এই ব্লগটি সন্ধান করুন

পৃষ্ঠাসমূহ

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড সময়

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

বুধবার, ২২ জুন, ২০১১

প্রসঙ্গঃ রুমানা মঞ্জুর, পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম এবং প্রতিক্রিয়াশীল সমাজের নির্মম বলি

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা রুমানা মঞ্জুর তার নরপশু স্বামী হাসান সাইদের দ্বারা নৃশংসভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। জনমানুষের মনে এহেন নির্মম ও নৃশংস ঘটনা চরম ক্ষোভ এবং ক্রোধের সৃষ্টি করেছে । এই খবরটি প্রচার হওয়ার পর এদেশের নারী পুরুষ নির্বিশেষে এহেন নৃশংসতার প্রতি তাদের চরম ঘৃণা প্রকাশ করেছে । ফেসবুক - বাংলাদেশী সাইট ব্লগ এবং ফোরামে এই নিয়ে আগুনের ফুলকির মত মানুষ তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। জনাব জাকারিয়া স্বপন এই নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি কলাম লিখেছেন, এজন্য ওনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই । তবে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি ওনার সহানুভূতিতে এবং সমবেদনাকে একবাক্যে সমর্থন জানালেও ওনার  সকল কথার সঙ্গে একমত হতে পারছিনা, কেননা যৌক্তিক বিচারে অনেক প্রশ্ন রয়ে যায় যেগুলোর নিষ্পত্তিকরণ সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য খুবই জরুরী ।

অনেক পুরুষও এই ঘটনার প্রতি তাদের নিন্দাজ্ঞাপন করেছে তবে এই ঘটনার পেছনের মূলকারণ নিয়ে কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি । সকলেই গতানুগতিকভাবে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করে দায়মুক্ত হয়েছে । কিন্তু কেন এই ঘটনাগুলো দুদিন পর পর ঘটছে তা কেউ ভেবে দেখেনি বা জেনেও গোপন করে গেছে । এই কারণগুলো নিয়েই আমার লেখার অবতারণা কেননা উৎসমূল বিশ্লেষণ না করলে এই ঘটনাগুলো দুইদিন পর পর ঘটতেই থাকবে, দায়সারা গোছে এই নৃশংস ঘটনার শুধুমাত্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ঘৃণা প্রদর্শন করে কাজের কাজ কিছুই হবেনা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে কিছু সেনসিটিভ ব্যাপারগুলোর সংশোধন বা সংস্কার অবশ্যই করতে হবে । তবে মূল লেখা শুরু করার আগে তিনটি গল্প বলি -

ক) মিঃ জামান বিবাহিত, পেশায় একজন কম্পিউটার  প্রকৌশলী, তার স্ত্রী একজন চিকিৎসক। কম্পিউটার প্রকৌশলী হওয়ার কারণে তাকে তার ল্যাপটপের সামনেই সারাদিন বসে থাকতে হয়। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারী, স্ত্রী সারাদিন রোগী নিয়ে ব্যস্ত, এই সুযোগে অন্যান্য পুরুষদের মতই তিনি ফেসবুকে বিভিন্ন নারীকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে বা পাণ্ডিত্য দেখিয়ে ইমপ্রেস করেন, স্ত্রী হঠাৎ একদিন কম্পিউটার থেকে আবিষ্কার করেন, বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার প্রাপ্তবয়স্ক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা । কিন্তু স্ত্রী এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না, কেননা তার দুটি সন্তান রয়েছে, বাংলাদেশে একজন নারী ডিভোর্সি হলে তাকে নিয়ে সমাজে ছিঃছিঃ রটে যায় (যদিও অবস্থার উন্নতি হয়েছে), তাই মিসেস জামান এ নিয়ে নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নেন ।

খ) মিঃ শরীফ ব্যবসায়ের কাজে সারাদিন দোকানে পড়ে থাকেন, তার স্ত্রী একজন গৃহিণী । মিঃ শরীফের স্ত্রী সারাদিন ঘরে একাকী থাকেন, তাই একাকীত্ব কাটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন । এভাবে তার সঙ্গে পরিচিতি হয় বিভিন্ন পুরুষের, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় অন্তরঙ্গ সম্পর্কে রূপ নেয়, ইন্টারনেট ব্যবহার করে করে অভ্যস্ত গৃহিণী এখন চরম স্মার্ট, পুরুষদের মাথা পাগল করে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াতে এই গৃহিণীর জুড়ি নেই । মিঃ শরীফ মোবাইলে কল করলে কল ব্যস্ত পান, একদিন গৃহিণীর মোবাইলে লক্ষ্য করেন অপরিচিত নম্বর থেকে ১ ঘণ্টার একটি কল। সন্দেহ জাগে তার, একদিন গভীর রাতে দেখেন তার স্ত্রী বিছানায় নেই, স্বামীর ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে অন্য রুমে কম্পিউটারের সামনে বসে বিবস্ত্র অবস্থায় ওয়েবক্যাম চ্যাটে মশগুল । চুলের মুঠি ধরে নরপশুর মত চড় থাপ্পর মারতে মারতে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি । মিসেস শরীফ বাড়ি ফিরে আসেন।

