করা একেবারেই সম্ভব নয়, তাই সেই বিচারে বিসমিল্লাহ নিয়ে বাড়াবাড়ি এই মুহূর্তে না করার শ্রেয় । কিন্তু সমাধান এটি নয় । সমাধান তখনই হতে পারে, যখন ইসলামের সাথে সাথে বাকি ৩টি ধর্মকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে বাকি ৩টি ধর্মের প্রথম বাণীগুলোও উচ্চারিত হবে । এমনটি হলে এদেশের হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কেউই অসন্তুষ্ট হবেনা, সকলেই খুশি থাকবে সরকারের প্রতি, মুসলিম দলগুলোও সরকারের বিরুদ্ধে যুৎসই ইস্যু পাবেনা কেননা, অন্য ধর্মের বিপক্ষে বলতে গেলেই তারা সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়বে এবং তখন প্রশ্ন উঠবে আসলেই কি ইসলাম সাম্প্রদায়িক ধর্ম ? তাই, ধর্মভিত্তিক দলগুলো এটি নিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবেই না । আবার, বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসলে তারা যদি এটি পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে মানুষ বুঝে ফেলবে যে বিএনপি সাম্প্রদায়িক এবং অন্যান্য ধর্মবিদ্বেষী, এবং সেজন্য বিএনপি সেক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়ে যাবে । তাই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত যে ভুল তা বলা যায়না ।

তবে আওয়ামী লীগে এখন অনেক ডানপন্থী স্বার্থান্বেষী চক্র ঢুকে পড়েছে,এরা আওয়ামী লীগের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে,এরা আওয়ামী লীগের মূল আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগকে পদে পদে বিচ্যুত করবে,এরা পয়সাওয়ালা শ্রেণী,এদের টাকার খেলায় দরিদ্র বামপন্থী আওয়ামী লীগাররা পেরে উঠবে না । ফলে ডানপন্থীদের হাতে চলে যাবে আওয়ামী লীগের সকল নিয়ন্ত্রণ, আওয়ামী লীগের পতনের মূল কারণ হবে এই ডানপন্থী ব্যবসায়ী শ্রেণী । ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের ভাঙনের জন্য এই আওয়ামী লীগই দায়ী, তাই ভেতরে ভেতরে ধর্মপন্থী ডানপন্থীদের যতই খুশি করা যাক না কেন তারা কোনদিনও আওয়ামীকে মন থেকে সমর্থন দেবেনা, এরা সুযোগসন্ধানী, আজকে আওয়ামী লীগ বলে স্তবস্তুতি করছে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে পরাজিত হলে এদের সুর পাল্টে যাবে, এদের টীকিটিও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । দেশের জন্য ভালো কাজ করে দেখাতে পারলে জনগণ ঠিকই পুনরায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে,এর জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে বিসর্জন দিয়ে ডানপন্থীদের খুশি করার প্রয়োজন নেই ।  খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা চলনে বলনে অনেক বেশি ধর্মপ্রাণ পরহেজগার হলেও সেটিতে কোন প্রভাব পড়বেনা কেননা, পাকিস্তান ভেঙে আওয়ামী লীগ তার ইমেজ তৈরি করে ফেলেছে,তাই ইসলামপন্থী দলগুলো এর জন্য কখনোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করবেনা, বঙ্গবন্ধু তো ইসলামিক একাডেমিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন করেছিলেন,জোটনিরপেক্ষ দল থেকে ওআইসি তে যোগদান করেছিলেন,পাকিস্তান ও ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো থেকে স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালিয়েছিলেন,লাভ হয়েছিলো কিছু ? ইসলামপন্থীদের মন্ত্রীসভায় রেখে দিলেন,তাজউদ্দিন আহমেদের মত সৎ এবং ধর্মনিরপেক্ষ মন্ত্রীকে ভুল বুঝে অপসারিত করলেন,কি লাভ হলো ? সেই যাদের মন্ত্রীসভায় এবং বিভিন্ন পদে রেখে দিয়েছিলেন, তারা খন্দকার মোশতাক আহমেদ,তাহেরুদ্দিন ঠাকুর,মাহবুবুল আলম চাষী এবং ইসলামপন্থী আর্মিদের একাংশ দ্বারাই তো শেষমেশ নৃশংসভাবে নিহত হলেন। শেখ হাসিনাও একই ভুল করতে যাচ্ছেন,বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে অনেকেই প্রাণভয়ে চুপ ছিলেন,এটিকে শেখ হাসিনা তার মস্তিষ্কে সেট করে রেখেছেন,কিন্তু তারা যে পরিস্থিতির কারণেই চুপ ছিলেন সেটি তার চোখে পড়ছে না । তিনি বলেছেন -'পঁচাত্তরের পরে আমি সব কিছুই জানি,দেখেছি। যখন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল তখন কেউ এগিয়ে আসেনি।'তিনি আরও বলেন,'আমি যখন জেলে ছিলাম তখন কে কী করেছে,আমি সব জানি। যেটা করা হয়েছে সেটা বাস্তবতার নিরিখে করা হয়েছে।'(কালের কণ্ঠ ২১শে জুন ২০১১)
  