গ)  শহীদ এবং রুবানা, একজন বুয়েটে পড়েন, আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তাদের মধ্যে প্রেমভালবাসা হয়, তারা একসঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেন, বিয়ে করেন । বিয়ের পরে শহীদ ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করেন, রুবানা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। ব্যবসায়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে শহীদ মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারিয়ে ফেলেন, ব্যবসায়ে ক্ষতির রাগ ঝাড়েন স্ত্রী পুত্র কন্যার উপর, স্ত্রী প্রচণ্ডভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তিনি শহীদের একের পর এক পতন দেখে ধীরে ধীরে তার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, নারীর মন ব্যর্থ পুরুষকে চায়না। ব্যবসায় সর্বস্বান্ত শহীদ ঘরজামাই হয়ে থাকেন, উপার্জন না থাকার কারণে বড়লোক শ্বশুরের আজ্ঞাবহ হয়ে তাকে চলতে হয়, এগুলো তার ভেতরে ক্ষোভের জন্ম দেয়, দুজনেই ফেসবুক ব্যবহার করেন । স্ত্রীর সঙ্গে এক বিদেশীর পরিচয় ঘটে, শহীদের কোন উন্নতি না দেখে রুবানা তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন এবং ধীরে ধীরে আকর্ষিত হন বিদেশী ভদ্রলোকের প্রতি, প্রথমে সম্পর্ক চলছিলো গোপনে গোপনে কিন্তু একসঙ্গে থাকলে আর কতদিন সত্য লুকিয়ে রাখা যায় ? তাই একদিন শহীদের কাছে ঘটনাটি ধরা পড়ে, শহীদ ভেতরে ভেতরে ঐ বিদেশীর প্রতি চরমভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন নিজের ব্যর্থতার কারণে, স্ত্রীর উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, কিন্তু মুখ বুজে থাকেন কেননা, উপার্জনহীন বলে স্ত্রীকে শাসাতে পারেন না (শাসানো উচিত নয়), স্ত্রীও শহীদের দুর্বল ঘরজামাই অবস্থার সুযোগ নেন, ভেতরে ভেতরে চরম প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠতে থাকে শহীদের মনে, স্বামীত্বের অধিকার ফলানোর জন্য প্রয়াসী হন, তার স্ত্রীকে অন্য একজন ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তা করে শহীদ অবশেষে প্রতিহিংসার চরমঅনলে ভয়ঙ্কর আক্রমণ করে বসেন তার স্ত্রীকে, স্ত্রীর একটি চোখ আঙ্গুল দিয়ে নষ্ট করে দেন, আরেকটি প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে, নাক কামড়ে দেন । এককালের শহীদরুবানার প্রেমের এখানেই অপমৃত্যু ।
পাঠকপাঠিকাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই ৩টি আলাদা আলাদা ঘটনাগুলোর জন্য কে দায়ী, স্বামী নাকি স্ত্রী নাকি দুজনেই এবং কেন ? ন্যায় এবং যুক্তির বিচারে উত্তরগুলো কি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন । একেবারে শেষে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত উত্তর দেওয়া হবে ।

বর্তমানে প্রথম আলোতে বেশ কিছু হলুদ সাংবাদিকতাপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও একসময় এটি বেশ নিরপেক্ষ ছিলো, একটি রিপোর্টে পড়েছিলাম, বাংলাদেশের ৬৫% নারী নাকি স্বামীর দ্বারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতিতা হন । রিপোর্টটি মিথ্যে নয়, বাংলাদেশে নারীর প্রতি অন্যায় অত্যাচার সহিংসতা একটি সাধারণ ঘটনা ।

আমার প্রশ্ন, নারীর প্রতি নির্যাতনের জন্য সর্বাগ্রে দায়ী কে ?

উত্তরঃ পুরুষতন্ত্র ।

পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক কে ?

উত্তরঃ সকল ধর্মগ্রন্থ।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ রয়েছে Prevention is better than Cure কথাটি একেবারেই মিথ্যে নয় । প্রতিকারের আগে প্রতিরোধ করা উত্তম । তাই নারীর প্রতি পুরুষের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐ দুই একটা হাসান সাইদ নামক নরপশুদের শাস্তি দিয়ে এবং মূল কারণকে চিহ্নিত না করে নারীর জন্য শুধুমাত্র দুদিনের মায়াকান্না কেঁদে কোন লাভই হবেনা । হাসান সাইদকে শাস্তি তো দিতেই হবে, তবে এর সাথে সাথে সমাজ এবং ধর্মের নিয়মকানুনের প্রভূত সংস্কার প্রয়োজন, অন্যথায় এই রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা সমাজে ঘটতেই থাকবে ।

সুরা নিসা (৪) আয়াত (৩৪) এ রয়েছে

অর্থাৎ, পুরুষ নারীর নিয়ন্ত্রণকর্তা এবং রক্ষাকর্তা, কেননা আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন (শারীরিক শক্তির বিচারে) এবং যেহেতু পুরুষ অর্থ দিয়ে তাদের ভরণপোষণ করে । তাই সতীসাধ্বী নারীরা হবে একান্ত অনুগতা-বাধ্যগতা, স্বামীর অবর্তমানে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুযায়ী তাদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করবে । যে সকল স্ত্রী থেকে অবাধ্যতা এবং খারাপ আচরণের আশংকা করো, তাদের মৃদু তিরস্কার করো, অতঃপর তাদের সঙ্গে শয্যা বর্জন করো এবং অতঃপর তাদের প্রহার করো ।

আমার প্রশ্ন -এই যদি হয় একটি ধর্মে নারীকে সম্মান দেওয়ার নমুনা (!) , তাহলে হাসান সাইদ, ডাক্তার মুনীররা কেন নারীদের গায়ে হাত তুলবে না ? কেন তাদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করবে না ?
হাসান সাইদদের মত পুরুষদের কারা তৈরি করে ? এই ধর্ম এবং ধর্মগুরুরাই, ধর্ম নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থাই । শিশুবয়সে আমাদের আরবীতে কোরান শরীফ পড়ানো হয়, কিন্তু অর্থ সহকারে পড়ানো হয়না, তাই অর্থ না জেনেই শুধুমাত্র পিতামাতা এবং পরিজন থেকে আমরা ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি, অর্থ না বুঝেই ধর্মকে ভালবাসতে এবং মহান ভাবতে শুরু করে দেই, ধর্মগ্রন্থে আসলে কি লেখা আছে তা না পড়েই দাবী করি ধর্ম সঠিক আর বাকি সব ভুল । অর্থ না বুঝে ভালবাসার পরিণাম হয় ভয়াবহ, রুমানা মঞ্জুর এবং বাংলাদেশের ৬৫% নারী সমাজ এভাবেই ধর্ম দ্বারা সম্মানিতা (!) হন ।

ধর্মে লেখা আছে বলে এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে আমরা ভয় পাই, তাই রুমানা মঞ্জুরের মত আরো অজস্র রুমানা এরকম নির্যাতনের শিকার হন এবং আমরা দুদিনের মায়াকান্না কেঁদেই প্রতিকার-প্রতিরোধ না করেই আবার সেই ধর্ম নিয়ন্ত্রিত জীবনে ফিরে যাই । অনেকটা লঞ্চ ডুবির মত ঘটনা, দুদিনের মায়াকান্না এবং অতঃপর আবারো কয়েকদিন পরে ফের লঞ্চডুবি ! নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের শেকড় বা উৎস উপড়ে না ফেললে এই ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে ।

সুরা নিসার এই আয়াত সম্পর্কে আমার চরম আপত্তি রয়েছে, আমি এই আয়াতের নিম্নলিখিত সংশোধন দাবী করি

পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে, কেউ কারো নিয়ন্ত্রণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হবেনা, শুধু শারীরিক শক্তিই বিচারের মাধ্যম হতে পারেনা, মানসিক শক্তিও বড় ব্যাপার যেটি নারীদের মধ্যে একটি সমবয়সী পুরুষ থেকে অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে এবং অর্থ উপার্জন বর্তমান যুগে নারী পুরুষ উভয়েই করতে পারে, তাই ভরণপোষণের ভার শুধুমাত্র পুরুষের প্রতি ন্যস্ত করা অবিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে। উত্তম নারীরা অনুগতা বাধ্যগতা নয়, বরং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হবে তবে স্বেচ্ছাচারী হবেনা এবং ইজ্জত আব্রুর ব্যাপারে নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া না হলে বা মত কিংবা কাজকর্মের অমিল হলে তারা পারিবারিক বিচ্ছেদের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাবে, কোনরুপ পেটানো বা মানসিক নির্যাতন করা চলবে না, শয্যা বর্জনের কোন বিষয়ই নেই, কেননা, একটি নারীর চেয়ে পুরুষ অনেক বেশি কামুক এবং বহুগামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন ।

আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে চান কি ? চাইলে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করবেন আশা করি ।

সুরা বাকারা (২)র ২২৩ নং আয়াতে রয়েছে

Your women are your fields, so go into your fields whichever way you like . . . . (MAS Abdel Haleem, The Qur’an, Oxford UP, 2004)

Your wives are as a tilth unto you; so approach your tilth when or how ye will (yusufali 2 : 223)

তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র, তাই তাহাতে যেভাবে খুশি প্রবেশ করতে পারো !
এই যদি হয় একটি ধর্মগ্রন্থের বাণী (!) , তাহলে পুরুষ কেন নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করবে না, কেন নারীরা ধর্ষিতা হবেনা ?  দিনাজপুরের নুরজাহান বা শরীয়তপুরের হেনা আক্তারেরা কেন দোররা মারার শিকার হবেনা, কেন ধর্ষিতা হবেনা ? কেন তারা আত্মহত্যা করবে না ? নারী কি পুরুষের মতই মানুষ নয়, স্রেফ ময়দার তাল বা শস্যক্ষেত্র ?

সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে রয়েছে

And men are a degree above them. (Pickthal 2 : 228) (Shakir 2 : 228)

But men have a degree (of advantage) over them (yusufali 2 : 228)

অর্থাৎ, পুরুষ নারীর থেকে স্ট্যাটাসে একডিগ্রী ওপরে ।

এই কি নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ? এই কথাই যদি লেখা থাকে, তবে কেন পুরুষেরা নিজেদের সুপিরিয়র দাবী করে নারীদের প্রতি শোষণ নির্যাতন বঞ্চনা করবে না ?

সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে রয়েছে

The male shall have the equal of the portion of two females (Shakir 4 : 11)

To the male, a portion equal to that of two females (yusufali 4 : 11)

পুরুষ যদি নারী থেকে সবসময়ই বেশি পেয়ে থাকে এবং একডিগ্রী ওপরে থাকে, তাহলে নারী পুরুষে সাম্য রচিত হবে কি করে ? নারী দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবে, এর পুরো ফায়দা তুলবে পুরুষ ! এখানে আবার আরেকটি চালাকি রয়েছে, নারীকে স্বামী এবং পিতার সম্পত্তি থেকে কিছু অংশ দেওয়ার মাধ্যমে বুঝ দেওয়া হয় কিন্তু এগুলো নারীকে পরাধীন এবং পরমুখাপেক্ষী করে একেবারেই পরজীবীর জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। এতে নারীর স্বাধীন হওয়ার পথ রুদ্ধ হয় । বিয়ের আগে পিতার অধীন, বিয়ের পরে স্বামীর অধীন এবং বার্ধক্য উপনীত হয়ে সন্তানদের অধীন হয়ে নারী চিরজীবনই চরম বৈষম্যের শিকার হয় ।

যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে যৌনসম্ভোগও ইসলাম সমর্থন করে –

And forbidden to you are wedded wives of other people except those who have fallen in your hands [as prisoners of war] . . . (Maududi, vol. 1, p. 319)


Also (forbidden are) women already married, except those (captives and slaves) whom your right hands possess. ( Al Hilali 4:24)

And all married women (are forbidden unto you) save those (captives) whom your right hands possess (Pickthal 4:24)

ইসলাম পুরুষকে ৪ বিয়ে করার অনুমতি দেয় অথচ নারীকে ১ জনেই সীমাবদ্ধ থাকতে বলে –
And if you fear that you shall not be able to deal justly with the orphan-girls, then marry (other) women of your choice, two or three, or four but if you fear that you shall not be able to deal justly (with them), then only one or (the captives and the slaves) that your right hands possess (Al Hilali 4:3) 

If ye fear that ye shall not be able to deal justly with the orphans, Marry women of your choice, Two or three or four; but if ye fear that ye shall not be able to deal justly (with them), then only one, or (a captive) that your right hands posses (Yusuf Ali 4:3)

অর্থাৎ যদি তাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে পারো তবেই চারজন পর্যন্ত বিবাহ করো কিন্তু যদি না পারো তবে একজনেই সীমাবদ্ধ থাকো । কিন্তু  একই সুরার ১২৯ নং আয়াতে রয়েছে স্ববিরোধী বক্তব্য -

Ye are never able to be fair and just as between women, even if it is your ardent desire (yusufali 4 : 129)

And you have it not in your power to do justice between wives, even though you may wish (it) (Shakir 4 : 129)

 
 অর্থাৎ তুমি চাইলেও তাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে পারবেনা ।

যদি একের অধিক স্ত্রীগণের সঙ্গে ন্যায়বিচার অসম্ভবই হয়ে থাকে, তাহলে চার বিয়ের অবতারনা অপ্রাসঙ্গিক নয় কি ? ইসলামের কাছে দাসীকে সম্মান জানানোর উৎকৃষ্ট পন্থা মনে হয় দাসীর সঙ্গে যৌন সম্ভোগ করা , উপরের সুরা নিসার ৩ নং আয়াত থেকে এটি স্পষ্ট। দাসীর অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে বা তার অমতে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া কি ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন নয় ? এই যদি নারীর প্রতি ইসলামের সম্মান দেখানো হয়, এভাবে যদি সকল ক্ষেত্রে পুরুষকে সকল কিছু করার অধিকার দান করে শক্তিশালী করে দেওয়া হয়, তবে রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা কেন ঘটবে না ?