চিত্রঃ ধর্মনিরপেক্ষতায় মহামন্ত্রে বিশ্বাসী দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা, বামে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপ্রধান একে খন্দকার এবং ডানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরিকল্পনামন্ত্রী একে খোন্দকার  বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রবীণ সদস্য । তারা সংবিধানে বিসমিল্লাহ রাখার বিরোধিতা করার কারণে শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন,এমনটি তাঁর কাছ থেকে শোভা পায়না । তাঁর ভেতরে পরিবার হারানোর চরম কষ্ট,সেই কষ্ট আমরা কোনদিনও বুঝতে পারবো না কেননা কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে কিন্তু তারপরও তাকে ধৈর্য ধারণ করা উচিত,তিনি প্রধানমন্ত্রী,মা যেমন সন্তানের জন্য কোনকিছুর আশা না করেই নিঃস্বার্থভাবে করে যায়, তাকেও তেমনটি করে দেখাতে হবে। কথাবার্তায় আরো সংযত হতে হবে, কেউ কটুক্তি করলে তাকে প্রত্যুত্তর দেওয়া যাবেনা,তাতে যত কষ্টই হোক না কেন । এই বাকি আড়াই বছর আওয়ামী লীগের জন্য এসিড টেস্ট,তিনি এবং তাঁর মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের মন্তব্য করার সময় সাবধান থাকতে হবে,ছাত্রলীগের সন্ত্রাসকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে,দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে,কৃষকের উন্নয়নের জন্য আড়তদার এবং মজুতদার ব্যবসায়ীরা যাতে খাদ্যদ্রব্য গুদামে রেখে কৃত্রিম খাদ্যসংকট এবং খাদ্যমূল্যের বৃদ্ধি না করতে পারে,সেজন্যে নতুন আইন বানাতে হবে । শেয়ারবাজারের ঘটনা নিয়ে দিনের পর দিন অতিবাহিত করলে তা আওয়ামী লীগের ইমেজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, লিমন ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে । সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো,আবেগের বশে মন্তব্য এবং নিজেদের সাফল্য নিয়ে সাফাই গাওয়া যাবেনা,যতবড় সাফল্যই আসুক না কেন। জনগণ সাফাই গাওয়া এবং উদ্দেশ্যবিহীনভাবে বিরোধীপক্ষকে দোষারোপ করা একেবারেই পছন্দ করেনা,এগুলো অবশ্য বর্জনীয় ।


৪ নবেম্বর (১৯৭২) গণপরিষদে সংবিধান গ্রহণের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেয়ার ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানী, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যভিচার এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি। কেউ যদি বলে গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার নেই, আমি বলব সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যদি গুটিকয়েক লোকের অধিকার হরণ করতে হয়, তা করতেই হবে।

এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কেননা, ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয় সেটি শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন । ধর্মহীনতাবাদ = Atheism / Irreligionism কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ = Secularism, not atheism or irreligionism. যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে ধর্মহীনতাবাদ হতো তাহলে তো সেক্যুলারিজম শব্দটি লেখার প্রয়োজন পড়েনা, তাহলে অ্যাথেইজম বা ইরিলিজিয়নিজম বললেই তো হয়। তাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আর নাস্তিক্যবাদ/ধর্মহীনতাবাদ যে এক জিনিস নয় এখান থেকেই সুস্পষ্ট । সরলভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এমন অভূতপূর্ব চমৎকার বর্ণনা বিশ্বের আর কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই ।

সৈয়দ মুজতবা আলী ও সন্তোষ কুমার ঘোষের সঙ্গে আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