শারীরিক শক্তি নিঃসন্দেহে পুরুষের বেশি কিন্তু  প্রাক-ইসলামিক যুগে নারীদের অবস্থান পুরুষের চেয়ে উন্নত ছিলো অর্থাৎ শারীরিক শক্তিই সবক্ষেত্রে নিয়ামক নয় । নারীদের অবস্থান যে সে সময় পুরুষের চেয়ে উন্নত ছিলো সে সম্পর্কে জানতে পাঠকেরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের একজন ডঃ হুমায়ুন আজাদের "নারী" এবং  "আমার অবিশ্বাস " পড়ে দেখতে পারেন ।ইসলামের আগে আল উজ্জা আল লানত আল মানত নামের বিভিন্ন দেবীর পুজো হতো, পুজো আর ইবাদতের অর্থ ফাংশোনালি কিন্তু সম্মান প্রদর্শন । প্রাক ইসলামিক যুগে যে নারীর অবস্থান উন্নততর ছিলো তার প্রমাণ স্বয়ং খাদিজা (রা) । তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন একজন ব্যবসায়ী কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর হজরত মোহাম্মদের স্ত্রী হয়ে তিনি স্বাধীন নারী থেকে পরাধীন গৃহবধুতে পরিণত হন । একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী নারী থেকে কি একজন পরাধীন গৃহবধূ অধিকতর সম্মানীয় ? ইসলাম থেকে আরো দাবী করা হয়, ইসলামের আগে নাকি নারীদের অবস্থা খারাপ ছিলো এবং তাদের জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হত । যদি নারীর অবস্থা খারাপ হয়, তবে খাদিজা একজন ব্যবসায়ী হন কিভাবে ? আর জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেললে নারীর সংখ্যা তো একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে, সেক্ষেত্রে ১ পুরুষের ৪ বিয়ে যুক্তিতে আদৌ টেকে কি ? নারীর সংখ্যা কম হলে তো ১ নারীর ৪ পুরুষ থাকা উচিত যুক্তির বিচারে । আর দাসী বা বন্দিদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম নিশ্চয়ই তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বা অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে করা হয় । এটাও কি নারীর প্রতি ধর্মের সম্মান প্রদর্শনের নমুনা ?

পুরুষ যেমন রক্তমাংসের মানুষ, নারীও তেমনি । একজন পুরুষ ধর্মে এবং সমাজে নিজের অবস্থান শক্তিশালী দেখে ফ্রী স্টাইল অসংযত বহুগামী জীবনাচরণে প্রবৃত্ত হয়, নারীর মধ্যে বহুগামিতা যে নেই তা নয়, পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের বহুগামিতা সুস্পষ্ট লক্ষ্যণীয়, কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা ধর্মীয় আর সামাজিক কারণে নিজেদের অবস্থানগত দুর্বলতার কারনে বহুগামিতায় সহজে জড়াতে চাননা । তবে একজন শিক্ষিতা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন মহিলা চার দেওয়ালের মধ্য থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে পারে । দেখা যায়, অনেক শিক্ষিতা মহিলারই আজকাল একাধিকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা তার চেয়েও বেশি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বহুগামিতায় বা পরকীয়া প্রেমে কিছুটা হলেও প্রভাবক হিসেবে কাজ করে । তবে এই পরকীয়া সকল ক্ষেত্রে দোষের নয়। স্বামী বা স্ত্রী যদি একে অপরের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে তখন এরকম সম্পর্ক ঘটতেই পারে, বারবার ঘটলে অবশ্য সেটিকে ভাল বলা যাবেনা, তবে মানুষের মন চরম বিচিত্র, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরের মতই আজকে যার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, কাল তার প্রতি আকর্ষণ নাও থাকতে পারে,তাই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এরকম সম্পর্ক বর্তমানে বিরল কিংবা অস্বাভাবিক কোনটিই নয়।
 যুক্তির বিচারে রুমানা মঞ্জুর সম্পর্কে তার পাষণ্ড স্বামী হাসান সাইদের সব কথাই মিথ্যে নয়, শুধুমাত্র বিদেশে যাওয়ার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে এরকম নৃশংস ব্যবহার যুক্তির বিচারে কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এটি হতে পারে যে, হাসান সাইদ ভেবেছিলেন বা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রতি বিতৃষ্ণার শিকার হয়েই রুমানা মঞ্জুর তার ইরানী বন্ধুটির সঙ্গে ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েন এবং হয়তো বিদেশে গেলে তাদের মধ্যে দেখাসাক্ষাত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে -এমন ধারণা থেকে হাসান সাইদ ভেতরে ভেতরে রাগ ও ক্রোধে ফেটে পড়তে পারেন এবং সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে রুমানা মঞ্জুরের প্রতি হিংস্র নরপিশাচের মত হামলে পড়ার মাধ্যমে । কেননা, মুসলিম পুরুষের একটি সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেটি হলো, নিজে দশজন মেয়ের সঙ্গে ফুর্তিফার্তি করতে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয়না, দশজন মেয়ে কি ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ পড়ছে তাতে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা হয়না, কিন্তু নিজের স্ত্রী যদি ভুলেও অন্য পুরুষের সঙ্গে সামান্য কথাও বলে,অন্য পুরুষের সঙ্গে মেশে, ঘরের বাইরে যায় কম পোশাক পরে- তো সেগুলো হয়ে যায় মহাঅন্যায় -মহাপাপ । নিজের বেলায় সাত খুন মাফ কিন্তু স্ত্রীর বেলায় ভয়ংকর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচার !

জাকারিয়া স্বপন নামের একজন লেখক বলেছেন আমরা বাংলাদেশে মেয়েদেরকে যেভাবে বড় করি, যেভাবে গড়ে তুলি, তাতে কয়টা মেয়ের পক্ষে সম্ভব সংসার ছেড়ে চলে যাওয়া? সে পিএইচডি করুক, আর হাই স্কুল পাশ করুক - বাস্তবতা হলো এই যে, আমরা ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের মাথার ভেতর কিছু জিনিস এমনভাবে ইমপ্লান্ট করে দেই, সেটা সে সারা জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারে না

এই কিছু জিনিস আসলে কি সেটা তিনি উহ্য রেখেছেন বা নিজের ধর্মের দিকে তাকিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এড়িয়ে গেছেন । এই কিছু জিনিসগুলো হলো ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়মকানুন এবং সেখান থেকে উৎসারিত সামাজিক রীতিনীতি নিয়মকানুন ।

তাই আমরা একদিকে যেমন নারী অধিকারে শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া ধর্মগুলো নিয়েও থাকি, আরেকদিকে নারীর প্রতি নির্যাতনে মানবতা নিয়েও সোচ্চার হই । এভাবে দুই ডালে থাকলে রুমানা মঞ্জুরের মত ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটতেই থাকবে, নারীর কোন উন্নয়নই হবেনা, জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করবে ।
যে কোন এক পক্ষে আসতে হবে, হয় মানবতার দৃষ্টিতে নারীর ৫০-৫০ সমানাধিকারের পক্ষে, না হয় ইসলামিক দৃষ্টিতে পুরুষের পক্ষে ৬৬.৬৭ / ৩৩.৩৩ অর্থাৎ ২:১ এর পক্ষে ।

লেখক আরো বলেছেন - আমি, আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে, আমার বন্ধুরা, আমার পাঠক - সবাই একেকটি আলাদা সত্তা। আমরা কেউ কারো মালিক নই। আমরা কেউ কারো প্রভু নই।চলতি পথে কারো কারো সাথে আমাদের উঠাবসা হবে, ভালোবাসা হবে, বিরহ হবে, অভিমান হবে, রাগ হবে - কিন্তু তাই বলে আমরা একজন আরেক জনের উপর চড়াও হবার অধিকার নেই। গায়ে হাত তোলার ক্ষমতা সে কোথায় পেলো? এই প্রভুত্ব তাকে কে দিয়েছে? পুরুষত্ব? নাকি একটি কাবিননামার স্বাক্ষর? (যার বিনিময়ে একটি নারীকে সহসাই কিনে ফেলা যায়)।

আমারো একই কথা, প্রভুত্ব তাকে কে দিয়েছে ? কোরান শরীফে সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত কি পুরুষকে সেই প্রভুত্ব দেয়নি ? পুরুষের পুরুষত্বের মূলে কি ধর্মগ্রন্থগুলো নয় ? ধর্মগ্রন্থ নারীকে পূর্নাঙ্গ সৃষ্টি হিসেবেও সম্মান দেয়নি,আদমের পাঁজরার হাড় দিয়ে নাকি হাওয়ার সৃষ্টি ! মালিক বা প্রভু হওয়ার মানসিকতা তখনই ধীরে ধীরে স্তিমিত হবে যখন সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত থেকে পুরুষ নারীর রক্ষাকর্তা নিয়ন্ত্রণকর্তা এসব বাণী অপসারিত হবে । প্রহার করা বা চড়াও হওয়ার প্রবণতা তখনই ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে যখন সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াত থেকে স্ত্রীপ্রহার এবং তিরস্কারের বাণীগুলো অপসারিত হবে।

হিন্দুধর্মে একসময় নৃশংস সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিলো, সেখান থেকে রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রভূত সংস্কারে এই প্রথাটি হিন্দুধর্ম থেকে বিলুপ্ত হয় । তাদের তো বিদ্যাসাগর ছিলো, তারা বিদ্যাসাগরকে সম্মানও দিয়েছিল কিন্তু আমাদের ধর্মে সেই ত্রাণকর্তা সংস্কারকদের অবস্থা কি ? তসলিমা নাসরিন নারীর পক্ষে কথা বলতে যেয়ে আজকে নিজের দেশের নাগরিকত্ব পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন, তার ন্যায্য অধিকার তার পাসপোর্ট তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি । ডঃ হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধর্মের বিপক্ষে এবং নারী ও  প্রগতির পক্ষে কথা বলতে যেয়ে নিজের জীবন হারিয়েছেন। তারপরেও আমাদের নারীরা চুপ, প্রতিক্রিয়াহীন ! আমাদের দেশের মোটামুটিভাবে ৫০% নারী, তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনে কেন তারা ধর্মের কারণে মুখ খুলবেন না ? তারা কেন প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধে অক্ষম হবেন ? মেয়েরা দিনদিন এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে, তারপরেও কেন সেই বিকশিত হয়ে ওঠা ফুলগুলো পুরুষের চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার কাছে নুয়ে পড়ছে, তাদের অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনের কাছে মুখ থুবড়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে ।

সকল কিছুর মূলে এই পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম এবং সেখান থেকে উৎসারিত সামাজিক রীতিনীতি নিয়মকানুন । মূল জায়গায় প্রতিকার প্রতিরোধ না করলে এই সামাজিক অসুস্থতা কখনোই সারবে না । আর এখানেই নারী নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দাবীর যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। নারী নীতি ২০১১ র বিরোধিতা করা মানে ধর্ম আর পুরুষতন্ত্রকেই প্রশ্রয় আস্কারা দেওয়া, যদিও নারী নীতি ১৯৯৭, বর্তমান নারীনীতি থেকে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের বিচারে অনেক বেশি শ্রেয় ছিলো ।

ধর্মের দোহাই দিয়ে আর কতদিন নারীকে পেছনে ফেলে রাখা হবে ? দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০% নারী, অর্ধেক জনসংখ্যা হয়েও কেন নিজেদের দাসী অবস্থানে সন্তুষ্ট থেকে ধর্মের এমন অমানবিক নারীবিরোধী বাণীগুলোর ব্যাপারে নীরব থেকে যাবে ?