স্বাধীন বাংলাদেশ ও সেক্যুলার বাঙালী জাতির অস্তিত্বের রক্ষাকারী হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আমি এই ধর্মনিরপেক্ষতার চারা বাংলাদেশের মাটিতে পুঁতে রেখে গেলাম। যদি কেউ এই চারা উৎপাটন করে তাহলে বাঙালী জাতির স্বাধীন অস্তিত্বই সে বিপন্ন করবে। (কলকাতার দৈনিক যুগান্তর, ২৯ নবেম্বর ১৯৭২ )

তারপরেও ভাষাগত দ্বৈততা/দ্ব্যর্থকতার কারণে যদি সেক্যুলারিজমকে স্টেট সেক্যুলারিজম বলে উল্লেখ করা হয় এবং তার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু কথিত ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয় তবে সেক্যুলারিজম নিয়ে সমস্যার অনেকটাই দূর হয়। যেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিশাল অংশ সচেতনভাবে শিক্ষিত ও জ্ঞানী নয়, তাই এই স্টেট সেক্যুলারিজম হিসেবে উল্লেখ করার চেয়েও তুলনামূলকভাবে অধিকতর যুক্তিযুক্ত হলো কোন ইসম বা মতবাদে না যেয়ে সুস্পষ্টভাবে লেখা, সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা । ৪টি ধর্মের প্রত্যেক ধর্মের ১ম বাণীটি উল্লেখ করে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে, এমনটি বাধ্যতামূলক করা হলে দীর্ঘ পরিসরের বিচারে ভবিষ্যতে ধর্মান্ধতা এবং পরধর্ম বিদ্বেষ অনেকটাই হ্রাস পাবে।  উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ বিলোপ করা হয়েছিল কিন্তু  সকল ধর্মকে সমান মর্যাদা দেওয়া হতো । তাই  বেতার এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরান শরীফ, গীতা, বাইবেল এবং ত্রিপিটক প্রত্যেকটি থেকেই পাঠ করা হতো । এটিই যুক্তিযুক্ত, কেননা এতে কোন ধর্মের জনগণই অসন্তুষ্ট হবেনা, ফলে ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্য বজায় থাকবে ।
 
১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে যে ভিত্তিগুলো কাজ করেছিল,তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভিত্তিটা ছিলো ভাষা,বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারার স্বাধীনতা। বাংলাদেশের জন্ম, নামকরণ সবকিছুর ভিত্তি বাংলাভাষা। আর সেই দেশের সংবিধানের ১ম শব্দটিই যদি আরবীশব্দ হয়,তাতে বাংলাদেশের ভিত্তিটিই কি নষ্ট হয়ে যায়না ? যেই ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীতে ছাত্রেরা অকাতরে প্রাণ দিলো,যেই একুশের চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে একে একে আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখলাম,যেই একুশের চেতনার কারণেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা লাভ,সেই দেশের সংবিধানের প্রথম বাক্যটি আরবী শব্দের বিসমিল্লাহ না হয়ে কি বাঙালি জাতীয়তাবাদ হতে পারেনা ? বিসমিল্লাহ থাকুক, কিন্তু সাথে সাথে অন্য ৩ ধর্মের ১ম লাইনও থাকুক, কেননা,এদেশ মুসলমানের একার সম্পত্তি নয়,এদেশ মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকলের । তাই স্বাধীন বাংলাদেশের গড়ে ওঠার প্রাক্কালে রচিত দেশপ্রেমের সেই অমর ধর্মনিরপেক্ষ গান দেশদরদী শিল্পী রথীন্দ্রনাথের দরাজ কণ্ঠের সাথে সাথে আমাদের হৃদয়েও আলোড়ন তুলুক, আমাদের বিবেককে জাগ্রত করুক -
আমারি দেশ সব মানুষের -হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান দেশমাতা এক সকলের । মন্দির মসজিদ গির্জার আবাহনে বাণী শুনি - একই সুরে আমারি দেশ সব মানুষের সব মানুষের



শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় যে দরদভরা কন্ঠে গান গেয়েছেন, যে দেশাত্মবোধ নিয়ে গান গেয়েছেন, তাকে কি কৃত্রিম দেশপ্রেম বলা যাবে ? এই বাংলাদেশ যেমন আমাদের মুসলমানদের, তেমনি রথীন্দ্রনাথ রায়ের মত হিন্দুদেরও, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানেরও, গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সকলের।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হোক এবং ৪টি ধর্মের ১ম বাক্যগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক । বেতার টেলিভিশন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ৪টি ধর্মের ১ম বাক্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে, তবে রাষ্ট্র এটি ছাড়া অন্য কোন ধর্মীয় বিষয়ে নিজেকে জড়াবে না । পারফেক্ট বা নিখুঁত বলে পৃথিবীতে কিছু নেই, কতিপয় নাস্তিক ব্যক্তি আইডিয়ালিস্টিক মনমানসিকতাসম্পন্ন এবং বাস্তবতা বিবর্জিত বলে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা কে সোনার পাথরবাটির মত মনে করতে পারেন, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনি এবং আমি একই ধর্মীয় মতে  বিশ্বাসী হওয়ার পরেও আমি ব্যক্তিগত ইচ্ছে আমার দেশের জনগণের ওপরে চাপিয়ে দিতে আগ্রহী নই, জনগণের অধিকাংশের মতামতের গুরুত্ব আমার কাছে আছে বলেই সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধার বিষয়টি আমার কাছে গ্রহণীয়, ১০০% বাস্তবায়ন কোনকিছুতেই সম্ভব নয়, এটিতেও নয়, কিন্তু একটি বিশাল অংশ যদি সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা করতে কিছুটা হলেও শেখে, তাতে দেশ ও দশের লাভ ।




পার্শ্ববর্তী দেশে গুজরাট এবং বাবরি মসজিদের মত ২-১ টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সেদেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যের মধ্যে বসবাস করে, হিন্দু-মুসলিম কিংবা আন্তঃ ধর্মীয় প্রেম প্রীতি ভালোবাসা বিবাহ ইত্যাদি সেখানে অহরহ ঘটছে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি আছে বলেই ভারত অন্তত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের থেকে মোটামুটিভাবে সকল ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে । ভারতে আজ পর্যন্ত ৪ জন মুসলিম দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তারা হলেন ডঃ জাকির হুসেইন, ডঃ ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ, ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম এবং মোহাম্মদ হেদায়েতউল্লাহ। শেষোক্ত ব্যক্তি ছিলেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন দফায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। তিনি সেই বিরল ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম যিনি ভারতের একাধারে রাষ্ট্রপতি - উপরাষ্ট্রপতি এবং চিফ জাস্টিসের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারীও একজন মুসলমান । নামকরা ভারতীয় ব্যুরোক্র্যাটদের মধ্যে অনেক মুসলিম রয়েছেন - আবিদ হোসেন, আসাফ আলি, জাফর সাইফুল্লাহ, সালমান হায়দার ইত্যাদি । নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন - শেখ আব্দুল্লাহ, ফারুক আব্দুল্লাহ, ওমর আব্দুল্লাহ, মুফতী মোহাম্মদ সাইয়েদ, সিকান্দার বখত, এ আর আন্তুলে, সি এইচ মোহাম্মদ কোয়া, মুখতার আব্বাস নাকভী, সালমান খুরশীদ, সাইফুদ্দিন সোজ, ই আহমেদ, গুলাম নবী আজাদ, সৈয়দ শাহনেওয়াজ হুসেন, আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন এবং বর্তমানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এছাড়া রয়েছেন জহির খান, ইরফান পাঠান, ইউসুফ পাঠান, মুনাফ প্যাটেল ইত্যাদি ।একসময়ে ইফতিখার আলি খান পাতাউদি এবং মনসুর আলি খান পাতাউদি ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আরো ছিলেন সৈয়দ কিরমানি, আরশাদ আইয়ুব, ওয়াসিম জাফর, মোহাম্মদ কায়েফ ইত্যাদি। ফিল্মজগতে রয়েছে খানের ছড়াছড়ি - ইউসুফ (দীলিপ কুমার) শাহরুখ খান সালমান খান আমির খান সাইফ আমি খান - খান আর খান । এছাড়া রয়েছেন এমরান হাশমী, ক্যাটরিনা কায়েফ, আয়েশা টাকিয়া, মধুবালা, নাসিরুদ্দিন শাহ, জনি ওয়াকার, শাবানা আজমী, ওয়াহিদা রেহমান, আমজাদ খান, পারভীন ববি, ফিরোজ খান, মিনা কুমারী, প্রেম নাজির, নার্গিস দত্ত ইরফান খান, ফরিদা জালাল, আরশাদ ওয়ারসি, মেহমুদ, জিনাত আমান, ফারুক শেখ, টাবু ইত্যাদি । নামকরা ফিল্ম ডিরেক্টরের মধ্যে রয়েছেন মেহবুব খান, কে এ আব্বাস, কে আসিফ, কামাল আমরোহী, আব্বাস মাস্তান ইত্যাদি । কদিন আগে চলে গেলে মকবুল ফিদা হুসেইন, রয়েছেন একাডেমি এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী রেসুল পুকুত্তি, এ আর রেহমান, নওশাদ, সেলিম-সুলায়মান, নাদিম আখতার (নাদিম-শ্রাবণ ডুয়োর), আবরার আলভী । নামকরা সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ রফি, তালাত মাহমুদ, অনু মালিক, লাকি আলি, মোহাম্মদ আজিজ, শামসাদ বেগম, বেগম আখতার প্রমুখ। তবলায় বিশ্বসেরা জাকির হুসেইন, সানাইয়ে বিসমিল্লাহ খান, এছাড়া রয়েছেন নামকরা সঙ্গীতজ্ঞ ভিলায়াত খান,আলাউদ্দিন আলি প্রমুখ । ভারতে যে ধর্ম নয় বরং যোগ্যতা দিয়েই মানুষকে বিচার করা হয় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই ব্যক্তিগুলো । এখানে মানুষ সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল, তাই তাদের মধ্যে সহজে ভেদাভেদ বা কলহের সূচনা হতে পারেনা । ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের এবং অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনুকরনীয় আদর্শ হতে পারে। ভারত এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আজকে দুনিয়ার তৃতীয় সুপার পাওয়ার রূপে আবির্ভূত হয়েছে, আমরা যদি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকলে মিলে মিশে দেশের জন্য কাজ করতে পারি, তাহলে আমরাও একদিন নব্য শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারবো ।