দুই চার জন পুরুষ ব্যতীত নারীর পক্ষে দাঁড়ানোর মত বিশালহৃদয় পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মতান্ত্রিক সমাজের পুরুষদের নেই । নারীর উন্নয়নের জন্য নারীদের নিজেদেরকেই উঠে আসতে হবে, দেখিয়ে দিতে হবে, বুদ্ধি যার বল তার , শুধু শারীরিক নয় বরং মানসিক শক্তিও যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে তা নারীদের প্রমাণ করে ছাড়তে হবে ।
সেই তিনটি গল্পের উত্তর কি হতে পারে সেই নিয়ে এবার সামান্য আলোচনায় বসা যাক । প্রথম দুটি গল্পে আসলে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরিস্থিতির শিকার, জামান সাহেব এবং মিসেস শরীফ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থেকে তাদের অর্ধাঙ্গিনী এবং অর্ধাঙ্গের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় পাননি, তাই তারা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বশেই অন্যের প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন, যে ব্যক্তি সময় দিতে পারে তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া বিন্দুমাত্র অবাস্তব বা অস্বাভাবিক নয় । তবে, মিসেস জামান এবং মিঃ শরীফেরও দোষ রয়েছে কেননা, তারা তাদের স্বামী স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় দেননি, এটিকে যদিও খুব বড় দোষ বলা যায়না যদি কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা আসলেই অনেক বেশি হয়।

দুটি গল্পে একই রকম, তবে নারী পুরুষের অবস্থানগত পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় এবং সবচেয়ে বড় যেটি লক্ষ্যণীয়, সেটি হলো মিসেস জামান একজন নারী বলে তার স্বামীকে কিলঘুষি মারতে পারেননি, অন্যদিকে মিঃ শরীফ পুরুষ বলে স্ত্রীকে মারতে মারতে শেষ করে দিয়েছেন । নারী পুরুষের বৈষম্য এমনই প্রকট এবং এগুলো আসে ধর্মগ্রন্থ এবং শারীরীক শক্তির জোশে ।

শহীদ এবং রুবানার গল্পটি আসলে কাদের গল্প নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ? আমাদের দেশের জনসাধারণের অনেকেই মনে করেন, তৃতীয় পক্ষের কথা যেন স্বামী স্ত্রী কেউ কাউকে প্রকাশ না করেন । আমি এই কথাটির সঙ্গে একমত নই কেননা, একসঙ্গে বসবাস করলে একদিন না একদিন তৃতীয় পক্ষের কথা তারা জানতে পারেন, এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়, পরিণতিতে ভালবেসে বিয়ে করা একটি সুখের সংসার মুহূর্তে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় । কিন্তু ঘটনা সৎ সাহস নিয়ে স্বীকার করলে হয়তো একে অপরের প্রতি বিশ্বাস অটুটই থাকে, স্বামী বা স্ত্রী মনে করে, নাহ, সে তো গোপন করেনি, আমার কাছে সৎ থেকে স্বীকার করেছে এবং সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা । তবে, এখানেও একটি কিন্তু রয়েছে, সেটি হলো, স্বামী বা স্ত্রী যদি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার না হয় (গ্রামাঞ্চলে কিংবা গোঁড়া ধার্মিক পরিবারে), তবে এই স্বীকারটি হিতে বিপরীত হতে পারে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশির ভাগ ব্যক্তিই অন্তত কিছুটা শিক্ষিত এবং সচেতন বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, তারা পুরোপুরিভাবেই গোঁড়া নয় বরং কালের প্রবাহে রীতিনীতি আচার আচরণ যে পরিবর্তিত হয় – সেটি বুঝতে সক্ষম । রক্তমাংসে গড়া মানুষের মনোদৈহিক চাহিদা এবং মনস্তত্ত্বের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ বুঝতে তাদের খুব একটি সমস্যা হওয়ার কথা নয় । তাই বিবাহবহির্ভূত দুই একটি ছোটখাটো ঘটনা - পরকীয়া প্রেম বা চরম আবেগের বশে হঠাৎ কিছু করে ফেলা পরিবারের সুখশান্তি তথা বৃহত্তর স্বার্থের নিমিত্তে তাদের সহজভাবেই গ্রহণ করা উচিত এবং এ নিয়ে কাউকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা উচিত নয় । এতে পারিবারিক সুখশান্তি এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস দুটোই বজায় থাকে। তবে এগুলো যদি পেশা এবং নেশা হয়ে যায়, তবে তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং সেক্ষেত্রে দুজনের একসঙ্গে বসে খোলাখুলিভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান কিভাবে করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

রুমানা মঞ্জুর যত জলদি সম্ভব সুস্থ হয়ে সেই আগের স্বাভাবিক জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসুন এই প্রত্যাশা করে আমার লেখা শেষ করছি ।

1 টি মন্তব্য:

  1. ১) ইসলাম ধর্ম নারী অধিকার/মর্যাদা দিয়েছে এভাবে

    ক) স্ত্রী প্রহারকে বৈধ করে (সুরা নিসা আয়াত ৩৪)
    খ) স্ত্রী কে তিরস্কার/বকাঝকা করা বৈধ করে ( একই আয়াতে )
    গ) স্ত্রী কে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না দিয়ে গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ রেখে ( একই আয়াতে )
    ঘ) স্ত্রী কে কামুক প্রাণী হিসেবে সাব্যস্ত করে ( একই আয়াতে )
    ঙ) স্ত্রী কে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী করে ( পরপুরুষের কাছে যাবেনা এবং দৃষ্টি নিমজ্জিত করবে )
    চ) সম্পত্তিতে ২/১ এর মাধ্যমে বঞ্চিত করে
    ছ) পিতা এবং স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ দেওয়ার নাম করে পরনির্ভরশীল প্রাণী হিসেবে গড়ে তুলে
    জ) দাসীদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম বৈধ করে ( অবস্থার সুযোগে যৌনকর্ম = অবৈধ )
    ঝ) যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম বৈধ করে ( ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্ম = ধর্ষণ )
    ঞ) হুরপরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ্যাবৃত্তিকে প্রোমোট করে
    ট) নারীকে ফিতনা ফাসাদের উৎস বলে অভিহিত করে
    ঠ) নারীকে পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টির মর্যাদা না দিয়ে ( আদমের পাঁজরার হাড় থেকে সৃষ্ট )
    ড) নারীকে একাধিক স্বামী রাখার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ( পুরুষ ৪ স্ত্রী রাখলে নারীরাও তা পারবে মানবিক অধিকারের বলে, আর মাল্টিপল পার্টনারে পুরুষ নারী ১/৪ বা ৪/১ এ সমান সমস্যা ।
    ঢ) নারীকে যৌনসামগ্রী ভোগপণ্য হিসেবে বিবেচিত করে ( বাকারা ২২৩ )
    ণ) নারীরাই বেশি জাহান্নামের অধিবাসী হবে বলে স্বগতোক্তি করে

    ইত্যাদি ।

    ২) মাটিতে পুঁতে ফেলার মিথ্যা গল্প

    ক) ১৪০০ বছর আগে মেয়ে শিশু জন্মালে অধিকাংশকেই যদি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়, তবে খাদিজা সওদাও ইত্যাদি নারীকে জন্মের পরপরই মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো ।
    খ) নারী জনসংখ্যা বিশালহারে হ্রাস পেত, তাই ১ পুরুষ ৪ নারীকে বিয়ে করবে ( নারী জনসংখ্যা বেশি থাকার কারণে) – যুক্তিটি ধোপে টেকেনা ।
    গ) প্রজনন বিষয়টিই মুশকিল হয়ে যেত ।

    ৩) ইসলামের আগে নারী স্বাধীন এবং সমাজে সম্মানিত ছিলো তার প্রমাণ -

    ক) স্বয়ং খাদিজা যিনি ইসলামের আগে ছিলেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একজন ব্যবসায়ী মহিলা এবং ইসলামের পরে সকল ধনসম্পদ হজরত মোহাম্মদের আত্মসাতের কারণে হয়ে গেলেন পরাধীন একজন গৃহবধূ যার কাজ ছিলো মোহাম্মদের শারীরিক চাহিদা মেটানো ।

    খ) কাবা শরীফে ৩৬০ টি মূর্তির বেশ কিছু মূর্তি ছিলো নারী মূর্তি – আল উজ্জাহ, আল লানত, আল মানত ইত্যাদি। পূজা বা ইবাদত তাদেরই করা হয়, যাদের সম্মান করা হয় । নারীর সম্মান ছিলো বলেই অনেক দেবীর পুজো হতো ।

    গ) আবু লাহাবের স্ত্রীর বর্ণনা পাওয়া যায় সুরা লাহাবে যেখানে হজরত মোহাম্মদ পাগলের মত প্রলাপ বকতে থাকে – ধবংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক সে নিজেও । জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন (হাহা) – ঐ হাত দিয়ে আবু লাহাব কি এমন করেছিলো হজরত মোহাম্মদকে যে সে এত ক্ষেপে গেল ?
    তার পরেই লেখা আবু লাহাবের স্ত্রী নিয়ে । কেন ? তাহলে নিশ্চয় আবু লাহাবের স্ত্রী প্রভাবশালী নারী ছিলো ? আর প্রভাবশালী তারাই হয়, যাদের সমাজে সম্মান থাকে ।

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মন্তব্য প্রদান করুনঃ

ফেসবুক থেকে যারা লেখাটিকে পছন্দ করেছেন

ব্লগটি যতবার দেখা হয়েছে

আমাদের এই বসুন্ধরা

Locations of Site Visitors