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের রক্ত চুষে খাবে কেন ?
 একজন মুসলমানকে আক্রান্ত হতে দেখলে একজন হিন্দু তার সাহায্যে ছুটে যাবে, একজন হিন্দু আক্রান্ত হলে তার সাহায্যে একজন মুসলিম ছুটে যাবে এটাই মানবতা। আমার ধর্ম বড় না তোমার ধর্ম বড় তালগাছ আমার -রাষ্ট্রধর্ম আমার এসব কখনো শান্তি বয়ে আনবে না ।  মানবতাবাদী গায়ক ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে তাই ধর্মনিরপেক্ষ মানবতারই আহবান



জন্ম হতে ঐ মৃত্যুবধি তুমি হিসাব করো, এই পৃথিবীর ধর্ম যত তুমি বিচার করো, দেখবে সেথায় একই কথা, ঊর্ধ্বে সবার মানবতা, সেই কথাটাই বলে সবাই বড়াই করো, আবার কেন লড়াই করো ?

 ( উল্লেখ্য,গানটির রচয়িতা একজন মুসলমান এবং মনেপ্রাণে ধর্মনিরপেক্ষ )

ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদের অন্যতম লালন শাহ বা লালন ফকির হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং অসুস্থ অবস্থায় তার পরিবার ছেলেবেলায় তাকে ত্যাগ করেছিল । তখন সিরাজ সাঁই নামের একজন মুসলমান বাউল তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সুস্থ করে তোলেন । সেই লালন কালক্রমে হয়ে ওঠেন বাউল সম্রাট, গান্ধীরও ২৫ বছর আগে,ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম,তাকে মহাত্মা উপাধি দেয়া হয়েছিল। একজন মুসলিম বাউল তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেবাশুশ্রূষা করেছিলেন । এই হলো বাংলার সংস্কৃতি, বাঙ্গালির সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি । সেই যুগের একজন মুসলমানের মধ্যে যদি এই অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানবতাবাদী আদর্শ থাকতে পারে, সেই আদর্শ দেখে কি আজকে আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমানেরা অনুপ্রাণিত হতে পারেনা ? ধর্মনিরপেক্ষতা যে বাংলার এবং বাঙ্গালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য, তা এখান থেকেই সুস্পষ্ট এবং সংবিধানেও তাই এর পুনঃ অন্তর্ভুক্তি আজ অতীব প্রয়োজন।

বিশেষ অনুরোধঃ এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ পোস্ট, দয়া করে কেউ গালাগালি - কটুক্তি - অশিষ্ট ভাষা - বিদ্রূপাত্মক ভাষা ব্যবহার করবেন না । ভদ্র এবং শিষ্ট ভাষায় আপনার মন্তব্য উপস্থাপন করুন, ধন্যবাদ ।

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

ব্লগটি যতবার দেখা হয়েছে

আমাদের এই বসুন্ধরা

Locations of Site Visitors